শিবপুর উপজেলা চেয়ারম্যানকে গুলি করার ‘দুই কারণ’

নরসিংদীর শিবপুর উপজেলা চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ খানকে গুলি করার পেছনে দুটি বিষয়কে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। একটি দলীয় কোন্দল এবং অন্যটি গরুর হাট ইজারা পাওয়াকে কেন্দ্র করে দ্বন্দ্ব।

হারুনুর রশিদ খান

গতকাল শনিবার সকালে শিবপুর বাজার সড়কে নিজ বাড়িতে গুলিবিদ্ধ হন হারুনুর রশিদ খান। তিনি এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন।

তার স্বজনরা জানিয়েছেন, শিবপুর থানার কাছে হারুনুর রশিদের পাঁচ তলা বাড়ি। তার সঙ্গে দেখা করতে প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত অনেকে আসেন এই বাড়িতে। ঘটনার দিন সকালে একজন তার মুঠোফোনে তিন থেকে চারবার কল দিয়ে তার সঙ্গে দেখা করতে চান। তাকে আসতে বলেন হারুনুর রশিদ। এরপর তিনজন ব্যক্তি এসে কলিংবেল চাপেন। হারুনুর রশিদ নিজেই দরজা খুলে তাদেরকে বসতে দেন। এক পর্যায়ে হারুনুর রশিদের দিকে পিস্তল তাক করে গুলি করেন তাদের একজন। এ সময় সরে যাওয়ার চেষ্টা করেন হারুনুর রশিদ। এতে তার পিঠে দুটি গুলি লাগে।

হারুনুর রশিদ খানের ছেলে আমিনুর রশিদ খান বলেন, তারা সম্ভবত সাইলেন্সার পিস্তল দিয়ে বাবাকে গুলি করেছে। কারণ আমরা গুলির শব্দ শুনিনি। বাবার চিৎকার শুনে এসে দেখি তিনি রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছেন। পরে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাই।

ছেলে আমিনুর রশিদ খান আরও বলেন, স্থানীয় কারও প্রশ্রয় ছাড়া এমন ঘটনা ঘটানো সম্ভব নয়। যারা গুলি করেছেন তাদেরকে বাবা চিনতে পেরেছেন। পুলিশের কাছে তিনজনের বিষয়ে তথ্য দিয়েছেন।

শিবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ তালুকদার বলেন, ওই তিন ব্যক্তিকে আমরা শনাক্ত করেছি। তবে এখনও তাদেরকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। আশা করছি দ্রুতই তারা গ্রেপ্তার হবেন।

এদিকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বলছেন, শিবপুরে আওয়ামী লীগ দুই ভাগে বিভক্ত। একপক্ষে আছেন বর্তমান সংসদ সদস্য জহিরুল হক ভূঁইয়া, অন্য পক্ষে সাবেক সংসদ সদস্য সিরাজুল ইসলাম মোল্লা। তবে তৃণমূলের রাজনীতিতে সংশ্লিষ্টতা ও প্রভাব বেশি হারুনুর রশিদ খানের। এজন্য দুই পক্ষই হারুনুর রশিদকে সঙ্গে রাখতে চায়। হারুনুর রশিদও একেকবার একেক পক্ষের সঙ্গে থেকে রাজনীতি করেন।

নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হওয়া জহিরুল হক ভূঁইয়ার সঙ্গে ছিলেন হারুনুর রশিদ। পরে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দিলে তিনি সিরাজুল ইসলাম মোল্লার সঙ্গে যান। এর ফলাফলও পেয়েছেন হাতেনাতে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন সিরাজুল ইসলাম মোল্লা।

পরবর্তী সময়ে তার সঙ্গেও দ্বন্দ্ব দেখা দিলে তিনি আবার যুক্ত হন জহিরুলের সঙ্গে। এবার হারুনুর রশিদকে সঙ্গে রেখে একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নেন জহিরুল। এতে বিজয়ী হন তিনি। এরপর তার সঙ্গে আবারও দ্বন্দ্ব হওয়ায় এখন তিনি সিরাজুল ইসলাম মোল্লার সঙ্গে আছেন।

অন্যদিকে, জেলার সবচেয়ে বড় গরুর হাট বসে পুটিয়া বাজারে। গত বছর যৌথভাবে এই হাটের ইজারা পেয়েছিলেন খোরশেদ হাজী ও আরিফ সরকার নামের দুজন। কিন্তু আরিফ সরকারকে বাদ রেখে খোরশেদ হাজীকে হাটের ইজারা দেন হারুনুর রশিদ। তিন কোটি টাকার বেশি ডাক ওঠা এই হাটের ইজারা না পেয়ে হারুনুর রশিদের ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন আরিফ।

ধারনা করা হচ্ছে, হারুনুর রশিদকে গুলি করতে তার বাসায় যে তিনজন গিয়েছিলেন তাদেরকে আরিফ সরকারই পাঠিয়েছেন। দলীয় নেতাকর্মীরা বলেন, আরিফ সরকার সংসদ সদস্য জহিরুল হক ভূঁইয়ার ঘনিষ্ঠজন।

তবে এ বিষয়ে সংসদ সদস্য জহিরুল হক ভূঁইয়া বলেন, যারা হারুনুর রশিদকে গুলি করেছে তারা সন্ত্রাসী। সন্ত্রাসীদের কোনো পরিচয় থাকতে পারে না। আমি চাই জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করা হোক।

এদিকে সাবেক সংসদ সদস্য সিরাজুল ইসলাম মোল্লা বলেন, আবারও সংসদ সদস্য নির্বাচন করবেন জহিরুল হক ভূঁইয়া। হারুনুর রশিদ সঙ্গে না থাকলে নির্বাচিত হতে পারবেন না তিনি। তাই পথের কাঁটা দূর করতে আরিফকে দিয়ে এই ঘটনা ঘটিয়েছেন জহিরুল হক ভূঁইয়া।