অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির দিকে যাচ্ছে আইএমএফ, প্রস্তুত পাকিস্তান?

পাকিস্তানে কয়েক দশকের পুরোনো নীতিতে কিছু নির্বাচিত খাতের জন্য সরকারি সম্পদে অগ্রাধিকারমূলক প্রবেশাধিকার খাতগুলোতে সরকারের বলিষ্ঠ পথচলার স্বাক্ষর তৈরি করেছে। আর এ দিকটি দেশটিকে সেইসব দেশের তালিকায় স্থান দিয়েছে যেগুলোতে সর্বনিম্ন অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি এবং শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা সুযোগ কম রয়েছে। এ ছাড়া পাকিস্তানের ওই নীতি অসম জনসংখ্যাগত ভিন্নতাকে বিপজ্জনক করে তুলেছে।

অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির দিকে যাচ্ছে আইএমএফ

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি সংক্রান্ত প্রকাশনা, যার শিরোনাম—প্রমোটিং ইনক্লুসিভ গ্রোথ ইন দ্য মিডল ইস্ট অ্যান্ড নর্থ আফ্রিকা : চ্যালেঞ্জেস অ্যান্ড অপারচুনিটিস ইন দ্য পোস্ট-প্যান্ডেমিক ওয়ার্ল্ড। প্রকাশনীটিতে বিশ্বের এই অংশের দরিদ্র অর্থনৈতিক অবস্থার রূপরেখা দেওয়া হয়েছে। যেখানে পাকিস্তানও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। খবর এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের।

যেসব দেশের অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির স্কোর সবচেয়ে কম সেগুলো হলো- ইয়েমেন, মৌরিতানিয়া ও পাকিস্তান। বেসরকারি খাতে এবং আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে অন্যান্য দেশের তুলনায় এই দেশগুলো পিছিয়ে আছে।

শিক্ষার সুযোগের ক্ষেত্রে, ইরান, জর্ডান, মিশর, মরক্কো, লেবানন ও পাকিস্তানের অবস্থান বাকি বিশ্বের তুলনায় গড় সীমা রেখার নিচে। এই অঞ্চলের মধ্যে মৌরিতানিয়া, পাকিস্তান ও ইয়েমেন হলো সেসব দেশ যারা তাদের বাসিন্দাদের মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা দিতেও সবচেয়ে বেশি লড়াই করে।

মৌরিতানিয়া, পাকিস্তান এবং ইয়েমেনে সবচেয়ে দরিদ্র জনসংখ্যার ১৫ শতাংশের কম মানুষের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে এবং ৬ শতাংশের কম মানুষ ব্যাংক ঋণের সুবিধা পায়। আর সীমান্তের ওপারে ইরানে জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ দরিদ্রতমের প্রায় ৯২ শতাংশের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট রয়েছে, ২১ শতাংশ দরিদ্র মানুষ আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ পায় এবং জনসংখ্যার ৮৪ শতাংশ ইন্টারনেট ব্যবহার করে।

এই বৈপরীত্যগুলো বলে যে পাকিস্তানসহ এই অঞ্চলে কতটা এক্সক্লুসিভ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি রয়ে গেছে এবং এই অঞ্চল অনেক যুদ্ধ ও বিদ্রোহের মুখে পড়েছে। আর এ অর্থনৈতিক দূরাবস্থার কারণে অঞ্চলটির তরুণ বেকার জনগোষ্ঠী জঙ্গি গোষ্ঠীগুলির জন্য সুযোগ হয়ে দেখা দিতে পারে।

২০২৩ সালের অক্টোবরে বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের বার্ষিক সভা চলাকালীন- বিশ্বব্যাপী ঋণদাতারা মরক্কোর মারাকেশ শহরে আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন নীতি উন্মোচন করতে প্রস্তুত। একই ভেন্যুতে ২০১৮ সালেও আইএমএফের আঞ্চলিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তখন অংশগ্রহণকারী দেশগুলো এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক মডেল পরিবর্তন করে নতুন সামাজিক চুক্তির ওপর জোর দিয়েছিল। যাতে করে বেশি কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়, প্রবৃদ্ধি বাড়ে এবং নাগরিকরা আরও বেশি উন্নয়নের ছোঁয়া পায়।

এই অঞ্চলের অনেক দেশের তুলনায় পাকিস্তানে অভিজাতদের উপস্থিতি সম্ভবত বেশি স্পষ্ট। কারণ দেশটিতে ধনী-কেন্দ্রিক নীতি ছিল। তবে সম্প্রতি আইএমএফের রাডারে সেই নীতি সামনে এসেছে। গত দুই দশক ধরে পাকিস্তানের শ্রমশক্তির অংশগ্রহণ কম ছিল এবং বিনিয়োগের হার জিডিপির প্রায় ১৫ শতাংশ ছিল, যা এই অঞ্চলের সেরা দেশগুলোর থেকে বেশ নিচে। এখন প্রবৃদ্ধিকে অন্তর্ভুক্তিমূলক করা এবং এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা সত্যিই আগামী ১০ বছরে পাকিস্তানের শ্রমশক্তির অংশগ্রহণ এবং বিনিয়োগের হারের ব্যবধান কমাবে। কিন্তু এই অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি পাকিস্তানে কতদিন চলতে সেটাই দেখার বিষয়।