১৯৬১ সালের আজকের এই দিনে (২৪ মার্চ) জন্মগ্রহণ করেন ডিন জোন্স। ১৯৮০ এর দশকে প্রথম আত্মপ্রকাশ করেন এবং ওই সময়ে অভিষেক হওয়া বেশিরভাগ খেলোয়াড়দের নায়করা ছিলেন সুনীল গাভাস্কার, জিওফ্রে বয়কট, গ্রেগ চ্যাপেল এবং স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস। যারা টেস্ট ক্রিকেটকে সংজ্ঞায়িত করেছিলেন দৃঢ়তা, ধৈর্য এবং নির্ভীকতার সঙ্গে।

dean jones australia cricketডিন জোন্স

কিন্তু ডিন জোন্সের আত্মপ্রকাশ ঘটে প্রথম একদিনের ক্রিকেটে। এটি একটি ফরম্যাট যা তখন ক্লাসিক ক্রিকেট ব্যাকরণ অনুসরণ করে খেলা হত। ব্যাটসম্যানরা সোজা ব্যাট দিয়ে বেশিরভাগ ডেলিভারির কাছে যেতেন। আক্রমণ করার আগে বল পুরানো হওয়ার অপেক্ষায় থাকতেন। সেখানে জোন্স ছিলেন অন্যরকম। তিনি শুরু থেকেই নিজের মতো করে খেলতেন।

অনেকে মনে করেন ডিন জোন্সই প্রথম ‘মিস্টার ৩৬০’। সেটা তার ব্যাটিং স্টাইলের কারণে বলা। ওয়ানডে ক্রিকেটে কিভাবে ব্যাট করতে হয় সেটা বোধহয় তিনি প্রথম শিখিয়েছিলেন। টেস্ট ক্রিকেট থেকে ওয়ানডে ফর‌ম্যাটে ফেরাটা চ্যালেঞ্জেই ছিল। আর সেটাই সুন্দরভাবে মানিয়ে নিতেন জোন্স। এজন্যই তিনি আলাদা করে স্মরণে থাকবেন ক্রিকেট ইতিহাসের পাতায়।

এখন সাদা বলের ক্রিকেটে ব্যাটিংয়ে মারমুখি থাকেন ক্রিকেটাররা। অনেকেই তো বলেন যে টি-টোয়েন্টির লঙ্গার ভার্সন হচ্ছে ওয়ানডে ক্রিকেট। অথচ আশির দশকে ওয়ানডে ক্রিকেটকে বলা হতো টেস্টের শর্টার ভার্সন। এতেই বোঝা যায় তখন কেমন ছিল একদিনের ক্রিকেট। তবে সেই সময়েও আক্রমণাত্মক ব্যাটিং জোন্সকে দিয়েছে আলাদা মর্যাদা।

একদিনের ক্রিকেটে সাহসী ব্যাটিং তিনিই প্রথম দেখিয়েছেন। ক্রিজের বুদ্ধিমান ব্যবহার, ফাইন লেগে এক হাতে ছক্কা মারার উন্মাদ নিয়ন্ত্রণ, উইকেটে দ্রুত দৌড় দিয়ে এক রানকে দুই রানে পরিণত করা তিনিই শিখিয়েছিলেন। সে সময়ে রিভার্স সুইপ করাকে এক প্রকার নিষিদ্ধই গণনা করা হতো। আর সেখানেও তিনি ছিলেন সাহসী, অবিচল। যেমন তিনি ১৯৮৭ বিশ্বকাপের একটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে তিনি বেশ কয়েকবার রিভার্স সুইপ করেন।

১৯৮৭ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরি করতে তার তিন বছর সময় লেগেছিল। কিন্তু পরের দিনই পাকিস্তানের বিপক্ষে তিনি সেই কৃতিত্বের পুনরাবৃত্তি করেন। পরপর দুই ম্যাচে সেঞ্চুরি করাটা তখন ছিল বিরল অর্জন।

dean jones against indiaস্পিনিং উইকেটে চেন্নাইয়ের জ্বলন্ত গরমে ভারতের বিপক্ষে অতিমানবীয় ইনিংস খেলেন জোন্স

জোন্সের শেষ ওয়ানডে সেঞ্চুরিটি এসেছিল ১৯৯০ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে গাবাতে। যে শতককে সীমিত ওভারের সেরা ইনিংসগুলোর মধ্যে একটি হিসাবে স্মরণ করা হয়। প্রথমে ব্যাট করে জোনস এবং জিওফ মার্শের ১৭৫ রানের জুটি গড়ার আগে অস্ট্রেলিয়া ডেভিড বুনকে হারায়। জোন্স ১৩৬ বলে ১৪৫ রান করেন। ১২টি চার এবং চারটি ছক্কা মেরে তার সর্বোচ্চ ওয়ানডে ইনিংস সাজান।

ওডিআই ক্রিকেটে তিনি ছিলেন অন্যতম সেরা। তবে তিনি টেস্ট ক্রিকেটেও সমানভাবে ভালো ছিলেন। জোনস তার তৃতীয় ম্যাচেই প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন, যেটা ছিল খুবই কঠিন কাজ। স্পিনিং উইকেটে চেন্নাইয়ের জ্বলন্ত গরম আবহাওয়ায় ভারতের বিপক্ষে খেলার জন্য তখন অতিমানবীয় ফোকাস এবং তীব্রতার প্রয়োজন ছিল। জোন্স ক্রিজে ৫০৩ মিনিট ছিলেন। ৩৩৯ বল মোকাবেলা করে ২১০ রান করেন।

তিনি ডিহাইড্রেশনে ভুগছিলেন এবং এমনকি খেলার সময় তাকে বমি করতেও দেখা গেছে। কিন্তু তার জেতার তীব্র আকাঙ্ক্ষা তাকে মাঠ ছাড়তে দেয়নি সেদিন।

জোন্সের ২১০ রানের ইনিংসটি এখনও ভারতের মাটিতে অস্ট্রেলিয়ানদের সর্বোচ্চ সংখ্যক রান। তবে এটি কিন্তু তার ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংস ছিল না। সে যুগের টেস্ট ক্রিকেটে সেরা প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য নিজের সেরাটা জমা রেখেছিলেন তিনি।

১৯৮৯ সালে অস্ট্রেলিয়া সফরে যায় ভিভিয়ান রিচার্ডসের দল। অ্যাডিলেডে অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটিং অর্ডারে ম্যালকম মার্শাল, কার্টলি অ্যামব্রোস, কোর্টনি ওয়ালশরা ভয়ঙ্কর বোলিং করেন। অস্ট্রেলিয়া ৬৪ রানে দুই উইকেট হারালে ক্রিজে আসেন জোন্স। তিনি ২১৬ রান করার জন্য ৫৩৮ মিনিট ক্রিজে থাকেন।

ইমরান খানের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান দল এক বছর পরে অস্ট্রেলিয়া সফর করে। যেখানে তরুণ ওয়াসিম আকরাম এবং ওয়াকার ইউনিস বোলিংয়ে ভয় ধরিয়ে দেন অজি শিবিরে। দলের বেশিরভাগ ব্যাটার প্রথম ইনিংসে আকরামের ফাইফারের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। খেলায় স্বাগতিকদের ধরে রাখতে সেদিন স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে সেঞ্চুরি করেছিলেন জোন্স। এরপর অস্ট্রেলিয়ার মান বাঁচাতে দ্বিতীয় ইনিংসেও শতক করেন জোন্স।

ভিক্টোরিয়ান মাত্র অল্প কয়েকজনের মতো ক্রিকেট খেলাটি হৃদয় দিয়ে আত্মস্থ করতে পেরেছিলেন। অবসর-পরবর্তী সময় ধারাভাষ্যকারের ভূমিকায় ছিলেন জোন্স। ২০২০ সালে ২৪ সেপ্টেম্বর ৫৯ বছর বয়সে মারা যান এই কিংবদন্তি।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.