এমবাপ্পে যেন নির্জন এক দ্বীপ
- Details
- by প্রিন্স রাসেল
ফাইনাল থেকে তো একপ্রকার ছিটকেই গিয়েছিল ফ্রান্স। দুই গোলের লিড নিয়ে সহজেই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথে ছিল আর্জেন্টিনা। কিন্তু হারার আগে হারল না ফরাসিরা। কিলিয়ান এমবাপ্পের সৌরভে ৯৩ সেকেন্ডের ব্যবধানে পাল্টে গেল দৃশ্যপট। ৮১ মিনিটে ফরাসি ফরওয়ার্ডের দারুণ এক ভলিতে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা ২-২ গোলে সমতা! ফাইনাল গড়াল অতিরিক্ত ৩০ মিনিটে।
থ্রিলার ম্যাচে আবারও আর্জেন্টিনাকে লিড এনে দেন লিওনেল মেসি। আরও একবার পরাজয়ের চোখ রাঙানি ফ্রান্সের। কিন্তু ম্যাচের অন্তিম প্রহরে ফের নাটকীয় প্রত্যাবর্তন ফরাসিদের। পেনাল্টি থেকে গোল করে এমবাপ্পে পূরণ করেন হ্যাটট্রিক। দুই ঘণ্টার স্নায়ুক্ষয়ী যুদ্ধ অমীমাংসিত থাকল ৩-৩ গোলে! পরে টাইব্রেকারে হারে। সাত ম্যাচে আট গোল করা এমবাপ্পের জন্য গোল্ডেন বুটের ট্রফিটা যেন নিছকই সান্ত্বনার পুরস্কার হয়ে থাকল।
লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়ামে স্নায়ুঠাসা ফাইনালে এমবাপ্পের আর কিইবা করার ছিল। উজাড় করে দিলেন সবটুকু। শতভাগের চেয়েও বেশি। কিন্তু শেষপর্যন্ত বিফলেই গেল পিএসজি সুপারস্টারের দুর্দান্ত হ্যাটট্রিকটা। সবশেষ বিশ্বকাপের শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে কোনো ফুটবলারের তিন গোলের কীর্তি ছিল ১৯৬৬ সালে। ইংল্যান্ডের জিওফ হার্স্ট জার্মানির বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করেছিলেন। ইংলিশ কিংবদন্তির তৃতীয় গোলটাও হয়েছিল অতিরিক্ত সময়ে।
পার্থক্য কেবল একটি জায়গায়। হার্স্টের হ্যাটট্রিকের ওপর দাঁড়িয়ে স্বপ্নের প্রথম শিরোপা জিতেছিল ইংল্যান্ড। কিন্তু তিন গোল করেও ফ্রান্সের রাজত্ব ধরে রাখতে পারলেন না এমবাপ্পে। তার হার্স্ট হয়ে ওঠাও হলো না। টাইব্রেকে দলের প্রথম শটেও নিশানাভেদ করেছিলেন তিনি। কিন্তু গোলরক্ষকদ্বয়ের খেলায় কপাল পুড়েছে এমবাপ্পে ও তার দলের। হুগো লরিস আর্জেন্টিনার একটা শটও ঠেকাতে পারেননি। বিপরীতে মার্টিনেজ ঠেকিয়েছেন কিংসলে কোম্যানের শট। আর আরিলিয়েন চৌমেনি শট মেরেছেন পোস্টের বাইরে। আর্জেন্টিনার চ্যাম্পিয়নশিপ নিশ্চিত হয়ে গেল তাতেই।
ব্যক্তিগতভাবে ফাইনালটা হয়ে উঠেছিল মেসি বনাম এমবাপ্পের। কিন্তু একটা পর্যায়ে লড়াইটা প্রায় হয়ে উঠেছিল পুরো আর্জেন্টিনার সঙ্গে ফরাসি সেনসেশনের। সেই লড়াইয়ে এক অর্থে জিতেছেন তিনিই। জিতেছে ফুটবলও। কিন্তু ভাগ্যের খেলায় হেরে গেলেন এমবাপ্পে। টাইব্রেকার নামক লটারির খেলায় ভাগ্যে শিঁকে ছেড়েনি এমবাপ্পেদের। ফুটবলবিধাতা মুখ তুলে তাকিয়েছেন আরেক দুঃখি রাজপুত্র মেসির দিকে। সাড়ে আট বছর আগে ফাইনাল হারের ক্ষতটা যে তারও রয়ে গিয়েছিল। এবার শাপমোচন হলো মেসির।
টানা দ্বিতীয়বার শিরোপা জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়েও পেলেন না এমবাপ্পে। টাইব্রেকে ৪-২ গোলে যখন ফ্রান্স হেরে গেল ক্যামেরার চোখগুলো খুঁজে নিয়েছিল তাকেই। অমন অতিমানবীয় পারফর্ম করার পরও যখন কেউ পরাজিত সৈনিক হয়ে যান তখন তার দিকে তাকানোও কঠিন হয়ে যায়। গোল্ডেন বুটের ট্রফি হাতে নিয়েও এমবাপ্পে যেন হয়ে উঠেছিল নির্জন এক দ্বীপ। বিচ্ছিন্ন কোনো এক পাহাড়।
রোবরাতের ঐতিহাসিক ফাইনাল শেষে এমবাপ্পে থাকলেন নিজের ছায়া হয়ে, শূন্যতার মতো, দীর্ঘশ্বাসের মতো, নিঃসঙ্গ বৃক্ষের মতো। নির্জন নদীর মতোই বয়ে চলছিল তার হৃদয়ের রক্তক্ষরণ। মৌন পাহাড়ের মতো, আজীবন সাজাপ্রাপ্ত, দণ্ডপ্রাপ্ত কোনো আসামীর সতো। বড় একা হয়ে পড়া এমবাপ্পের পাশে এসে তাকে সমবেদনা জানানেরও মতোও যেন কেউ ছিল না। ফরাসি সেনসেশন যেন দুঃখী এক রাজপুত্র। মেসিদের উৎসবের আলোয় প্রায় অন্ধকারে হারিয়ে গেলেন তিনি। অথচ ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপে তাকে ঘিরেই উৎসব হয়েছিল নীল দুর্গে।
এমবাপ্পের হাতে উঠেছিল তারুণ্যের মশাল। কাতারের ফুটবল মহাযজ্ঞে তিনি ফিরেছেন আরও পরিণত হয়ে। কিন্তু তার ফেরাটা হলো দুঃস্বপ্নের। টুর্নামেন্টজুড়ে আলো ছড়িয়েও ‘ট্রাজিক হিরো’র খেতাব পেলেন ফরাসি কাণ্ডারি। ফেরেঙ্ক পুসকাস, রবার্তো ব্যাজ্জিও, জিকো, সক্রেটিস, ইয়োহান ক্রুইফ, কার্ল হেইঞ্জ রুমিনিগির মতো তাকে নিয়েও বহুকাল চলবে হাহাকার। তবে অন্যরা কখনো সোনালি ট্রফি জিততে পারেননি। যে কীর্তি তরুণ বয়সেই জিতেছেন এমবাপ্পে। আপাতত এটুকু স্বস্তি তার জন্য। যেটা অনেক রথী-মহারথীর ভাগ্যেও জোটে না।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.