জেসন গিলেস্পিকে লং অনের ওপর দিয়ে ছক্কা হাঁকিয়ে জয় প্রায় নিশ্চিত করেন আফতাব আহমেদ। পয়েন্ট দাঁড়িয়ে বলটি উড়ে যেতে দেখলেন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক রিকিং পন্টিং। সেই দৃশ্যটা আজও বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে গেঁথে আছে। সানগ্লাসের আড়ালে পন্টিংয়ের অভিব্যক্তি হয়ত পুরোপুরি বোঝা যায়নি। তবে কার্ডিফের ব্যালকনিতে দাঁড়ানো বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটারদের উল্লাস ছিল দেখার মতোই।

mohammad ashraful celebrates 2005ঐতিহাসিক সেঞ্চুরির পর মোহাম্মদ আশরাফুল

সেদিন কার্ডিফের সেই উল্লাস ছড়িয়ে পড়েছিল বাংলাদেশের অলিতে-গোলিতে। কী উৎসবেই না মেতেছিল বাংলাদেশ! যে উৎসব একদিনের হলেও স্মৃতিটা এখনও তরতাজা। অপ্রতিরোধ্য অস্ট্রেলিয়াকে যে হারিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ! ২০০৫ সালের এই দিনে মোহাম্মদ আশরাফুলের অনবদ্য সেঞ্চুরির সুবাদে অজিদের মাটিতে নামায় বাংলাদেশ। সেই কার্ডিফ রূপকথার আজ ১৮ বছর।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নবাগত এক দল তখন বাংলাদেশ। বিপরীতে ১৯৯৯ এবং ২০০৩ সালে টানা দুটি ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতা দল অস্ট্রেলিয়া। ২০০৭ সালেও বিশ্বকাপ জিতেছে অস্ট্রেলিয়া। টানা তিনটি বিশ্বকাপ জেতা ওই দলটিকে বলা হতো অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা দল।

mohammad rafique celebrates the winজয়ের পর মোহাম্মদ রফিকের উল্লাস

কী ছিল না সেই দলে। ১১ জন মাঠে নামলে সেই ১১ জনই ছিল তারকা। তারকার চেয়ে মহাতারকা বললেও বোধহয় ভুল হবে না। ম্যাথু হেইডেন, অ্যাডাম গিলক্রিস্ট, ড্যামিয়েন মার্টিন, রিকি পন্টিং, মাইকেল ক্লার্ক, মাইক হাসি, গ্লেন ম্যাকগ্রাদের মতো ক্রিকেটারদের নিয়ে গড়া হতো তখনকার অজি একাদশ। অন্যদিকে বাংলাদেশ দলে মাশরাফি বিন মর্তুজা, মোহাম্মদ আশরাফুল, আফতাব আহমেদ ও নাফিস ইকবালরা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে হাঁটি হাঁটি পায়ে কেবল চলা শুরু করেছেন। সেই তারাই কিনা হারিয়ে দিলো বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়াকে!

ইংল্যান্ডে আয়োজিত তিনজাতি টুর্নামেন্টে অস্ট্রেলিয়া ও স্বাগতিক ইংল্যান্ডের সঙ্গে বাংলাদেশের থাকাটা তখন বিরাট অর্জন বলেই মনে করা হতো। ন্যাটওয়েস্ট সিরিজটিকে স্মৃতির পাতায় সোনা দিয়ে মুড়িয়ে রাখলেন মাশরাফি, আশরাফুল, আফতাবরা।

ত্রিদেশীয় সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ। টস জিতে আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন পন্টিং। প্রথম ওভারের দ্বিতীয় বলেই গিলক্রিস্টকে ব্যক্তিগত শূন্য রানে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন মাশরাফি। তিন নম্বরে নামা পন্টিংকে এক রানে আউট করেন তাপস বৈশ্য। ৯ রানে ২ উইকেট হারায় অস্ট্রেলিয়া। শেষপর্যন্ত মার্টিনের ৭৭ ও ক্লার্কের ৫৪ রানের ওপর দাঁড়িয়ে স্কোরবোর্ডে ৫ উইকেটে ২৪৯ রান জমা করে অস্ট্রেলিয়া।

ricky ponting looks on during the presentationম্যাচ শেষে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে রিকি পন্টিং

লক্ষ্যটা ২৫০ হলেও অজি বোলিং লাইন আপের বিপক্ষে তখনকার হিসেবে বাংলাদেশের জন্য পাহাড়সম ছিল। ৭২ রানের মধ্যে ৩ উইকেট হারিয়ে প্রত্যাশিত ফলাফলের দিকে এগোচ্ছিল বাংলাদেশ। মানে হারটা তখন মনে হচ্ছিল স্বাভাবিক। কিন্তু চতুর্থ উইকেট ম্যাচ ঘুরিয়ে দেন অধিনায়ক হাবিবুল বাশার সুমন ও মোহাম্মদ আশরাফুল। এই জুটিতে ওঠে ১৩০ রান। সেখান থেকেই টাইগার সমর্থকদের জয়ের স্বপ্ন দেখা শুরু।

ব্যক্তিগত ৪৭ রানের মাথায় বাশার রান আউট হলে ম্যাচে ফিরে আসে অস্ট্রেলিয়া। জয় থেকে তখন ৪৮ রান দূরে বাংলাদেশ। ক্রিজে আশার আলো হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন আশরাফুল। তার দিকে তাকিয়ে ১৪ কোটি বাঙ্গালি। পারবেন কি আশারফুল। এমন কিছুই হয়ত জপেছিলেন তারা। শেষপর্যন্ত ১০০ বলে নিজের শতরান পূর্ণ করেন বাংলাদেশি লিটল মাস্টার।

পরিস্থিতি আর প্রতিপক্ষ বিবেচনায় আশরাফুলের সেঞ্চুরিটি বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসেরে সেরা সেঞ্চুরির তালিকায় সবার ওপরে থাকবে। শতক হাকানোর পরের বলেই গিলেস্পির বলে ক্যাচ তুলে দেন বাংলাদেশের ক্রিকেটের প্রথম সুপারস্টার।

aftab ahmed after win 2005ম্যাচ জয়ের পর আফতাব আহমেদের উল্লাস

জিততে হলে ১৭ বলে ২৩ রান করতে হবে বাংলাদেশকে। হাতে পাঁচ উইকেট। সমীকরণটা মোটেও সহজ ছিল না প্রেক্ষাপট বিবেচনায়। মোহাম্মদ রফিককে নিয়ে আফতাব আহমেদ অবশ্য বাকি পথ পাড়ি দেন। শেষ দুই ওভারে জয়ের সমীকরণ নেমে আসে ১৩ রানে। ম্যাকগ্রার করা ৪৯তম ওভার থেকে বাংলাদেশ তোলে ৬ রান। জিততে হলে শেষ ওভারে করতে হবে ৭ রান।

শেষ ওভার করতে আসেন তখনকার সময়ের অন্যতম সেরা পেসার গিলেস্পি। তার করা প্রথম বলটাই লং অন দিয়ে উড়িয়ে মারলেন আফতাব। স্কোরলাইন তখন সমান সমান। পরাজয় এড়ানো গেছে। পাঁচ বলে এক রানের সমীকরণ নিয়ে আর বোধহয় ভাবেনি কেউ।বাংলাদেশ দলেরও ড্রেসিংরুমে উদযাপনও ছিল জয়ের মতোই। জয়সূচক রানটা নিয়েই আফতাব আর রফিকের সেই বুনো উল্লাস, তাদের সঙ্গে দৌড়ে এসে যোগ দিয়েছেন বাকি ক্রিকেটাররা। যা বাংলাদেশ ক্রিকেটের বড় একটা বিজ্ঞাপন হয়ে আছে এখনও।

বাংলাদেশের সেই জয়ের পর বিশ্ব মিডিয়ায় শিরোনাম হয়েছিল অঘটন হিসেবে। তা অঘটন হোক আর যাই হোক, মহাপরাক্রমশালী অস্ট্রেলিয়াকে হারানোর স্মৃতি হয়ত কোনোদিন পুরোনো হবে না।

Stay on top of the latest sports news, including cricket and football, from around the world. Get comprehensive coverage of matches, tournaments, and leagues— along with expert analysis and commentary from our team of sports journalists. Whether you're a die-hard fan or a casual observer, you'll find everything you need to know about your favorite sports here.

Sports, cricket, and football are popular topics in the world of sports. Cricket is a bat-and-ball game played between two teams of eleven players and is particularly popular in South Asian countries. Football, also known as soccer, is a team sport played with a spherical ball between two teams of eleven players and is widely popular worldwide. Sports enthusiasts follow the latest news, matches, tournaments, and leagues in these sports and analyze and comment on the performances of players and teams.