বাংলাদেশের বিপক্ষে চলমান সিরিজের আগে নিউজিল্যান্ডের ব্যাটসম্যান নিল ব্রুম সর্বশেষে আন্তর্জাতিক ওয়ানডে খেলেছিলেন ছয় বছর আগে। স্পিনার জিতান প্যাটেল আজকের ম্যাচে মাঠে নামার আগে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছিলেন সাত বছর আগে। তারপরও তাদের উপর ভরসা করেছে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট। কিন্তু বাংলাদেশ ভরসা পায় না নাসির- রাজ্জাকদের উপর!
789101213ক্রিকেট খেলাটাই এমন যে, এখানে প্রতিভা বা সামর্থ্যের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো অভিজ্ঞতা। কিন্তু বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড যেনো এই চিন্তাটা করতেই পারে না। বাংলাদেশে বয়স ৩০ হলেই বাদ। বাদ তো বাদ, তাদের আর খোঁজ খবরই নেয়া হয় না।
আব্দুর রাজ্জাক বাংলাদেশের হয়ে প্রথম আন্তর্জাতিক ২০০ উইকেট নেয়া বোলার। বলা যায় বাংলাদেশের কিংবদন্তী স্পিনার তিনি। হঠাৎ ফর্ম হারিয়ে ফেললেন, বিসিবিও তাকে ফেলে দিলো বাতিলের খাতায়। সেই ‘বাতিল’ রাজ্জাকই চলমান জাতীয় লিগের সর্বশেষ রাউন্ডে দুই ইনিংসে নিয়েছেন সাত উইকেট। এর মধ্যে এক ইনিংসে পাঁচটি। যা প্রথম শ্রেনির ক্রিকেটে তার ২৬তম পাঁচ-উইকেট! কিন্তু বয়স হয়ে গেছে ৩৪, বিসিবিরও তাই তাকে আর পছন্দ নয়!
শাহরিয়ার নাফীস দারুণভাবে বিপিএল শুরু করলেন। দুঃখজনকভাবে অবশ্য শুরুটা ধরে রাখতে পারেননি তিনি। কিন্তু জাতীয় দলের প্রাথমিক স্কোয়াডেও জায়গা হলো না একেবারে নতুন আনকোড়া তরুণরা জায়গা পেলেও নাফীস হয়ে থাকলেন অচ্ছুৎ। অথচ সর্বশেষ এক বছরে ২১টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচে তার সেঞ্চুরি তিনটি (১৬৮, ১৭৪* ও ১০১*), হাফ সেঞ্চুরি সাতটি। তারপরও বিসিবির তাকে পছন্দ হয় না। বয়স যে ৩১ বছর!
চলতি জাতীয় লিগে পরপর দুই ম্যাচে সেঞ্চুরি করেছেন তুষার ইমরান। তুষারের প্রথম শ্রেণির সেঞ্চুরি এখন মোট ১৯টি। যা একটি জাতীয় রেকর্ড। তারপরও তুষার ইমরান নির্বাচকদের সুদূরতম চিন্তায়ও এখন থাকেন না। ৪১টি ওয়ানডে এবং মাত্র পাঁচটি টেস্ট খেলা এই ব্যাটসম্যান প্রতি বছরই ঘরোয়া ক্রিকেটের সেরা ব্যাটসম্যানদের তালিকায় থাকেন। কিন্তু বয়স যে তার ৩৩!
রকিবুল হাসান প্রথম শ্রেনির ক্রিকেটে বাংলাদেশের একমাত্র ট্রিপল সেঞ্চুরিয়ান। জাতীয় লিগের সর্বশেষ রাউন্ডেও করেছেন সেঞ্চুরি। এর আগে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে করেছেন সবচেয়ে বেশি রান। ১৬ ম্যাচে এক সেঞ্চুরি এবং পাঁচ হাফ সেঞ্চুরি এসেছে তার ব্যাট থেকে। তারপরও কোন এক অজ্ঞাত কারণে তাকে বিবেচনাই করছেন না নির্বাচকরা। অথচ তার বয়স এখনো ৩০ ছোঁয়নি। এতো পারফর্ম করেও যদি জাতীয় দলের দরজা না খোলে, তবে ক্রিকেটাররা করবেন কী? নাকি পারফর্ম ছাড়াও অন্য কোনো মানদণ্ড আছে, যার কারণেই পেরে উঠছেন না তারা?
জাতীয় লিগের সর্বশেষ রাউন্ডে ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন নাসির হোসেন। কোনো এক অজ্ঞাত কারণে তাকেও বিবেচনা করেন না নির্বাচকরা। আল আমিন হোসেনের মতো অভিজ্ঞ পেসারকেও বিবেচনা করার সুযোগ নেই নির্বাচকদের। অথচ ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম টাইম অব ইন্ডিয়া আল আমিনকে মনে করে ২০১৬ সালের পেসারদের একজন। নাসির আল আমিন দূরে থাক, পনেরজনের স্কোয়াডে থাকার পরও মূল একাদশের জন্য বিবেচিত হন না রুবেল হোসেন ও মুমিনুল হকরা।
অভিজ্ঞদের মূল্য না দিলেও একের পর এক ‘কচিকাঁচাকে’ ঠিকই জাতীয় দলে নিয়ে আসেন নির্বাচকমণ্ডলী। ‘সর্বময়’ ক্ষমতার অধিকারী কোচও যাকে মনে ধরে, তাকেই জাতীয় দলের ক্যাপ দিয়ে দেন।
নাসির- রাজ্জাক- নাফীসরা অভিজ্ঞতার ভারে দল থেকে বাদই পড়ে যান, পক্ষান্তরে নিল ব্রুম আর জিতান প্যাটেলরা আবার ফিরে আসেন দলে। কী অদ্ভুত উল্টো পথে হাঁটছে বাংলাদেশ! অভিজ্ঞদের এই রকম অবহেলার ফল আসলে কী হবে? কেউ কি তা জানে!