কখনও এত বিরোধিতার মুখে পড়েনি রাশিয়া!
- Details
- by আন্তর্জাতিক ডেস্ক
রাশিয়া কখনও এত বিরোধিতার মুখে পড়েনি বলে মনে করছেন দেশটির সশস্ত্র বাহিনী প্রধান জেনারেল ভ্যালেরি ভাসিলিয়েভিচ গেরাসিমভ। রুশ সাময়িকী আরগুমেন্ট অ্যান্ড ফ্যাক্টসের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে তিনি রাশিয়ার সেনা কমান্ডের ইতিহাস, ইউক্রেন ও ন্যাটো বিষয়ক পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন। বাইরের দুনিয়া তো বটেই, রুশ জেনারেলদের চিন্তাভাবনা জানার সুযোগ রাশিয়ার মানুষেরও হয় না। পাঠকের আগ্রহের কথা ভেবে সাক্ষাৎকারটির নির্বাচিত অংশ ভাষান্তর করা হলো।
ইউক্রেন নিয়ে আলোচনায় (বাঁ থেকে) রুশ কমান্ডার ভ্যালেরি গেরাসিমভ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু ও ডেপুটি কমান্ডার সের্গেই সুরভিকিন
রুশ সশস্ত্র বাহিনী কমান্ড বা জেনারেল স্টাফের ২৬০ বছর পূর্তি হচ্ছে। রাশিয়ার সামরিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে এর ভূমিকা কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?
ভ্যালেরি গেরাসিমভ: সশস্ত্র বাহিনী জেনারেল স্টাফ কয়েক শতক ধরে দেশের সামরিক নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ১৭৬৩ সালে সম্রাজ্ঞী দ্বিতীয় ক্যাথেরিন এ কমান্ড প্রতিষ্ঠা করেন। কাউন্ট জাখার চেরনিশভকে ভাইস প্রেসিডেন্ট করে গঠিত হয় প্রথম মিলিটারি কলেজিয়াম। ১৯১৭ সালের বিপ্লবের আগে পর্যন্ত কলেজিয়ামের গঠন বহুবার পাল্টেছে। তবে এর কাজ সবসময় একই ছিল- সশস্ত্র বাহিনী সংক্রান্ত পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাহিনীকে কাজে লাগানো।
১৯১৭ সালের বিপ্লবের পর কি হয়েছে?
ভ্যালেরি গেরাসিমভ: সোভিয়েত প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পর শ্রমিক ও কৃষক কমিটি জেনারেল স্টাফ বিলুপ্ত করে বিভিন্ন কমান্ডের কাছে এর দায়িত্ব বন্টন করে দেয়। তবে অচিরেই এটা স্পষ্ট হয় যে, সশস্ত্র বাহিনীকে দক্ষ করতে একীভূত কমান্ডের বিকল্প নেই। এজন্য ১৯২১ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি শ্রমিক-কৃষক রেড আর্মির সদর দপ্তর গঠন করা হয়। দেশের প্রতিরক্ষায় বাহিনীর দায়িত্ব ও কাজ বাড়তে থাকায় ১৯৩৫ সালে রেড আর্মি জেনারেল স্টাফ গঠন করে সশস্ত্র বাহিনীর সব ইউনিট ও কমান্ডের দায়িত্ব ও নিয়ন্ত্রণ এর অধীনে ন্যস্ত করা হয়।
১৯৪১-১৯৪৫ সময়কালে গ্রেট প্যাট্রিয়টিক ওয়ারে (দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ) জেনারেল স্টাফ নিজের দক্ষতা ও ক্ষিপ্রতার সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি হয়। যুদ্ধে রাশিয়ার বিজয় জেনারেল স্টাফের সাংগঠনিক সক্ষমতা, পরিপক্কতা, নেতৃত্বের মেধার পাশাপাশি বাহিনী ব্যবহারে ভারসাম্যপূর্ণ ও যুক্তিসঙ্গত প্রস্তাবনা প্রণয়নে অফিসারদের অসাধারণ নৈপুণ্য প্রমাণ করে।
যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে বিজ্ঞান-প্রযুক্তির অভাবনীয় উন্নয়ন, পারমাণবিক অস্ত্র উদ্ভাবন ও সশস্ত্র যুদ্ধের নিত্যনতুন আবির্ভাব সেনাবাহিনীর কমান্ড ও কন্ট্রোলে ক্রমাগত বিবর্তন ও উৎকর্ষ দাবি করে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিভিন্ন বাহিনীর পরিবর্তিত মেরুকরণ ও ন্যাটোর আবির্ভাবকে বিবেচনায় রেখে জেনারেল স্টাফ আমাদের সশস্ত্র বাহিনীগুলোর যুদ্ধ-সক্ষমতা ও প্রস্তুতির মাত্রা বৃদ্ধিতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙার আগ পর্যন্ত ন্যাটোর বিপরীতে আমাদের সিস্টেমের ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান জেনারেল স্টাফের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের কার্যকারিতা করে।
সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙার পর জেনারেল স্টাফের কাজের পরিধি কতটুকু পাল্টেছে?
ভ্যালেরি গেরাসিমভ: ১৯৯২ সালের মে মাস থেকে জেনারেল স্টাফের ইতিহাসে নতুন পর্বের শুরু। রুশ ফেডারেশনের সামরিক দর্শন প্রণয়ন, সশস্ত্র বাহিনীর ধারণাপত্র চূড়ান্তকরণ ও বাস্তবায়নের দায়িত্ব অর্পিত হয় জেনারেল স্টাফের ওপর। উত্তর ককেসাসে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান, রাশিয়া সংলগ্ন ভূখণ্ডে সামরিক সংঘাত, ক্রিমিয়া পুনরুদ্ধার, সিরিয়ায় বিশেষ অভিযান, নগর্নো-কারাবাখের বিভিন্ন ঘটনা ও কাজাখস্তানে সিএসটিওর অভিযানে নতুন পরিস্থিতির চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় জেনারেল স্টাফের সামর্থ্য প্রমাণ হয়।
রুশ ফেডারেশনের প্রতিরক্ষা পরিকল্পনা প্রণয়ন, সশস্ত্র বাহিনীগুলো ব্যবহার ও নিয়ন্ত্রণ, গোয়েন্দা কার্যক্রম পরিচালনা, অভিযান ও প্রশিক্ষণ, যুদ্ধকালীন সময়ে বাহিনীর গঠন পরিবর্তন ও স্থানান্তর- এমন আরও বহু কাজ জেনারেল স্টাফের দায়িত্বের মধ্যে রয়েছে।
ইউক্রেন অভিযানের প্রেক্ষিতে জেনারেল স্টাফ সম্পর্কে কিছু বলবেন?
ভ্যালেরি গেরাসিমভ: বর্তমানে জেনারেল স্টাফের নেতৃত্বে ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযান চলছে। আধুনিক রাশিয়া কখনো এত বেশি মাত্রা ও তীব্রতায় বিরোধিতার মুখোমুখি হয়নি। পশ্চিমা বিশ্বের প্রায় পুরোটাই আমাদের দেশ ও সশস্ত্র বাহিনীর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে। পরিস্থিতি স্থিতিশীল করতে, নতুন ভূখণ্ড সুরক্ষা করতে ও আক্রমণাত্মক অভিযান অব্যাহত রাখতে বেসামরিক নাগরিকদের মধ্য থেকে আংশিক মোবিলাইজেশন করতে হয়েছে। গ্রেট প্যাট্রিয়টিক ওয়ারের পর এমন ঘটনা ঘটেনি।
আধুনিক অর্থনৈতিক বাস্তবতায় মোবিলাইজেশনের পূর্ণাঙ্গ ব্যবস্থা আমাদের বাহিনীতে ছিল না। এজন্য আমাকে চলতে চলতে ব্যবস্থাটি ঠিক করে নিতে হয়েছে। জেনারেল স্টাফ অফিসারদের সুসমন্বিত ও পেশাদারি তৎপরতা এবং রুশ ফেডারেশনের অন্তর্গত প্রজাতন্ত্রগুলোর কর্তৃপক্ষের সহযোগিতার সুবাদে ৩ লাখ নাগরিককে আমরা রিজার্ভ বাহিনীতে ডেকেছি।
‘ব্রিলিয়ান্ট স্টাফ অফিসার’ বলে একটা কথা আছে। আপনি কাদের ‘ব্রিলিয়ান্ট স্টাফ অফিসার’ মনে করেন?
ভ্যালেরি গেরাসিমভ: বাস্তবতা হলো, ব্রিলিয়ান্ট স্টাফ অফিসার শব্দটির দৈনন্দিন ব্যবহার জেনারেলদের মধ্যে নেই বললেই চলে। এটা ইতিহাস ও সাহিত্যের পরিভাষা। আধুনিককালে এমন অফিসারদের ‘পেশাদার’ অথবা ‘পিস স্পেশালিস্ট’ (piece specialists) বলা হয়। এ কালের সামরিক বাহিনী কমান্ডে চাহিদার যে তীব্রতা, তাতে যত অর্জনই থাকুক, হাল ছেড়ে দেওয়ার সুযোগ নেই। সবাইকে প্রতিনিয়িত গভীর মূল্যায়নের মধ্য দিয়ে যেতে হয় এবং নিজের জ্ঞান ও দক্ষতা উন্নয়নে নিরন্তর প্রয়াস চালাতে হয়।
জেনারেল স্টাফে অন্তর্ভুক্তির জন্য সশস্ত্র বাহিনীর সামরিক শাখা ও ইউনিটগুলোর সবচেয়ে প্রশিক্ষিত কমান্ডার এবং মিলিটারি ডিস্ট্রিক্টগুলোর সদর দপ্তরের সেরা প্রতিনিধিদের বেছে নেওয়া হয়। বিশ্লেষণী মনোভাব, প্রতিনিয়ত নিজের দক্ষতাকে ছাড়িয়ে যাবার আন্তরিক প্রয়াস, আভিযানিক ও কৌশলগত চিন্তার পরিপক্কতা, সামরিক-রাজনৈতিক পরিস্থিতির সার্বিক মূল্যায়ন ও উপসংহারে আসার সক্ষমতা, দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিতে রাজনৈতিক-সামরিক নেতৃত্বের জন্য যুক্তিগ্রাহ্য প্রস্তাবনা প্রণয়নের সামর্থ্য যেসব জেনারেলের রয়েছে, তাদেরকেই জেনারেল স্টাফের জন্য বিবেচনা করা হয়।
জেনারেল স্টাফের অন্যতম কাজ হলো সশস্ত্র বাহিনীগুলোর গঠন ও উন্নয়ন। কিছুদিন আগে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কলেজিয়ামে এ বিষয়ে কোনো নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে কি?
ভ্যালেরি গেরাসিমভ: সশস্ত্র বাহিনীগুলোর গঠন ও উন্নয়ন পরিকল্পনা হলো একটি সমন্বিত দলিল। পরিস্থিতি পরিবর্তন হলে অথবা নতুন হুমকি দেখা দিলে এ পরিকল্পনা ঢেলে সাজানো হতে পারে। বর্তমানে উপস্থিত হুমকির মধ্যে রয়েছে সুইডেন ও ফিনল্যান্ডে ন্যাটোর সম্প্রসারণের আকাঙ্ক্ষা এবং আমাদের দেশের বিরুদ্ধে হাইব্রিড যুদ্ধ চালাতে ইউক্রেনকে ব্যবহার। এসব হুমকি নিরসনে দেশের শীর্ষ নেতৃত্ব সশস্ত্র বাহিনীগুলোর গঠন ও উন্নয়ন পরিকল্পনায় কিছু রদবদল এনেছেন।
আমাদের পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে- মস্কো ও লেনিনগ্রাদ মিলিটারি ডিস্ট্রিক্ট গঠন, খেরসন ও জাপরোঝঝিয়ায় তিনটি মটরাইজড রাইফেল ডিভিশন গঠন ও কারেলিয়ায় (ফিনল্যান্ড সীমান্তে) নতুন আর্মি কোর গঠন। দেশের সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতা রক্ষা এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পরিস্থিতি অব্যাহত রাখাই এর উদ্দেশ্য।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.