শেষের পথে রাম মন্দির, ক্ষতিগ্রস্ত অযোধ্যার ব্যবসায়ীরা
- Details
- by আন্তর্জাতিক ডেস্ক
রাম মন্দিরের কাজ শেষের পথে। মন্দিরকে ঘিরে নির্মিত হচ্ছে চওড়া সড়ক, ব্যয়বহুল হোটেল। চারপাশের এ নির্মাণযজ্ঞের মাশুল গুনছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। সড়ক ও অবকাঠামো নির্মাণের প্রয়োজনে এদের কারও দোকান উচ্ছেদ হয়েছে, কেউ উচ্ছেদের আশঙ্কায় দিনাতিপাত করছেন। খবর দ্য ওয়্যার।
রাম মন্দির কমপ্লেক্সের একটি অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি
ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমতি শাহ গত ৫ জানুয়ারি ঘোষণা দিয়েছেন, আগামী বছরের প্রথম দিন অযোধ্যায় রাম মন্দির উদ্বোধন হবে। তার এ অঘোষণায় অযোধ্যার ব্যবসায়ীরা, বিশেষত রাম মন্দিরের আশেপাশে যাদের দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছিল, তারা এবং স্থানীয় অধিবাসীরা বুঝতে পারছেন যে নিজেদের জীবিকা ও সম্পদ সুরক্ষায় তাদের হাতে মাত্র এক বছর সময় অবশিষ্ট আছে।
১৮ হাজার কোটি রুপি ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে রাম মন্দির। তবে এ মন্দিরের অদেখা ব্যয়ও কম নয়। এরইমধ্যে রাম মন্দির কমপ্লেক্সের চারপাশের সড়ক প্রশস্তকরণের প্রয়োজনে উচ্ছেদ হওয়া ব্যবসায়ীরা নিজেদের ভবিষ্যত নিয়ে বিরাট অনিশ্চয়তায় ভূগছেন।
মন্দির কমপ্লেক্সের চারপাশে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক সড়ক চওড়া করা হচ্ছে। শাহাদাতগঞ্জ থেকে নয়াঘাট পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ যে সড়কের নাম এখন রাম পথ করা হয়েছে, সেটার দুপাশের ব্যবসায়ীদের দোকানপাট উচ্ছেদ অথবা ছোট হয়েছে। একইভাবে সুগীব কিল্লা মারগ থেকে মন্দির পর্যন্ত ৮০০ মিটার সড়ক এবং শ্রীণগর হাট থেকে মন্দির পর্যন্ত ৮০০ মিটার ভক্তিপথও প্রশস্ত করা হচ্ছে। এতে করে রুটি-রুজি হারাচ্ছেন এসব সড়কের দুপাশের দোকান মালিকরা।
ভাগ্যের পরিহাস হলো, উচ্ছেদের খড়গে পড়া ব্যবসায়ীদের অনেকে বিজেপির কট্টর সমর্থক। রাম মন্দির নির্মাণের ঘোষণা দিয়ে আশির দশক থেকে বিজেপির যে রাজনীতি, তা নানাভাবে সহায়তা করেছেন এরা।
অযোধ্যায় পূজা-পার্বণের সরঞ্জাম বিক্রি করা এক ব্যবসায়ী বলেন, অমিত শাহর জন্য আগামী বছরের প্রথম দিনে মন্দির উদ্বোধনের কথা বলা সহজ। তবে রাম নগরীর ব্যবসায়ীদের জীবন-জীবিকার কি হবে?
উচ্ছেদ অভিযানের কবলে পড়ে ভিটেমাটি ও দোকান হারানো ব্যবসায়ী ব্রজ কিশোর পান্ডে বলেন, আমরা তিন পুরুষ ধরে এখানে বসবাস করছি। মোদি জী ও যোগী জীকে সবসময় সমর্থন করেছি। কিন্তু কখনও ভাবিনি একদিন বুলডোজার আমার ঘরের দিকে আসবে। দুই মাস হলো আমার দোকান উচ্ছেদ হয়েছে।
দোকান ও ভিটেমাটি হারিয়ে দিশেহারা ব্যবসায়ীদের অনেকে আবার ঋণের বোঝা নিয়ে ঘুরছেন। ব্রজ কিশোর নিজেও চার বছর আগে প্রধানমন্ত্রী মুদ্রা যোজনা থেকে অর্থ ঋণ নিয়েছেন। ওই টাকা তিনি দোকানে লগ্নি করেন। এখন দোকান গেছে, ব্যাংকে দেনা পরিশোধের পথও বন্ধ।
অযোধ্যা আসনে সমাজবাদী পার্টি থেকে নির্বাচিত সাবেক বিধায়ক তেজ নারায়ণ পান্ডে অভিযোগ করেন, সড়ক প্রশস্তকরণ ও অন্যান্য কাজে উচ্ছেদের পেছনে বিজেপির নীলনকশা রয়েছে। তারা স্থানীয়দের হটিয়ে অযোধ্যায় গুজরাটি ব্যবসায়ীদের দখল প্রতিষ্ঠা করবে।
তেজ পান্ডে বলেন, এটা ওদের মাস্টারপ্ল্যান। এখানে বহু গুজরাটি কাজ করছে ও সরকারি ঠিকাদারি পাচ্ছে। আমি কারও নাম বলব না। যে কোনো সরকারের কাজ হলো মানুষ যাতে নিরাপদ বোধ করে, সে ব্যবস্থা নেওয়া। এখানে সরকারের কথা শুনলেই মানুষ আতঙ্কে থাকে।
২০ ফুট বাই ১০ ফুট একটি দোকানে ধর্মীয় বইপুস্তক বিক্রি করতেন লক্ষ্মীকান্ত তিওয়ারি। রাস্তা চওড়া করতে গিয়ে তার দোকান হয়েছে ১০ ফুট বাই ১০ ফুট। ওই দোকানে এখন তামাক বিক্রি করেন তিনি। আগে দিনে এক-দেড় হাজার রুপি আয় হতো। এখন কোনো কোনোদিন বউনি হয় না বলে তিনি জানান।
ব্যবসায়ীদের আতঙ্কের আরেক কারণ হলো অস্বাভাবিক হারে ভাড়া বৃদ্ধি। রাম মন্দিরের হিড়িক উঠতেই অযোধ্যায় ভাড়া বৃদ্ধি শুরু হয়। লক্ষ্মীকান্ত তিওয়ারি বলেন, আমার পরিবার ৭০ বছর ধরে এই সম্পত্তির ভাড়া দিচ্ছে। আমার দাদা প্রতি মাসে ২০ রুপি ভাড়া দিতেন। এখন ছোট একটি অংশের জন্য শহরের অন্যতম বড় জমিদার রাজা বিমলেন্দ্র মোহন প্রতাপ মিশ্রে প্রতি মাসে ২ হাজার রুপি ভাড়া আদায় করছেন। আগে ৫ বছর পরপর ভাড়া চুক্তি হতো। এখন জমিদার চুক্তির মেয়াদ করেছেন ১১ মাস। অর্থাৎ ১১ মাস পরপর ভাড়া বৃদ্ধি, রাজি না হলে উচ্ছেদ।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.