চিনির দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছিলেন মিল মালিকরা। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে ঈদের পর। সে কথা মেনেও নিয়েছিলেন মিল মালিক সমিতি। কিন্তু বাজারে দেখা গেল ভিন্ন চিত্র। পাইকারী ও খুচরা উভয় বাজারেই ২০ টাকার বেশি বেড়ে গেছে প্রতি কেজি চিনির দাম। ফলে ভোক্তাদের কাছে ক্রমেই তিতা হয়ে উঠছে চিনি নামের এ মিষ্টি পণ্যটি।

sugar 2চিনি

গত রোববার চিনি উৎপাদনকারী মিলমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন প্রতি কেজি চিনির দাম ২৫ টাকা করে বাড়িয়ে খোলা চিনি ১৪০ ও প্যাকেটজাত চিনি ১৫০ টাকা করার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়। সে চিঠিতে বলা হয়েছিল, ২২ জুন বৃহস্পতিবার থেকে তারা এ মূল্যবৃদ্ধি কার্যকর করতে চায়।

কিন্তু তাদের এ চিঠির খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাজারের চিনি উধাও হয়ে যায়। কোথাও কোথাও পাওয়া গেলেও ১০-১৫ টাকা যুক্ত করে সেই পুরোনো চিনি কিনতে হয়। মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত প্রতিকেজি চিনি কিনতে খরচ করতে হয়েছে ১৪৫-১৫০ টাকা। সন্ধ্যার পর চিনির কেজিতে যুক্ত হয় আরও ৫ টাকা। মহাখালী ও মগবাজারের বেশিকিছু দোকানে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে দোকানীরা ১৫৫ টাকার নিচে চিনি বিক্রি করছেন না।

carring sugarচিনির বস্তা বহন করছেন একজন শ্রমিক

অথচ মিলমালিকদের চিঠির প্রেক্ষিতে গতকাল মঙ্গলবার সমিতির সদস্যদের সঙ্গে বৈঠকে বসে বিটিটিসি। সংস্থাটির চেয়ারম্যান মো. ফয়জুল ইসলাম এতে সভাপতিত্ব করেন। সে বৈঠকে চিনির দাম ঈদের আগে আপাতত না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছিল। ঈদের পরে এ নিয়ে আবারও বৈঠক হবে। সে সময় দাম সমন্বয়ের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। মিলমালিকেরা বিটিটিসির এ সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছিল। কিন্তু বৈঠকের কথা আর বাজারে দেখা গেছে বিশাল তফাৎ। সরকারের আগের দেওয়া দর অব্যাহত থাকলে খোলা চিনির দাম এখন সর্বোচ্চ ১২৫-১৩০ টাকা হওয়ার কথা।

এ বিষয়ে চিনির পাইকারেরা বলেন, চিনি নিয়ে এই কারসাজি চলছে গত কয়েক মাস ধরেই। দাম বাড়ার সম্ভাবনা থাকলেই মিল বা কোম্পানি থেকে আর চিনি পাওয়া যায় না। বাজারে হাহাকার পড়ে গেলে মিলগুলো জানায়, তাদের হাতে চিনি নেই। কিন্তু সরকার তাদের দাম বাড়ানোর দাবি মেনে নিলে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বাজারে নতুন দামে চিনির বিশাল চালান চলে আসছে। এখন তা-ই হচ্ছে। ঈদ-পূর্ব সময়ে চিনির চাহিদা বেশি থাকায় মিলমালিকরা একে দাম বাড়ানোর সুযোগ বলে মনে করছেন। সরকারের সঙ্গে বৈঠকের পরও দাম যেহেতু বাড়েনি, তাই বাজারের চিনিও অদৃশ্য হয়ে গেছে। এখন সামান্য যা কিছু পাওয়া যাচ্ছে, তা এক হিসেবে মিল মালিকদের প্রস্তাবিত দরেই বিক্রি হচ্ছে।

জানা গেছে, পাইকারী বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জেও চিনির দাম বেড়ে গেছে একদিনেই। ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে প্রতি বস্তা চিনির দাম বেড়েছে ২৫০ টাকা। এর জেরে পাড়া-মহল্লার খুচরা দোকান থেকে চিনি কিনতে গ্রাহকদের পকেট থেকে বাড়তি খসছে ২০-২৫ টাকা পর্যন্ত।

কারওয়ান বাজারের এক চিনির পাইকার বলেন, ১০-১৫ দিন আগেও ৫০ কেজির যে চিনির বস্তা বিক্রি করেছি ৬ হাজার থেকে ৬ হাজার ২০০ টাকায়, গত সপ্তাহে তা ৬০০-৭০০ টাকা বেড়ে যায়। কিন্তু তাতেও চাহিদা মতো চিনি পাওয়া যাচ্ছে না। আমার প্রতিদিন ৪০-৫০ বস্তা চিনির দরকার হয়। কিন্তু পাচ্ছিলাম পাঁচ-ছয় বস্তা করে। গত তিনদিন ধরে তা-ও পাচ্ছি না।

অন্যদিকে খুচরা ব্যবসায়ীরা বলেন, আমাদের এক কেজি চিনি কিনতে হচ্ছে ১৩৫-১৪০ টাকায়। ফলে বাধ্য হয়েই আমাদের ১৫০-১৫৫ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে।

এদিকে চিনির এমন অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে ক্ষুব্ধ ভোক্তারা। সরকারের বাজার তদারকির অভাব ও ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটকেই তারা এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী করেছেন।

এক ভোক্তা বলছেন, গত মাসে খোলা চিনি কিনেছি ১২০ টাকা কেজি দরে। কয়েকদিন আগেই সেই চিনি কিনলাম ১৩৫ টাকা দরে। এখন সেটাই আরও বেড়ে গিয়ে পৌঁছেছে ১৫০ টাকায়। চিনির দাম যেভাবে বাড়ছে, তাতে চিনি আর মিষ্টি থাকছে না, পুরো তিতা হয়ে যাচ্ছে।

এমন অবস্থায় ভোক্তাদের দাবি, সরকারের উচিত ভোক্তাদের স্বার্থে টিসিবির মাধ্যমে চিনি আমদানি করে ভর্তুকি মূল্যে তা সরবরাহ করা। নইলে ব্যবসায়ীদের এই সিন্ডিকেট ভাঙা সহজ হবে না।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.