শিরোপা জিতেই আবাহনীর মধুর প্রতিশোধ

শিরোপা জয়ের জন্য এর থেকে দারুণ মঞ্চ হয় না! গতবার শেখ জামাল ধানমন্ডির কাছে হেরেই শিরোপা হাতছাড়া হয়েছিল আবাহনীর। সেই শেখ জামালকে হারিয়েই আজ শিরোপা উদ্ধার করল মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের দল। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে (ডিপিএল) এ নিয়ে ২২ বার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করল আবাহনী।

ডিপিএলে ২২তম শিরোপা জিতল আবাহনী

প্রথম রাউন্ডের পর সুপার লিগের ১৫ ম্যাচ শেষে আবাহনী ও শেখ জামালের পয়েন্ট দাঁড়ায় ২৬-এ। আজকের ম্যাচটি ছিল তাই অঘোষিত ফাইনাল। যে জিতবেই সেই চ্যাম্পিয়ন। ‍মিরপুর শেরে বাংলা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচটিতে শেষ হাসি হেসেছে আবাহনী।

এদিন টস হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে সাত উইকেট হারিয়ে ২৮২ রান করে শেখ জামাল ধানমন্ডি। জবাবে চার বল এবং চার উইকেট হাতে রেখে জয়ের বন্দরে পৌঁছায় আবাহনী। ৫৩ বলে ৬০ রান করে ম্যাচ সেরা হয়েছেন আবাহনীর আফিফ হোসেন ধ্রুব।

বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতেই বড় জুটি গড়ে ম্যাচটাকে একপেশে বানিয়ে ফেলছিলেন আবাহনীর আনামুল হক ও মোহাম্মদ নাঈম। ২৬.২ ওভারে ওপেনিং জুটিতে ওঠে ১৪৫ রান। নাঈম আউট হন ৭৯ বলে ৬৮ রান করে। পরের ওভারে ব্যক্তিগত ৭২ রান করে সাজঘরের পথ ধরেন আনামুল। তিন ওভার পর আউট হন মাহমুদুল হাসান জয়ও।

শেখ জামালের তাইবুর রহমান ও আরিফ আহমেদের বোলিংয়ে হঠাৎই কোনঠাসা হয়ে পড়ে আবাহনী। এ সময় তাইবুর তুলে নেন জোড়া উইকেট। অন্যদিকে এক উইকেট নিয়ে রান আটকানোয় বেশি মনোযোগ দেন আরিফ। ম্যাচে প্রথমবার চাপে পড়ে আবাহনী।

এমতাবস্থায় জাকের আলীকে সঙ্গে নিয়ে জুটি গড়েন আফিফ। দলীয় ১৯১ রানের মাথায় ব্যক্তিগত ২১ রান করে জাকের আউট হলে দুঃশ্চিন্তার ভাজ পড়ে আবাহনী সমর্থকদের কপালে। দলের বিপদে একাই হাল ধরেন আফিফ। তাকে কিছুটা সময় সঙ্গ দেন মোসাদ্দেক। যদিও ২২ রানের বেশি করতে পারেননি আবাহনীর অধিনায়ক।

দলীয় ২৫৯ রানের মাথায় মোসাদ্দেক ফিরলে আবারও ম্যাচে ফেরার চেষ্টা করে শেখ জামাল। শেষ দিকে টানটান উত্তেজনাপূর্ণ অবস্থা বিরাজ করে। তবে সব উত্তেজনা থামিয়ে একটি করে ছক্কা ও চার হাঁকিয়ে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন আটে নামা তানজিম হাসান সাকিব। পেস বোলিং অলরাউন্ডার অপরাজিত থাকেন ৭ বলে ১২ রান করে।

এর আগে টস জিতে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন আবাহনীর অধিনায়ক মোসাদ্দেক। তার সিদ্ধান্তকে যথার্থ প্রমাণ করে শুরুতেই শেখ জামালকে চেপে ধরে আবাহনীর বোলাররা। প্রথম ওভারে সাইফ হাসানকে শূন্য রানে ফেরান টুর্নামেন্টে দারুণ বোলিং করা তানভীর ইসলাম।

দলীয় ১৬ রানের মধ্যে তিন উইকেট হারিয়ে বসে ধানমন্ডির ক্লাবটি। এ সময় সৈকত আলী ৮ এবং রবিউল ইসলাম রবি ৫ রান করে সাজঘরে ফেরেন। চাপের মুহূর্তে দলের হাল ধরেন ফজলে মাহমুদ রাব্বি ও তাইবুর রহমান। দুজনের ৮১ রানের জুটিতে ম্যাচে ঘুরে দাঁড়ায় শেখ জামাল। ফজলে মাহমুদ আউট হন ৭০ বলে ৪০ রান করে। তাইবুর করেন ৮৫ বলে ৫৩ রান।

দুজনের ধীর গতির ইনিংসের কারণে ২৬ ওভারে দলীয় শতরানে পৌঁছায় শেখ জামাল। বড় সংগ্রহ দাঁড় করাতে মারমুখী ব্যাটিংয়ের বিপল্প ছিল না। আর সেটাই করে দেখালেন অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান। তার ৭০ বলে ৮৯ রানের ঝোড়ো ইনিংসে বড় সংগ্রহ পায় শেখ জামাল। ইনিংসে চারটি ছক্কার সঙ্গে আটটি বাউন্ডারি হাঁকিয়ে অপরাজিত থাকেন জাতীয় দলের এই ব্যাটার।

নুরুলের সঙ্গে দুটি ছোট্ট ক্যামিও খেলেন জিয়াউর রহমান এবং ভারতের পারভেজ রসুল। জিয়াউর ১৪ বলে তিন ছক্কায় করেন ২৯ রান। ৩৪ বছর বয়সী ভারতীয় অলরাউন্ডার খেলেছেন ৩৭ বলে ৪২ রানের ইনিংস। আবাহনীর হয়ে দুটি করে উইকেট নিয়েছেন তানজিম হাসান সাকিব ও তানভীর। একটি করে উইকেট গেছে খুশদিল শাহ এবং মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিনের পকেটে।