পরিবারের দাবি মিটিয়ে গতির ঝড় তুলছেন রানা

গত ২৪ জানুয়ারির কথা। বিপিএলে দিনের দ্বিতীয় ম্যাচে মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে খুলনা টাইগার্সের বিপক্ষে আগে ব্যাট করছিল ঢাকা ডমিনেটর্স। হঠাৎ বোলিং মাপা মেশিনে চোখ পড়তেই অবাক সবাই। লম্বা, লিকলিকে গড়নের একটা ছেলে অনবরত ১৪৭-১৪৮ কিলোমিটারে গতিতে বল করে যাচ্ছেন।

নাহিদ রানা

প্রথমে সবার ধারণা ছিল হয়তো বিদেশি কোটায় খেলতে এসেছেন সেই পেসার। কিন্তু না। বোদ্ধাদের আসল তথ্য জানতেও বেশি সময় লাগেনি। সেই বোলার কোনো বিদেশি নয়। বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জের ছেলে নাহিদ রানা। যোগ্যতা দেখিয়ে চলমান বিপিএলে খুলনা টাইগার্সে খেলার সুযোগ পেয়েছেন ২০ বছর বয়সী রানা।

ঢাকার বিপক্ষে সেই ম্যাচ দিয়েই বিপিএলে অভিষেক হয় রানার। এতো বড় টুর্নামেন্টে এর আগে কখনই খেলেননি এই প্রতিভাধর পেসার। তবে তার শরীরী ভাষা দেখে বোঝার উপায় ছিল না বিপিএলে অভিষেক ম্যাচ খেলছেন। যদিও নিজের প্রথম বলটিই নো ছিল তার। ঘুরে দাঁড়িয়ে দ্বিতীয় বলেই সরাসরি অ্যালেক্স ব্লেককে বোল্ড করেন। ফ্রি হিট হওয়ায় বেঁচে যান ব্লেক।

এরপর আর পেছনে না তাকিয়ে ঢাকার ব্যাটারদের ওপর গতির ঝড় তুলেন রানা। ৪ ওভার ২০ রান দিয়ে তুলে নেন আমির হামজার উইকেট। তার এমন প্রতিভা দেখে মুগ্ধ ক্রিকেট প্রেমীরা। সে ম্যাচের পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রানার প্রশংসায় মাতেন সবাই।

রানার উত্থান হয় সবশেষ জাতীয় ক্রিকেট লিগ, এনসিএলে। যেখানে ছয় ম্যাচে ৩২ উইকেট শিকার করেন তরুণ পেসার। যদিও তার পথচলার গল্পটা মোটেও মসৃণ নয়। ছোটবেলা থেকেই পেসার হওয়ার নেশায় মত্ত ছিলেন রানা। তবে পরিবার থেকে জানিয়ে দেওয়া হয় মাধ্যমিক পাশ না করলে তাকে ক্রিকেট খেলতে দেওয়া হবে না। তাই ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা থাকায় মাধ্যমিক পাস করে রাজশাহীর একটি অ্যাকাডেমিতে ভর্তি হন। সেখান থেকেই শুরু স্বপ্ন ছোঁয়ার মিশন।

গণমাধ্যমের সাথে আলাপচারিতায় রানা বলেন, ‘আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে। ছোটবেলা থেকে সবার মতো আমাকেও পড়ালেখা করতে হত। তবে সব সময় খেলাধুলা নিয়ে থাকতাম। এরপর পরিবার দেখল আমি সব সময় খেলাধুলা নিয়েই ব্যস্ত থাকি। তখন পরিবার থেকে জানিয়ে দেওয়া হলো মাধ্যমিক পাস করলে আমাকে অনুশীলন করতে দেওয়া হবে। পরিবারের কথামতো মাধ্যমিক পাস করলাম। তারপর অনুশীলনের সুযোগ পেয়েছি।’

পরবর্তী লক্ষ্য নিয়ে এখনই ভাবতে চান না রানা, ‘এখন তো বিপিএল খেলছি। তাই এটা নিয়েই থাকতে চাচ্ছি, এটা নিয়েই ভাবছি। এখানে ম্যাচ বাই ম্যাচ ভালো বোলিং করতে চাই।’