গ্যাস দুর্ঘটনা এড়াতে একটি দেশীয় উদ্যোগ 'স্নিফার'
- Details
- by পর্যালোচনা
রান্নাঘরের গ্যাসলাইনে ছিদ্র থাকায় ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের খবর প্রায়ই শোনা যায়। অহরহ ঘটা এমন দুর্ঘটনায় পুরো পরিবার দগ্ধ হয়ে মরছে নয়তো হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ধুকে ধুকে বাঁচতে হচ্ছে অনির্দিষ্টকাল অব্দি। হাতে গোনা কিছু সংখ্যক ভাগ্যবান মানুষ কোনমতে বেঁচে গেলেও স্বাভাবিক জীবন ফিরে পায়না অধিকাংশ ক্ষেত্রেই।
ফায়ার সার্ভিসের একটি পরিসংখ্যানে জানা যায়, দেশে অগ্নিকান্ডের শতকরা ২০ শতাংশই গ্যাস লিকেজের সঙ্গে সম্পর্কিত। অন্যদিকে, তিতাস গ্যাসের পরিসংখ্যান বলে, গত একবছরে রান্নাঘরের গ্যাস লিকেজ জনিত কারণে অন্তত ৫১২৩ টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে ১৪ টির বেশি অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটছে।
এসব আতঙ্ক, দুশ্চিন্তায় হয়তো ঘরে বা বাহিরে কোথাও স্বস্তি পাচ্ছেন না, রাতের ঘুমেও বিঘ্ন ঘটছে আপনার। কিন্তু এমন মৃত্যুভয়ে কতো রাত জেগে কাটাবেন? এবার দুশ্চিন্তার ভার ছেড়ে দিন স্নিফার ১.০ জি-এর ওপর। বাংলাদেশের ইলেকট্রনিক্স কোম্পানী ‘জলপাই' দেশের মানুষকে সুরক্ষিত রাখতে তৈরি করেছে এই গ্যাজেট, যেটি লাগিয়ে নিলে গ্যাস লিকেজে দুর্ঘটনার ভয় থেকে আপনি সবসময় দুশ্চিন্তামুক্ত থাকতে পারবেন। দেশের একদল মেধাবী প্রকৌশলীর অক্লান্ত পরিশ্রমে তৈরী এই ছোট একটি বাক্স আপনার পরিবারকে তথা দেশের মানুষকে রাখবে সুরক্ষিত।
স্নিফার উদ্ভাবনের জন্য সমস্ত পরিকল্পনা, গবেষণা থেকে শুরু করে সবকিছু বাংলাদেশ তথা রাজধানী ঢাকাতেই হয়েছে। বাংলাদেশের ইলেকট্রনিক্স কোম্পনী জলপাইয়ের প্রতিষ্ঠাতা রেজা উল কবির দেশের মানুষের নিরাপত্তার জন্য যে উদ্যোগ নিয়েছেন তা সত্যি প্রশংসনীয়। এই প্রতিষ্ঠানটি মূলত প্রথাগত ধারণার বাইরে গিয়ে চিন্তা-ভাবনার ফসল। জলপাই ইলেকট্রনিক্স বাংলাদেশের ইলেকট্রনিক্স শিল্পের বিকাশের পথিকৃৎ হয়ে থাকবে উল্লেখ করে প্রতিষ্ঠানটির ভূয়ষী প্রশংসা করেন লন্ডন ইউনিভার্সিটি থেকে ডক্টরেট ডিগ্রী প্রাপ্ত এনায়েতুর রহমান।
স্নিফার যন্ত্রটি আসলে কেমন? দেখুন ভিডিওতে-
আপনি কেন স্নিফার ব্যবহার করবেন?
রান্নাঘরকে উন্নত করতে এবং পরিবারকে নিরাপদ রাখতে আপনার স্নিফার ব্যবহার করা উচিৎ। আধুনিক রান্নাঘর হওয়া সত্ত্বেও দুর্ঘটনা ঘটতে পারে খুব সাধারণ কারণেই। এর কয়েকটি উদাহরণ হতে পারে,
১) পাতিলের ভাত-তরকারি উতলে চুলার আগুন নিভে গেলে চুলার চাবি বন্ধ না হওয়ায় অতিরিক্ত গ্যাস নির্গত হয়ে ঘটে যেতে পারে মারাত্মক দূর্ঘটনা।
২) ধরুন, গ্যাস লাইনে গ্যাসের প্রেশার কমে গিয়ে চুলার আগুন নিভে যাওয়ার পর চুলা চাবি বন্ধ না করা হলো না। এক্ষেত্রে পরবর্তিতে গ্যাসের প্রেশার ফিরে এলে দুর্গটনার ঘটতে পারে।
৩) বাচ্চারা খেলার ছলে চুলার চাবি ঘুরিয়ে গ্যাস ছেড়ে দিলে ঘটে যেতে পারে অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা।
৪) সবদিক থেকে আপনি এই বিষয়ে সতর্ক হলেও আপনার প্রতিবেশীর বা রাস্তার গ্যাস লাইনের লিকেজের কারণেও দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
কোথায় লাগাবেন?
Sniffer 1.0 G রান্নাঘরের কথা বিবেচনা করে বানানো হয়েছে। তাই ভালো ফলাফলের জন্য এটি রান্নাঘরে ব্যবহার করাই উত্তম।
১) রান্না ঘরের চুলার বিপরীত পাশের দেয়ালে অথবা পাশের দেয়ালে লাগান।
২) ফ্লোর থেকে কমপক্ষে ৬-৭ ফিট উপরে লাগাতে হবে।
৩) চুলা থেকে ১৫ ফিটের কম দূরত্বে লাগালে ভালো হবে।
৪) চুলার সরাসরি উপরে লাগানো উচিৎ হবে না।
কিভাবে লাগাবেন?
দেয়ালে একটি স্ক্রু লাগান এবং ডিভাইসটি মাউন্ট করুন। কাছাকাছি বিদ্যুৎ লাইন থেকে এডাপ্টারটি (Sniffer এর সাথে দেয়া ১২ ভোল্ট, ২ এম্পিয়ার) সংযোগ দিন। তাহলেই হয়ে গেল।
স্নিফার কিভাবে কাজ করে, দেখুন ভিডিওতে-
কিভাবে নিশ্চিত হবেন স্নিফার ঠিকঠাক কাজ করছে?
স্বাভাবিক অবস্থায় স্নিফারের সেন্সরটি যতক্ষণ সচল থাকবে ততক্ষণ এর উপরের জলপাই'এর সাদা রঙের একটি লোগোটি জ্বলজ্বল করে জ্বলতে থাকবে। অতিরিক্ত গ্যাসের উপস্থিতি টের পেলেই লোগোটি হালকা লাল রঙের আভা ছড়িয়ে উচ্চস্বরে এলার্ম বাজিয়ে সতর্ক করবে আপনাকে। এই এলার্ম আপনি কোলাহলে থেকেও স্পষ্ট শুনতে পাবেন। এছাড়া প্রতি মাসে অন্তত দুই-একবার একটি গ্যাস লাইটার দিয়ে স্নিফারের নিচের ছিদ্র দিয়ে গ্যাস চালিয়ে পরীক্ষা করুন যে এটি ঠিকঠাক কাজ করছে কিনা। কোন রকম সমস্যা হলে যোগাযোগ করা যাবে জলপাইয়ের সঙ্গে।
স্নিফার ব্যবহারে কি পরিমাণ বিদ্যুৎ খরচ হবে?
স্নিফার প্রতি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২.৫ ওয়াট-আওয়ার বিদ্যুৎ খরচ করে। অর্থাৎ মাসে ২ ইউনিটেরও কম বিদ্যুৎ খরচ করবে। প্রতি ইউনিট ৩.৩ টাকা হলে স্নিফারের জন্য আপনার মাসিক খরচ মাত্র ৫.৯৪ টাকা।
স্নিফার ঘরের রান্নাঘরসহ যেকোন প্রকার গ্যাস লিকেজ জনিত দুর্ঘটনা এড়াতে আপনাকে সতর্ক করবে। বিদ্যুৎচালিত এই যন্ত্রে রয়েছে শক্তিশালী সেন্সর যা সার্বক্ষনিক গ্যাসের গন্ধ শোঁকার কাজে নিয়োজিত থাকে। মিথেন, বিউটেন, প্রোপেইনসহ যেকোন প্রকার গ্যাসের অতিরিক্ত অস্তিত্ব টের পেলেই স্নিফারের এলার্ম বেজে ওঠে। শীত এবং বর্ষাকালে অনেকেই চুলার ওপর কাপড় শুকাতে দেন, অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটতে পারে এর থেকেও। এক্ষেত্রে স্নিফার স্মোর্ক এলার্মের কাজ করবে। বিদ্যুৎসংযোগ না থাকাকালীন সময়ে এটি রিচার্জেবল ব্যাটারীর সাহায্যে সচল থাকে।
প্রতিটি স্নিফারের মূল্য মাত্র ২,৩০০ টাকা। একসঙ্গে ১২ টি স্নিফার অর্ডার করলে জলপাই ইলেকট্রনিক্স ১৫% ছাড়ে ১৯,৫৫ টাকা এবং ২৪ টিতে ১৭% ছাড়ে ১৯,০৯ টাকায় দিচ্ছে। এছাড়া এর চেয়ে বেশি সংখ্যক অর্ডারের জন্য রয়েছে আকর্ষণীয় মূল্যছাড়। এছাড়া ঢাকার মধ্যে প্রি হোম ডেলিভারির এবং ক্যাশ অন ডেলিভারি সুুবিধা রয়েছে। দেশীয় প্রতিষ্ঠান জলপি ইলেকট্রনিক্সের ওয়েবসাইটে স্নিফার সম্পর্কিত সকল বিস্তারিত তথ্য রয়েছে।
যোগাযোগের ঠিকানা: Jolpi
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর