যে কারণে তাকরিমকে সংবর্ধনা না দেওয়ার অনুরোধ

বিশ্বমঞ্চে দেশের নাম ফের উজ্জ্বল করেছেন হাফেজ সালেহ আহমদ তাকরিম। সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত ২৬তম আন্তর্জাতিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জন করেছেন তিনি। স্বভাবতই তাদের নিয়ে উচ্ছ্বাস ছিল দেশের সর্বস্তরের মানুষের মাঝে। কিন্তু তাকে সব ধরনের সংবর্ধনা ও শোডাউন করা থেকে বিরত থাকতে অনুরোধ করেছেন তারই শিক্ষক মাওলানা মুরতজা হাসান ফয়জি মাসুম।

দেশে ফেরার পথে শিক্ষক মুরতজা হাসানের সাথে তাকরিম

বুধবার (৫ এপ্রিল) বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে এক বিশেষ ফ্লাইটে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামেন হাফেজ তাকরিম। তার সঙ্গে ছিলেন তার উস্তাদ, মারকাযু ফয়জিল কোরআন আল ইসলামী ঢাকার প্রিন্সিপাল মুফতি মুরতাজা হাসান ফয়েজি মাসুম। তবে ইফতারের সময় হয়ে যাওয়ায় তারা মাগরিবের পরই বিমানবন্দর থেকে বের হন।

তাকরিম এর আগে সৌদি আরবে অনুষ্ঠিত ৪২তম বাদশাহ আব্দুল আজিজ আন্তর্জাতিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় তৃতীয় স্থান অর্জন করেছিলেন। সে সময় পুরো দেশ তাকে নিয়ে উচ্ছ্বাসে মাতে। এবার যেহেতু তিনি চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন, তাই তাকে নিয়ে উচ্ছ্বাসের মাত্রা আরও বেশি হওয়ার কথা ছিল।

চ্যাম্পিয়ন তাকরিম পুরস্কার গ্রহণ করছেন

কিন্তু যে দিন তাকরিমের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ঘোষণা আসে, সে দিনই দেশে ঘটে যায় বড় একটি দুর্ঘটনা। ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে দেশের অন্যতম বৃহত্তম মার্কেট বঙ্গবাজার পুড়ে ছাই হয়ে যায়। পুড়ে যায় হাজারও পরিবারের স্বপ্ন। পবিত্র রমজান মাসে এমন একটি দুর্ঘটনায় মর্মাহত হয়েছেন সবাই। এরই সাথে সহমর্মিতা পোষণ করে তাকরিমকে ঘিরে কোনো ধরনের আয়োজন এড়িয়ে চলার অনুরোধ করেন তার শিক্ষক মুরতজা হাসান।

এক ফেসবুক পোস্টে তিনি লেখেন,

একটি আবেদন-
বাংলাদেশের মানুষ বরাবরই ধর্মপ্রিয় ও কোরআনপ্রিয়। দুবাইয়ে সদ্য অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতায় মারকাযু ফয়জিল কোরআন আল ইসলামী ঢাকার কিতাব বিভাগের ছাত্র সালেহ আহমাদ তাকরিমের বিশ্বজয় মানে এ দেশের কোটি কোটি দেশপ্রেমিক, কোরআনপ্রেমিকদের জয়।

বিশ্বজয়ী হাফেজ তাকরিমকে স্বাগত জানানোর জন্য বিমানবন্দরে হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতি খুবই স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু মঙ্গলবার বঙ্গবাজার মার্কেটের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে হাজার হাজার মানুষের স্বপ্ন পুড়ে গেছে। তাদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়ে সব ধরনের সংবর্ধনা, শোডাউন থেকে বিরত থাকতে ফয়জুল কোরআন পরিবারের পক্ষ থেকে তৌহিদী জনতার প্রতি বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি। আমরা আপনাদের কাছে প্রিয় তাকরিম, তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষক ও পিতামাতার জন্য আন্তরিক দোয়া কামনা করছি। জাযাকুমুল্লাহ।

উল্লেখ্য, মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ১১টার দিকে তাকরিমকে চ্যাম্পিয়ন হিসেবে ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। এই প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় ও তৃতীয় হয়েছেন যথাক্রমে ইথিওপিয়ার আব্বাস হাদি ওমর ও সৌদি আরবের খালেদ সুলাইমান বুরকানি।

হাফেজ সালেহ আহমদ তাকরিম দুবাইয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আগেও তিনটি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় পুরস্কৃত হয়েছেন। তিনি ২০২২ সালে লিবিয়ায় অনুষ্ঠিত প্রতিযোগিতায় সপ্তম, একই বছর ইরানে অনুষ্ঠিত কোরআন প্রতিযোগিতায় প্রথম এবং সৌদি আরবে অনুষ্ঠিত বাদশাহ আব্দুল আজিজ আন্তর্জাতিক হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতায় তৃতীয় স্থান অর্জন করেন।

হাফেজ তাকরিম বর্তমানে রাজধানীর মিরপুরে অবস্থিত মারকাযু ফয়জিল কোরআন আল ইসলামী ঢাকায় কিতাব বিভাগে পড়াশোনা করছেন। তার বাড়ি টাঙ্গাইলের নাগরপুর থানার ভাদ্রা গ্রামে।