বাংলাদেশের সঙ্গে অভিবাসন চুক্তি চায় ইতালি

অভিবাসন নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করতে চায় ইতালি। বিশেষত নিয়মিত অভিবাসন উৎসাহিত করতে ও অনিয়মিত অভিবাসন রোধে একটি সমঝোতা স্মারক সই করতে দেশটি আলোচনা চালাচ্ছে। বাংলাদেশে নিযুক্ত ইতালির রাষ্ট্রদূত এনরিকো নুনজিয়েতা ইউএনবির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে এ কথা জানিয়েছেন।

বাংলাদেশে নিযুক্ত ইতালির রাষ্ট্রদূত এনরিকো নুনজিয়েতা

এনরিকো নুনজিয়েতা বলেন, আমরা অভিবাসন ইস্যুগুলোতে সহযোগিতা আরও এগিয়ে নিতে চাই। বিশেষত, অভিবাসনের বিদ্যমান আইনি পথগুলো আমরা বড় করতে চাই এবং অনিয়মিত অভিবাসন প্রবাহ রোধ করতে চাই। অনিয়মিত অভিবাসন ও মানব পাচারের মতো তৎপরতা প্রতিরোধ ও মোকাবেলা করতে দুই দেশের সহযোগিতা গভীরতর করতে হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

ইতালির রাষ্ট্রদূত ২০২০ সালে তার দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরকালে বাংলাদেশকে দেওয়া সুবিধার কথা জানিয়ে বলেন, যেসব দেশের নাগরিকরা ইতালিতে শ্রম কোটার সুযোগ পেতে পারে, সে তালিকায় আমরা বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্ত করেছি।

তিনি বলেন, ২০২১-২০২২ থেকে আমরা ১২ হাজারের বেশি ওয়ার্ক ভিসা ইস্যু করেছি। এর বাইরে পরিবারের পুনরেকত্রীকরণ, ব্যবসা ও অন্যান্য প্রয়োজনে বহু বাংলাদেশি ভিসা পেয়েছেন। তবে এখন আমরা কাজের প্রতি জোর দিচ্ছি। যারা কাজের জন্য যাচ্ছেন, তারা পরে নিজেদের পরিবারও নিয়ে যাবেন। এভাবে ধারাটি চলমান থাকবে।

রাষ্ট্রদূত বলেন, অনিয়মিত অভিবাসন রোধ করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই রোধ করা বলতে অনিয়মিত অভিবাসনের ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি ও প্রচারণা চালানোকেও বুঝায়। আমরা বৈধ অভিবাসনের নতুন পথ খুলে দিচ্ছি। আপনাদেরকে এসব নতুন চুক্তি, নতুন সম্ভাবনার সুযোগ নিতে হবে এবং নতুন পথে যাবার চেষ্টা করতে হবে।

সমঝোতা স্মারকের খসড়ায় দুই দেশের পুলিশ বাহিনীর মধ্যে সমন্বয়ের প্রস্তাব রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা জোরদার সহযোগিতা চাই। আমরা সেরা চর্চার বিনিময় চাই। সেরা প্রশিক্ষণ বিনিময় করতে চাই। উভয় দেশের পুলিশ বাহিনী যাতে পরস্পরকে ভালো বুঝতে পারে, সেজন্য আলোচনা বাড়াতে চাই।

তিনি বলেন, ইতালি ও বাংলাদেশের সম্পর্ক দারুণ। নির্দিষ্ট কিছু সেক্টরে দুই দেশের সমন্বয় বৃদ্ধির সুযোগ রয়েছে। সম্পর্কটা নিখাদ এবং সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই সম্পর্ক নিজের শক্তি দেখিয়েছে। ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে দুই দেশের বাণিজ্য ৫৩ শতাংশ বেড়েছে বলেও তিনি জানান।

এনরিকো নুনজিয়েতা বলেন, সামরিক সহযোগিতা আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ খাত। এ খাতে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা এবং পারস্পরিক লাভালাভের ভিত্তিতে জ্ঞান ও জানাশোনা স্থানান্তরের সুযোগ রয়েছে। সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানের একটি সমঝোতা স্মারকেও খসড়াও চূড়ান্ত হবার পথে।

তিনি বলেন, ইতালি আগে থেকে বস্ত্র ও তৈরি পোশাক খাতে বিনিয়োগ করেছে। তবে আমরা ট্যানারি খাতে বিশেষজ্ঞ সহায়তা দিতে চাই। বিশেষত টেকসই ট্যানারি শিল্প গড়ে তুলতে এবং চামড়া প্রক্রিয়াকরণ উন্নত করতে সহায়তা করতে চাই, যাতে সেগুলো ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে রপ্তানির উপযোগী হয়।

তিনি আরও বলেন, জ্ঞান ও প্রযুক্তি স্থানান্তরের মাধ্যমে আমরা নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ডের জন্য নৌযান নির্মাণ শিল্প গড়তে সহযোগিতা করতে আগ্রহী। বাংলাদেশ এখনও জাহাজ নির্মাণ শিল্পের যে স্তরে পৌঁছতে পারেনি, আমরা সেক্ষেত্রে একসঙ্গে কাজ করতে পারি।

বাংলাদেশের ইন্দো-প্যাসিফিক ভিশনকে স্বাগত জানিয়ে ইতালির রাষ্ট্রদূত বলেন, এটা অত্যন্ত ইতিবাচক যে বাংলাদেশ তার নিজস্ব ইন্দো-প্যাসিফিক ভিশন প্রকাশ করেছে, যা অনেকখানিই ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে সহযোগিতার ব্যাপারে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রূপরেখার সঙ্গে মিলে যায়।

নির্বাচনকে সামনে রেখে জুলাই মাসে ইইউ যে অনুসন্ধানী মিশন পাঠাচ্ছে, জোটের সদস্য হিসেবে ইতালি তাকে সমর্থন করছে বলে রাষ্ট্রদূত জানান। তিনি বলেন, আমরা আশা করছি নির্বাচনে ইইউ পর্যবেক্ষক মিশন পাঠাবে। বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন ইইউ থেকে অনুসন্ধানী মিশনকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে, এটা যথেষ্ট ইতিবাচক।

এছাড়া তিনি দুই দেশের মধ্যে জ্বালানি ও মিডিয়া সহযোগিতার বিষয়েও আশাবাদ প্রকাশ করেন। বাংলাদেশকে এলএনজি সরবরাহের বিষয়ে ইতালি দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করতে চায় বলেও তিনি জানান। একইভাবে, মিডিয়া অঙ্গনে ইতালির বার্তা সংস্থা এএনএসএর সঙ্গে ইউএনবির সহযোগিতার কথাও তিনি উল্লেখ করেন।