মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধেই ফ্রান্সকে হারিয়ে দেন মার্তিনেজ!

কাতার বিশ্বকাপের ফাইনালে গত রোববার শ্বাসরুদ্ধকর খেলায় শিরোপা জিতে নেয় আর্জেন্টিনা। নির্ধারিত সময়ে ২-২ গোলে সমতা, অতিরিক্ত টাইমেও সমতার পর খেলা গড়িয়েছিল টাইব্রেকারে। চরম পরীক্ষায় পড়েছিলেন দুই গোলকিপার। মনস্তাত্ত্বিক সেই খেলায় জয়লাভ করেছেন আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্তিনেজ।

টাইব্রেকারে শট ঠেকানোর পর উল্লাস

কাতারের লুসাইল স্টেডিয়ামে টাইব্রেকারে ফ্রান্সের দুটি গোল ঠেকিয়ে দেন তিনি। অপরদিকে তার সতীর্থরা ঠিকই ফ্রান্সের জালে বল জড়িয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে ৩৬ বছর পর বিশ্বকাপ জয়ের উন্মাদনায় মাতে মেসির দল।

এদিকে নরওয়ের স্কুল অফ স্পোর্টস সায়েন্সেসের অধ্যাপক ও মনস্তত্ত্ববিদ গেইর জরডেট হিসাব কষে দেখিয়েছেন, গত ১৮ ডিসেম্বর দুই প্রতিপক্ষের ফুটবল নিয়ে শুধু লড়াই ছিল না। ছিল স্নায়ুর লড়াইও, মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধও। প্রতিপক্ষের মনোবলকে নানাভাবে গুড়িয়ে দিয়ে মার্তিনেজ দলকে জয়টা এনে দেন।

মার্তিনেজের মনস্তাত্ত্বিক লড়াই আর্জেন্টিনাকে বিজয় এনে দিয়েছে

জরডেটের দাবি, পেনাল্টি শুটআউটের শুরু থেকেই ফ্রান্সকে স্নায়ুর চাপে রেখেছিলেন মার্তিনেজ। পেনাল্টি বক্সে ঢুকেই এমন ভাব করছিলেন, যেন ওই বক্সের সম্রাট কেবল তিনিই। ফ্রান্স গোলরক্ষক লরিস শট নিতে আসার আগেই মার্তিনেজ তার জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। যেন নিজের মাঠে লরিসকে স্বাগত জানাচ্ছেন তিনি। এছাড়া লরিস এবং পরে এমবাপ্পের সাথে করমর্দন করেন তিনি। আপাতদৃষ্টিতে এটা সৌজন্য মনে হলেও মার্তিনেজ এটাকে মনস্তাত্ত্বিক খেলা হিসেবেই ব্যবহার করছে।

আবার ফ্রান্সের ফুটবলাররা যখন শট নিতে আসছিলেন, তখন বারবার মার্তিনেজ রেফারিকে জিজ্ঞাসা করতে থাকেন, ঠিক জায়গায় দাগ দেওয়া হয়েছে কি না, ঠিক জায়গায় বল বসানো হয়েছে কি না। জবাব যেমনই হোক না কেন এটি ছিল কিন্তু প্রতিপক্ষের মনোসংযোগ নাড়িয়ে দেওয়ার কৌশল। কোম্যানকে তিনি এভাবেই গোল বঞ্চিত করেন।

আবার পেনাল্টি বাঁচিয়ে গোলরক্ষকরা যেভাবে উদযাপন করেন, মার্তিনেসের উল্লাসটি ছিল তার চেয়ে অনেকটা ব্যতিক্রম। যেভাবে তিনি উদযাপন করছিলেন, তা দলের সতীর্থদের মনোবল বাড়িয়ে দিচ্ছিল এবং প্রতিপক্ষের মনোবলে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছিল।

জরডেটের দাবি, আরুলিন চুয়ামেনি যখন শট নিতে আসেন, তখন মার্তিনেজ পেনাল্টি পয়েন্ট থেকে বলটা তুলে নিয়ে সমর্থকদের দিকে তাকান। পরে বলটা দূরে ছুড়ে দেন। চুয়ামেনি বলটি নিয়ে এসে পেনাল্টি বক্সে বসান। তারপর শট মারেন। কিন্তু গোল করতে ব্যর্থ হন। অন্যদিকে আর্জেন্টিনীয় ফুটবলার লেয়ান্দ্রো পারেদেস যখন পেনাল্টি শট মারতে আসেন, মার্তিনেজ নিজেই গিয়ে তার হাতে বলটা তুলে দেন। কারণ মার্তিনেস বুঝেছিলেন, চুয়ামেনির সঙ্গে তিনি যা করেছেন, পারেদেসের সঙ্গেও ফ্রান্স গোলরক্ষক লরিস একই কাজ করতে পারেন। তাই পারাদেসের হাতে বলটি তুলে দেন মার্তিনেজ।

আবার যখন ফ্রান্সের কোলো মুয়ানি পেনাল্টি নিতে আসেন, তখন তার মনোসংযোগ নাড়িয়ে দিতে নিজের চোখের দিকে দু’টি আঙুল দেখিয়ে মুয়ানিকে যেন বলেন, আমি তোমাকে নজরে রেখেছি। এ কাণ্ডের জন্য অবশ্য তিনি হলুদ কার্ড দেখেন। কিন্তু তার কাজের কাজ হয়ে গিয়েছিল। জরডেটের দাবি, মনস্তাত্ত্বিক লড়াইয়ে মার্টিনেজের এই ভূমিকা অনেকটাই সুবিধা করে দিয়েছিল আর্জেন্টিনাকে। শেষ পর্যন্ত ফল নির্ধারিত হয়েছিল মেসিদের পক্ষেই।