বিশ্বকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের সেরা ভক্তের জন্য যদি ফিফা কোনো পুরস্কার রাখত তাহলে বাংলাদেশি ফুটবল ভক্ত জাকির হুসেনের তা পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। কেবল বিশ্বকাপ ফুটবল দেখার জন্য তিনি যে পরিমাণ বাধা বিপত্তি পার হয়ে বাংলাদেশ থেকে কাতার গিয়েছিলেন তা অকল্পণীয় ছিল। এটিকে কেবল  মরক্কোর সেমিফাইনালে ওঠার সাথেই তুলনা করা যায়।

jakir husseinহুইলচেয়ারে বসে আছেন জাকির হুসেন

বিশ্বকাপের জন্য দোহার ফ্লাইটে ওঠার এক সপ্তাহ আগে ৩৭ বছর বয়সী জাকির হুসেন মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় হাসপাতালে ভর্তি হন। তার বাম পা ভেঙে গিয়েছিল এবং হাতেও গভীর ক্ষত ছিল। এর ফলে ফুটবলের একনিষ্ঠ ভক্ত এবং লিভারপুলের সমর্থক হুসেন একদম ভেঙে পড়েন। তিনি কাতার বিশ্বকাপে যাওয়ার সব প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছিলেন। এমনকি টুর্নামেন্টের ফাইনাল ম্যাচের টিকিটও জোগাড় করেছিলেন।

দোহায় টিআরটি ওয়ার্ল্ডকে তিনি জানিয়েছেন, চার বছরেরও বেশি সময় ধরে বিশ্বকাপ দেখার জন্য কাতার আসার পরিকল্পনা করেছিলেন এবং দুর্ঘটনার পরেও তিনি হাল ছেড়ে দিতে প্রস্তুত ছিলেন না। তিনি বলেছেন, 'আল্লাহর পরিকল্পনা অন্যরকম ছিল। তিনি ঠিকই আমাকে খেলা দেখার সুযোগ করে দিয়েছেন। তাইতো এখন আমি কাতারে আসতে পেরেছি।'

ঢাকার একটি বেসরকারি কোম্পানির সেলস এক্সিকিউটিভ জাকির হুসেন, ২০১৮ সাল থেকে কাতার বিশ্বকাপে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। এজন্য তিনি প্রতি মাসে তার বেতনের ২০ শতাংশ আলাদা করে জমিয়ে রাখতেন। তিনি টিকিটসহ বিশ্বকাপের খরচের জন্য আনুমানিক তিন হাজার ডলার সঞ্চয় করেছিলেন।

জাকির হুসেনের ভাই এবং বেশ কয়েকজন বন্ধু কাতারে কাজ করতেন। ফলে সস্তা বাসস্থান খুঁজে পাওয়া তার জন্য কঠিন ছিল না। তিনি এক মাসের জন্য ৮০০ ডলার অগ্রিম বাড়ি ভাড়া দিয়েছিলেন। বাংলাদেশ থেকে কাতারের সরাসরি ফ্লাইটের বিমান ভাড়া ৩৫০ থেকে ৪০০ ডলারের মধ্যে ছিল। তিনি বিমানের টিকিটও কিনে রেখেছিলেন। এমনকি মাসব্যাপী ফুটবল উৎসবের জন্য তার কাছে ১৯টি ম্যাচের টিকিটও ছিল। কিন্তু তার সুপরিকল্পিত পরিকল্পনাকে ব্যাহত করে একটি দুর্ঘটনা। তবে ভাঙা পা নিয়েও তিনি কাতারে যাওয়ার ব্যাপারে অনড় ছিলেন।

তিনি বলেছেন, ‘আমার স্ত্রী খুশি ছিল না। কিন্তু আমার ডাক্তার খুব ভালো মানুষ। তিনি আমাকে অনুপ্রাণিত করেছেন। আমাকে বলেন, আপনি বিশ্বকাপে যাচ্ছেন। আমি ভ্রমণের জন্য উপযুক্ত জানিয়ে তিনি একটি সার্টিফিকেটও দিলেন। তিনি আমাকে উৎসাহিত করেছিলেন কারণ বিশ্বকাপের অভিজ্ঞতা নেওয়ার সুযোগতো জীবনে সবসময় আসে না।'

জাকির হুসেন জানতেন হুইল চেয়ারে করে বিশ্বকাপের জন্য দোহা ভ্রমণের বিষয়ে তার স্ত্রী এবং পরিবারকে রাজি করানো কঠিন হবে। তাই তিনি তার ডাক্তারকে তাদের সাথে কথা বলতে বলেছিলেন। দীর্ঘ তর্ক-বিতর্কের পর পরিবার রাজি হয়। অবশেষে যেদিন তিনি কাতারের রাজধানীতে আসতে পারলেন, সেদিন তার মনে হয়েছিল এত কষ্টের পরেও স্বপ্ন যেন পূরণ হতে চলেছে।

তিনি বলেন, 'আমার মোট ১১টি দলের জার্সি আছে। বিশ্বকাপের আগে আমার এক বন্ধু থাইল্যান্ডে বেড়াতে গিয়েছিল। আমি তাকে এই জার্সিগুলো কেনার জন্য কিছু টাকা দিয়েছিলাম। প্রতিটি ম্যাচেই আমি ভিন্ন ভিন্ন দলকে সমর্থন করেছি। গতকাল আমি আর্জেন্টিনাকে সমর্থন করেছি।'

জাকির হুসেন হুইল চেয়ারে করে বিশ্বকাপের ম্যাচগুলো দেখতে স্টেডিয়ামে গিয়েছিলেন। এ ক্ষেত্রে কাতারে থাকা তার বন্ধুবান্ধবরা তাকে প্রচুর সাহায্য করেছেন। তিনি বলেন, 'আমার বন্ধুরা খুব ভাল। তারা আমাকে সব জায়গায় নিয়ে যায় এবং সবসময় আমার সাথে থাকে। তারা পালা করে আমার হুইলচেয়ার ঠেলে নিয়ে যায়। আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ।'

স্টেডিয়ামে স্বেচ্ছাসেবকরাও তাকে সাহায্য করেছেন। তার টিকিট পরিবর্তন করে স্বাভাবিক থেকে প্রতিবন্ধীদের জন্য নির্ধারিত আসনে দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, দুর্ঘটনা বন্ধ করা তার নিয়ন্ত্রণে ছিল না, তবে টুর্নামেন্ট উপভোগ করা তার ক্ষমতার মধ্যে ছিল। 

জাকির হুসেনের মনে হয়েছে, ভাঙা পা নিয়ে তিনি বিশ্বকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট দেখার জন্য কাতার আসতে পারলে এখন যে কোনো কাজই করতে পারবেন। বর্তমানে এই আত্মবিশ্বাসটুকু তার মধ্যে তৈরি হয়েছে। হুসেনের বন্ধু আসিফ বলেন, 'ফুটবলই জীবন। আমরা আজ এখানে বিশ্বকাপের সাক্ষী হতে এসেছি। এর চেয়ে বেশী আর কী চাওয়ার থাকতে পারে।' ফুটবল ভক্ত জাকির হুসেনও তার সাথে একমত।  

সূত্র: টিআরটি ওয়ার্ল্ড

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.