মেট্রোরেলে ব্যয় কমলো ৬০ কোটি ডলার

এমআরটি-৫ সাউথ প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ৫৫০ কোটি ডলার থেকে কমিয়ে ৪৯০ কোটি ডলার করেছে ঢাকা মেট্রোরেল কোম্পানি। সংস্থাটি এখন প্রকল্পের অর্থায়নকারী এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কাছে ৩০ কোটি ডলার বরাদ্দ বৃদ্ধির অনুরোধ করেছে, যাতে নতুন করে সহ-অর্থায়নকারী খুঁজতে না হয়। বিষয়টি ভেবে দেখতে সময় চেয়েছে এডিবি।

এমআরটি-৫ সাউথের ব্যয় কমলো ৬০ কোটি ডলার

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী ও ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) এমডি এম এ এন সিদ্দিক গতকাল এক সভায় এডিবিকে বরাদ্দ বৃদ্ধির জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ করেন। স্টেকহোল্ডারদের কাছে এমআরটি-৫ সাউথ প্রকল্পের বিস্তারিত নকশার চূড়ান্ত খসড়া উন্মোচনের জন্য রাজধানীর এক হোটেলে এ সভার আয়োজন করা হয়।

সভায় প্রকল্প পরিচালক (পিডি) মোহাম্মদ আবদুল ওয়াহাব জানান, মেট্রোরেলের এ প্রকল্পটির জন্য অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠান এডিবি ২৫০ কোটি ডলার অর্থায়নের আশ্বাস দিয়েছে। আমরা বাড়তি ৩০ কোটি ডলারের যে অনুরোধ করেছি, সে বিষয়ে তারা মার্চ পর্যন্ত সময় চেয়েছেন।

সভা শেষে তিনি বলেন, একক অর্থায়নকারীকে সঙ্গে নিয়ে তিনটি এমআরটি লাইন বাস্তবায়ন করছে ডিএমটিসিএল। কাজেই এমআরটি-৫ সাউথেও যদি এডিবি একাই অর্থায়নকারী হয়, তাহলে আমরা স্বস্তিবোধ করব। এজন্যই সহ-অর্থায়নকারী খোঁজার বাড়তি ঝক্কি এড়াতে এডিবির কাছে অতিরিক্ত ৩০ কোটি ডলার চাওয়া হয়েছে।

গত জুনে এমআরটি-৫ সাউথ প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা শেষ হয়। সে সময় গাবতলী থেকে শ্যামলী হয়ে দাশেরকান্দি পর্যন্ত ১৭ দশমিক ২ কিলোমিটার রুট স্থাপনে ৫৫০ কোটি ডলার ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়।

একটি সূত্র জানিয়েছে, এর আগে এডিবি প্রকল্পটির ৫৫০ কোটি ডলার প্রাক্কলিত ব্যয়ের সিংহভাগ অর্থায়নে অস্বীকৃতি জানায়। প্রকল্প বাস্তবায়নকারীরা তখন সহ-অর্থায়নকারী খোঁজার চেষ্টা চালান।

প্রকল্প ব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, এমআরটি-৫ সাউথের জন্য ২১০ কোটি ডলার অর্থায়ন হবে সরকারি ব্যবস্থাপনায়, যার সিংহভাগ ব্যয় হবে ভূমি অধিগ্রহণে। তবে বিস্তারিত নকশা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। নকশা চূড়ান্ত হলে প্রকল্পের ব্যয় আরও কমতে পারে।

প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ইএসও জেভি কনসোর্টিয়াম বিস্তারিত নকশা প্রায় চূড়ান্ত করেছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে সভা আয়োজন করে ডিএমটিসিএল।

সভায় টিম লিডার হেনিং শোয়ার্জ জানান, এমআরটি-৫ সাউথের মোট দৈর্ঘ্য হবে ১৭ দশমিক ২ কিলোমিটার। এর মধ্যে ১৩ দশমিক ১ কিলোমিটার হবে ভূগর্ভস্থ মেট্রো, যার ১১টি স্টেশন থাকবে। মাটির উপরিভাগে থাকবে ৪ দশমিক ১ কিলোমিটার মেট্রো লাইন, যেখানে স্টেশন থাকবে চারটি।

গাবতলী, টেকনিক্যাল, কল্যাণপুর, শ্যামলী, কলেজ গেট, আসাদ গেট, রাসেল স্কোয়ার, কারওয়ান বাজার, হাতিরঝিল, তেজগাঁও ও আফতাবনগর স্টেশন হবে আন্ডারগ্রাউন্ড। আফতাবনগর সেন্ট্রাল, আফতাবনগর ইস্ট, নাসিরাবাদ ও দাশেরকান্দি স্টেশন হবে মাটির উপরে। এমআরটি-১, এমআরটি-৫ নর্থ, এমআরটি-৬, এমআরটি-২, বিআরটি-৭ ও সার্কুলার রেলওয়ের সঙ্গে এমআরটি-৫ সাউথের আন্তঃসংযোগ থাকবে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, এমআরটি-৫ সাউথের ডিপোর জন্য ৪৭ দশমিক ৮৫ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণ করতে হবে। স্টেশনগুলোর এক্সিট পয়েন্টের জন্যও ভূমির প্রয়োজন হবে। প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে গাবতলী থেকে দাশেরকান্দি পৌঁছাতে ৩০ মিনিট সময় লাগবে। ২০৩১ সালে প্রকল্পটি চালু হবে। ২০৪১ সাল নাগাদ রুটটি দৈনিক ১০ লাখ যাত্রীবহন করবে।

ডিএমটিসিএল এমডি এম এ এন সিদ্দিকের সভাপতিত্বে গতকালের সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন এডিবির ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর জিয়াংবো নিং।

সভায় প্রধান অতিথি স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে বৈঠকের ফলে প্রকল্প নিয়ে বিভিন্ন জটিলতা নিরসন হবে বলে আশা প্রকাশ করেন। যে কোনো বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন এক ধরনের চ্যালেঞ্জ বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

এডিবির ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর তার ব্ক্তৃতায় এডিবির অর্থায়নের নির্দেশনা ও নীতিগুলো তুলে ধরে বলেন, এডিবির তহবিল পেতে হলে এসব গাইডলাইন ও নীতির সবগুলোই মানতে হবে। এমআরটি-৫ সাউথ মেট্রোরেল প্রকল্পে এডিবির প্রথম অর্থায়ন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

সভায় ডিএমটিসিএল এমডি বলেন, বর্তমানে বাস্তবায়নাধীন সবকটি মেট্রোরেল প্রকল্প অর্থায়ন করছে জাইকা। একেক অর্থায়নকারীর একেক ধরনের গাইডলাইন থাকায় যে কোনো প্রকল্পে সহ-অর্থায়নকারী পাওয়া কঠিন।

এমআরটি-৫ সাউথ প্রকল্পের স্টেকহোল্ডার সংখ্যা ৫৪। তবে গতকালের সভায় ডিএমটিসিএলের তিনটি প্রকল্প অফিসসহ কেবলমাত্র ১৫ স্টেকহোল্ডারের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।