লাভরভ: রাশিয়াকে ধ্বংস করতেই ইউক্রেনের জয় চায় যুক্তরাষ্ট্র-ন্যাটো

রাশিয়াকে ধ্বংস করতে ইউক্রেনের বিজয় চাইছে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো। রাশিয়ার রাষ্ট্র-নিয়ন্ত্রিত তাস নিউজ এজেন্সিকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে গতকাল মঙ্গলবার এ মন্তব্য করেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ। খবর আনাদোলু।

সের্গেই লাভরভ

সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, পশ্চিমা দেশগুলো এবং তাদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ইউক্রেনীয় সংকটের বৈশ্বিক রূপ দিয়েছে। আর এটি কোনো গোপন বিষয় নয়, যুক্তরাষ্ট্র ও তার ন্যাটো মিত্রদের কৌশলগত লক্ষ্য হলো, তারা আমাদের দেশকে উল্লেখযোগ্যভাবে দুর্বল বা ধ্বংস করতে চায়। এরই একটি প্রক্রিয়া হিসেবে তারা রাশিয়ার বিরুদ্ধে এ লড়াইয়ে জয়ী হতে চায়।

লাভরভ এ সময় বলেন, চলমান লড়াইয়ে সবচেয়ে বেশি সুবিধাভোগী হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। তারা এ থেকে অর্থনৈতিক ও সামরিকভাবে লাভবান হচ্ছে। একই সাথে তারা ইউরোপকে আরও পরাধীন করার চেষ্টা চালাচ্ছে। এর মাধ্যমে তারা দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা রাশিয়ান-ইউরোপীয় সম্পর্ক ভাঙার ভূ-রাজনৈতিক লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে চাইছে।

ইউক্রেন যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রও

যুক্তরাষ্ট্র সংঘাত দীর্ঘায়িত এবং আরও সহিংস করার জন্য সম্ভব সবকিছু করছে দাবি করে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধে ব্যবহার ও পরীক্ষা করার জন্য ইউক্রেনের বাহিনীকে এমন কিছু অত্যাধুনিক অস্ত্র দেওয়া হচ্ছে, যার কিছু কিছু এখন পর্যন্ত পশ্চিমা সেনাবাহিনীই ব্যবহার করেনি। যুক্তরাষ্ট্র রুশ-বিরোধী জোটের অন্য সদস্যদের কাছ থেকেও ইউক্রেনকে একই রকম সহায়তা দেওয়ার দাবি করছে।

লাভরভ মার্কিন রাজনীতিবিদদের অভিযুক্ত করে বলেছেন, এটি একটি খাঁটি ভণ্ডামি। পশ্চিমা বেসরকারি সামরিক কোম্পানি এবং সামরিক প্রশিক্ষকরা ইউক্রেনীয়দের সাথে এমনভাবে জড়িয়ে গেছে, লড়াইয়ে তারা এখন একটি পক্ষই হয়ে গেছে। তারা ইউক্রেনীয় কমান্ডারদের কাছে স্যাটেলাইট এবং অন্যান্য গোয়েন্দা তথ্য হস্তান্তর করছে, পাশাপাশি যুদ্ধ পরিচালনার পরিকল্পনা ও পরিচালনাতেও ভূমিকা পালন করছে।

যুক্তরাষ্ট্রই ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করতে পারে উল্লেখ করে এক প্রশ্নের জবাবে লাভরভ বলেন, দ্বন্দ্ব শেষ করার মূল চাবিকাঠি কিয়েভ ও ওয়াশিংটনের হাতে। তারা যে কোনো সময় মস্কোর দ্বারা চিহ্নিত হুমকিগুলো সমাধান করে এ সংঘাতের অবসান ঘটাতে পারে। নইলে রাশিয়া নিজেই এগুলো নির্মূল করবে।

এ সময় ইউক্রেনে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার নিয়ে লাভরভ বলেন, আমরা বারবার বলেছি, পারমাণবিক যুদ্ধে কোনো পক্ষ বিজয়ী হতে পারে না এবং এটি কখনোই হওয়া উচিত নয়।

সাক্ষাৎকারে লাভরভ পশ্চিমাদের সর্বোচ্চ সংযম অনুশীলন এবং পারমাণবিক অস্ত্রের ক্ষেত্রে অত্যন্ত বুদ্ধিমান হওয়ার আহ্বান জানান। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া সম্পর্কের বিষয়টিকে ‘দুঃখজনক’ আখ্যা দিয়ে লাভরভ বলেন, সম্পর্কের উন্নতির জন্য যে কোনো পদক্ষেপ অবশ্যই পারস্পরিকতার নীতির ভিত্তিতে হওয়া উচিত।

তিনি বলেন, রাশিয়া কখনোই গঠনমূলক সংলাপ থেকে দূরে সরে যায়নি। তবে উপযুক্ত পরিস্থিতি তৈরি হলেই এটি ঘটতে পারে। তবে এই মুহূর্তে ওয়াশিংটনের সাথে সম্ভাব্য কূটনৈতিক যোগাযোগের বিষয়ে কিছু বলা কঠিন।