বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের সামনে আত্মপ্রত্যয়ী বাংলাদেশ

একটা সময় ছিল যখন বাংলাদেশকে গোনায় ধরতো না ইংল্যান্ড। ‘ছোট ভাই বনাম বড় ভাই’ ট্যাগ মার্কটা বাংলাদেশ কিছুটা ঘুচিয়েছিল ২০১৫ বিশ্বকাপে। সেবার বাংলাদেশের কাছে হেরে প্রথম পর্ব থেকেই বিদায় নেয় ইংল্যান্ড। ওই হারের এক বছর পর ইংলিশরা বাংলাদেশ সফর করে। তখন সিরিজটি ২-১ এ জিতে ইংল্যান্ড। সিরিজ হারলেও বাংলাদেশ বুঝিয়ে দিয়েছিল ক্রিকেটে টাইগাররা আর ‘ছোট ভাই’ নয়।

প্রেস কনফারেন্সে দুই দলের অধিনায়ক তামিম ইকবাল ও জস বাটলার

আগামীকাল বুধবার মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হবে তামিম ইকবাল বাহিনী। ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় দুপুর ১২ টায়। সরাসরি সম্প্রচার করবে টি-স্পোর্টস চ্যানেল।

২০১৬ সালের তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বাংলাদেশ। তিনটি ম্যাচেই জেতার সুযোগ ছিল মাশরাফি বাহিনী। প্রথম ম্যাচে ইমরুল কায়েসের সেঞ্চুরির পর ইংল্যান্ডের দেওয়া ৩০৯ রানের টার্গেটকে মামুলি মনে হচ্ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ থামে ২৮৮ রানে।

এরপর দ্বিতীয় ম্যাচটি জিতে সিরিজে ফিরে আসে বাংলাদেশ। শেষ ম্যাচটি হয় দুই দলের জন্য বাঁচা মরার লড়াই। তৃতীয় ম্যাচে ২৭৭ রানের টার্গেট দেয় বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত কষ্ট করে জয়ের বন্দরে পৌঁছায় ইংলিশরা।

সিরিজে বাংলাদেশ চোখে চোখ রেখে লড়াই করেছিল। সিরিজের শেষ ম্যাচটি উত্তেজনা এতটাই চরমে পৌঁছায় যে দুই দলের কয়েকজন খেলোয়াড়ের মধ্যে হাতাহাতিও লেগে যায়। তারপর থেকে এই দুই দলের লড়াইটা যথাযথ মর্যাদা পায় প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ক্রিকেটে।

বাংলাদেশ বনাম ইংল্যান্ডের এই সিরিজটিকে নতুন একটা নাম দিচ্ছেন অনেকেই, যেটা বিশ্বচ্যাম্পিয়ন বনাম নতুন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার উচ্চাকাঙ্ক্ষী দলের লড়াই। গত ডিসেম্বরে টিম ইন্ডিয়ার মতো দলকে হারিয়ে ঘরের মাঠে টানা সাতটি সিরিজ জেতা বাংলাদেশের সামনে আরেকটি সিরিজ জেতার হাতছানি। অন্যদিকে বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা নিজেদের সামনে চ্যাম্পিয়ন মর্যাদা ধরে রাখার মিশন। তবে বাটলারদের সামনে তার থেকেও বড় মিশন হতে পারে বাংলাদেশের স্পিন সামলানো। যেখানে সাকিব আল হাসান, মেহেদি হাসান মিরাজ এবং তাইজুল ইসলামরা সফরকারীদের পরীক্ষা নিতে প্রস্তুত।

এদিকে পরীক্ষাটা তামিদের জন্যও কঠিন হতে পারে। কারণ মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে নতুন বলে তাদের সামনে হুমকি হতে পারেন জফরা আর্চার, মার্ক উড কিংবা ক্রিস ওকসরা। একদিন আগেও বাংলাদেশ অধিনায়ক তামিম ইকবাল এ নিয়েই সতর্ক করেছেন নিজ দলের ব্যাটারদের।

গেল ডিসেম্বরের ভারত সিরিজকে সামনে টেনে তামিম সতর্ক করেন নিজ দলের ব্যাটারদের। মিরপুরে নতুন বলে প্রথম ১০ ওভার কতটা বাউন্সি হতে পারে সে বিষয়ে মনে করিয়ে দেন তিনি। কারণ ওই সিরিজের দুই দলের টপ অর্ডার ব্যাটাররাই ভুগেছেন। টপঅর্ডারের কেউ সেভাবে রান পাননি। তাই ইংলিশদের পেসার বনাম বাংলাদেশের স্পিন হতে পারে টার্নিং পয়েন্ট।

এদিকে, কুঁচকির ইনজুরির কারণে ভারত সিরিজ মিস করা তামিম ইকবাল ফিরেছেন দলে। তিনি ফেরায় ব্যাটিং লাইনআপে শক্তি বাড়াবে নিশ্চয়ই; কারণ সাকিব, মুশফিকুর রহিম এবং মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে দলে পাচ্ছেন অধিনায়ক। ফর্মে থাকা লিটন দাস, মেহেদি ও তাসকিন আহমেদও বিপজ্জনক হতে পারে প্রতিপক্ষের জন্য।

অন্যদিকে, ইংল্যান্ডও এসেছে শক্তিশালী স্কোয়াড নিয়ে। এছাড়া ইংলিশদের কয়েকজন খেলোয়াড়রা বিপিএলে খেলেছেন। এমনকি গত এক দশকে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগেও তারা প্রচুর খেলেছেন। এর বাইরে এই ইংল্যান্ড যেকোনো পরিস্থিতিতে শক্ত প্রতিপক্ষ। যদিও তারা হ্যারি ব্রুক এবং বেন ডাকেটকে ছাড়া বাংলাদেশে এসেছেন। যারা টেস্ট দলের সঙ্গে বর্তমানে নিউজিল্যান্ডে আছেন।

এদিকে বাংলাদেশ দলে সবশেষ সিরিজের থেকে আসতে পারে দু’একটি পরিবর্তন। এনামুল হকের জায়গায় খেলবেন তামিম। তৃতীয় স্পেশালিস্ট স্পিনার হিসেবে তাইজুলকে খেলাতে হলে জায়গা ছাড়তে হতে পারে এবাদতকে।

বাংলাদেশ দল (সম্ভাব্য): তামিম ইকবাল (অধিনায়ক), লিটন কুমার দাস, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম (উইকেটরক্ষক), ইয়াসির আলী, মাহমুদউল্লাহ, আফিফ হোসেন, মেহেদি হাসান মিরাজ, তাসকিন আহমেদ, তাইজুল ইসলাম, মোস্তাফিজুর রহমান।

ইংল্যান্ড দলে ফাস্ট বোলারদের একজনের পরিবর্তে তরুণ লেগস্পিনার রেহান আহমেদকে খেলাতে পারে সফরকারীরা।

ইংল্যান্ড দল (সম্ভাব্য): জেসন রয়, ডেভিড মালান, জেমস ভিন্স, উইল জ্যাক, জস বাটলার (অধিনায়ক, উইকে), মঈন আলী, স্যাম কুরান, ক্রিস ওকস, আদিল রশিদ, জোফরা আর্চার, রিস টপলে।