অমুসলিমরা কি আল্লাহ বলতে পারবে, মালয়েশিয়ায় বিতর্ক

অমুসলিমরা ‘আল্লাহ’ শব্দ ব্যবহার করতে পারবে কিনা তা নিয়ে মালয়েশিয়ায় বিতর্ক শুরু হয়েছে। বুধবার (১৭মে) মালয়েশিয়ার মন্ত্রিসভার সাপ্তাহিক বৈঠকে বিষয়টি উত্থাপনের ঘোষণা দিয়েছেন ইউনাইটেড মালয় ন্যাশনাল অর্গানাইজেশন (ইউএমএনও) দলের মন্ত্রীরা। খবর নিউ স্ট্রেইটস টাইমস।

হাইকোর্টের আদেশটি কেবলমাত্র সারাওয়াক প্রদেশের জন্য প্রযোজ্য বলে মন্তব্য করেছেন আনোয়ার ইব্রাহীম

ইউএমএনওর তথ্য সম্পাদক আজালিনা বিনতে ওসমান বলেছেন, খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের আল্লাহ শব্দ ব্যবহারের বিষয়টি মন্ত্রিসভায় আলোচনা করতে হবে। যেহেতু এর সঙ্গে ধর্মীয় সংবেদনশীলতা, ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বিষয় জড়িয়ে আছে, তাই খুব সতর্কভাবে ইস্যুটি দেখতে হবে।

আল্লাহ শব্দ ব্যবহার নিয়ে বিতর্ক মাথাচাড়া দিয়েছে ১৫ বছরের পুরোনো এক মামলার জেরে। ২০০৮ সালের ১১ মে সারাওয়াক প্রদেশের অধিবাসী জিল আয়ারল্যান্ড ইন্দোনেশিয়া থেকে দেশে ফেরার সময় আটটি কমপ্যাক্ট ডিস্ক (সিডি) আনেন, যার কয়েকটির শিরোনামে আল্লাহ শব্দ ছিল। যেমন- ইবাদাহ ইয়াং বেনার দালাম কেরাজান আল্লাহ অর্থাৎ আল্লাহর রাজ্যে সত্যিকার প্রার্থনা।

জিল আয়ারল্যান্ড খ্রিস্ট ধর্মের অনুসারী। তার আনা আটটি সিডিতে ছিল ধর্মতত্ত্ব নিয়ে আলোচনা। মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষ সিডিগুলো জব্দ করে। কারণ হিসেবে মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত আদেশের কথা বলা হয়। ১৯৮৬ সালে এক প্রশাসনিক আদেশে মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অমুসলিমদের জন্য আল্লাহ, ক্বাবা, সালাত ও বায়তুল্লাহ এই শব্দ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়।

জিল তার সিডি জব্দের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ২০ আগস্ট আদালতে পিটিশন দেন। ১৩ বছর পর ওই আবেদনের ওপর সিদ্ধান্তে হাইকোর্ট জিলের পক্ষে রায় দেন। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে মালয়েশিয়া সরকার আপিল করলেও সম্প্রতি তা প্রত্যাহার করে নিয়েছে।

আপিল প্রত্যাহারের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে গতকাল মঙ্গলবার দেশটির প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহীম বলেছেন, হাইকোর্ট সারাওয়াক প্রদেশের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় রায় দিয়েছেন। সারাওয়াকের মানুষ মালয়েশিয়া ফেডারেশন গঠনের আগে থেকে মালয় ও ইন্দোনেশীয় ভাষায় ধর্মচর্চা ও ধর্মীয় আলোচনার অধিকার ভোগ করতেন। যেহেতু সারাওয়াকের বাইরে এ বিধান প্রযোজ্য নয়, তাই আপিল উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে।

আনোয়ার ইব্রাহীমের ব্যাখ্যা ভুল দাবি করে মালয়েশিয়ার সংবিধান বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ হানিফ খাতরি আবদুল্লাহ গতকাল এক ভিডিও বক্তৃতায় বলেছেন, ১৯৬৩ সালের আগে থেকে সাবাহ ও সারাওয়াকের খ্রিস্টান অধিবাসীরা মালয় ও ইন্দোনেশীয় ভাষায় ধর্মচর্চা ও ধর্মীয় আলোচনা করতেন। এ দুটি ভাষায় সৃষ্টিকর্তা বুঝাতে আল্লাহ শব্দ ব্যবহার হয়। তবে আদালতের রায়ে কোথাও বলা হয়নি যে, কেবলমাত্র সারাওয়াকের জন্য এ সিদ্ধান্ত প্রযোজ্য হবে।

বিতর্কে যোগ দিয়ে সারাওয়াকের আইনসভা সদস্য ও সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বারু বিয়ান আজ এক বিবৃতিতে বলেছেন, আল্লাহ শব্দ ব্যবহারের অধিকার কেবল সারাওয়াক প্রদেশে সীমাবদ্ধ নয়, সর্বত্র প্রযোজ্য। প্রধানমন্ত্রী আপিল উঠিয়ে নেওয়ার ব্যাখ্যায় যে বক্তব্য দিয়েছেন বলে খবরে এসেছে, তা সত্য হলে দুঃখজনক।

বিষয়টি নতুন করে আদালতে নেওয়ার আভাস দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে তথ্য বিষয়ক মন্ত্রী আজালিনা ওসমান বলেছেন, আইনশাস্ত্রের বাইরে অন্যান্য বিচারে বিবেচনার পাশাপাশি বিষয়টি ফেডারেল আদালতে উত্থাপনের মাধ্যমে একটি জোরালো আইনি ব্যাখ্যাও বের করে আনতে হবে। ইউএমএনও সবসময় রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের সুরক্ষার জন্য লড়াই করবে এবং সংবিধানে উল্লিখিত ধর্মীয় স্বাধীনতার নীতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবে।