কাবার গিলাফের নকশায় এক বাংলাদেশির ছোঁয়া

হিজরি বর্ষ শুরুর প্রাক্কালে নতুন গিলাফে সেজেছে পবিত্র কাবা শরিফ। মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) রাতে পুরাতন গিলাফ খুলে লাগানো হয় নতুন গিলাফ। কালো কাপড়ে সোনালি হরফে লেখা এ গিলাফ আগামী এক বছর কাবা শরিফের শোভা বর্ধন করবে। কাবার এই গিলাফ তৈরিতে অংশ নিয়েছেন সৌভাগ্যবান এক বাংলাদেশি যুবকও। শায়খ মুখতার আলম নামের এই যুবক ২০ বছরের বেশি সময় ধরে কাবার গিলাফ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত আছেন।

শায়খ মুখতার আলম

রাসুলুল্লাহর (স.) যুগে কাবায় গিলাফ পরানো হতো না। পরবর্তী সময়ে কাবায় গিলাফ পরানোর প্রচলন শুরু হয়। আনুষ্ঠানিকতা ও নিয়ম করে গিলাফ ব্যবহারের প্রচলন শুরু হয় সৌদি বাদশাহ আবদুল আজিজ আল-সৌদের সময় থেকে। তিনিই গিলাফ তৈরির জন্য স্বতন্ত্র কারখানা তৈরির নির্দেশ দেন।

বিশেষায়িত এ গিলাফে উন্নতমানের কাপড়ে রেশমের সুতায় লিখিত থাকে কোরআনের অনেকগুলো আয়াত। আরবি লিখনশৈলী সুলুস পদ্ধতিতে কোরআনের এসব আয়াত নকশা করা হয়। বাংলাদেশি শায়খ মুখতার আলম এ পদ্ধতিতেই গিলাফের চারপাশে কোরআনের আয়াতগুলোর ক্যালিগ্রাফি করেন। চার দশকের বেশি সময় ধরে ক্যালিগ্রাফির চর্চা করা মুখতার আলম দুই দশক ধরে কাবার গিলাফ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান কিং আবদুল আজিজ কমপ্লেক্স ফর ম্যানুফ্যাকচারিং দ্য কাবাস কিসওয়াহতে কাজ করছেন।

কিসওয়ার অনিন্দ্য সুন্দর ক্যালিগ্রাফি

২০২১ সালের ১১ নভেম্বর মুখতার আলম সৌদি আরবের নাগরিকত্ব লাভ করেন। বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজের এক রাজকীয় নির্দেশনায় সে সময় বিভিন্ন পেশায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা বিদেশি কর্মীদের নাগরিকত্ব দেওয়া হয়।

১৯৬২ সালে চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার রশীদের ঘোনা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন মুখতার আলম। মাত্র পাঁচ বছয়সে ১৯৬৭ সালে বাবার কর্মস্থলের সূত্রে তিনি সৌদি আরব চলে যান। শৈশবের পুরোটা সময় তিনি পার করেন পবিত্র মসজিদুল হারামে এবং সেখানেই কোরআনের হাফেজ হন। এরপর মক্কার বিখ্যাত উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিল্পকলা বিষয়ে স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি ডিগ্রি নেন মুখতার আলম। এক পর্যায়ে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি শিক্ষকতাও করেন। শুধু তাই নয়, আরবি লিখনশৈলী নিয়ে তার লেখা বই সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমে যুক্ত হয়েছে। সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে তার ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শিত ও প্রশংসিত হয়েছে।