এক প্রকল্পে অসংলগ্ন বহু ব্যয়, গাড়ি ছাড়াই তেল খরচ ৮ কোটি!

সম্প্রতি পাঁচ বছরের একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে মৎস্য অধিদপ্তর। প্রস্তাবিত প্রকল্পটি পর্যালোচনার জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। ‘বিদ্যমান সরকারি মৎস খামার ও বাঁওড়সমূহের সক্ষমতা ও মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে অবকাঠামো উন্নয়ন’ নামে এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৪০৮ কোটি টাকা।

সম্প্রতি পাঁচ বছরের একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে মৎস্য অধিদপ্তর

একটি গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেই প্রকল্পে কোনো গাড়ি কেনা হচ্ছে না। তবে গাড়ির তেল-মবিল বাবদ চাওয়া হয়েছে আট কোটি টাকা। এছাড়া প্রকল্পের জন্য একটি গাড়ি ভাড়া নেওয়া হবে। যার ভাড়া, চালক ও তেল খরচ বাবদ ব্যয় ধরা হয়েছে কোটি টাকার বেশি।

এছাড়া প্রকল্পের ১০০ জন বিদেশ ভ্রমণ করবেন, এর জন্য সাত কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। এগুলো ছাড়াও প্রকল্পের অনেক খাতে অসংলগ্ন ব্যয় ধরা হয়েছে।

সরকারি অর্থায়নে প্রকল্পটি ২০২৭ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানিয়েছে মৎস্য অধিদপ্তর।

প্রকল্পটি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের এডিপির অননুমোদিত প্রকল্পের তালিকায় উচ্চ-অগ্রাধিকার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত আছে।

প্রকল্পের ব্যয়ে দেখানো হয়েছে, প্রকল্পের কাজে দেশের মধ্যে ভ্রমণে ব্যয় হবে ৫ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। অফিস, সভা ও আপ্যায়নে ব্যয় হবে ১ কোটি টাকা, ১২৪টি কর্মশালায় খরচ হবে ৩ কোটি ৫৭ লাখ টাকা, সীমানা প্রাচীর নির্মাণ ও সংস্কারে ব্যয় হবে ৭৬ কোটি টাকা। সৌরবিদ্যুতের জন্য চাওয়া হয়েছে ৪২ কোটি টাকা। খামারের ইন্টারনাল রোড নির্মাণে ব্যয় হবে সাড়ে ৪৬ কোটি টাকা, বাঁওড় পুনঃখননে খরচ হবে ১২৭ কোটি টাকা, ভবন নির্মাণে ব্যয় হবে ২৫১ কোটি টাকা। অনাবাসিক ভবন মেরামতে চাওয়া হয়েছে ৩২ কোটি টাকা। মোটরযান মেরামতে খরচ ধরা হয়েছে সাড়ে ৪ কোটি টাকা এবং মেলায় অংশগ্রহণের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ কোটি টাকা।

এছাড়া ১টি গাড়ি ভাড়া ও এর চালক ও তেল বাবদ খরচ দেখানো হয়েছে ১ কোটি আট লাখ টাকা। পাঁচ হাজার ৪৪০ জনের অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণে ব্যয় হবে ১৫ কোটি টাকা। পেট্রোল ও লুব্রিকেন্ট কেনায় খরচ হবে ৮ কোটি টাকা। গ্যাস ও জ্বালানি খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫০ লাখ টাকা। এছাড়া ৫৬টি প্রদর্শনী খামার পরিচালনায় ব্যয় ধরা হয়েছে ১১ কোটি ৫১ লাখ টাকা, মাছের কৌলিতাত্ত্বিক উন্নয়ন ও অন্যান্য ব্যবস্থাপনায় খরচ ১ কোটি ৫৪ লাখ টাকা এবং পরামর্শকের জন্য ধরা হয়েছে ৭ কোটি ৪৫ লাখ টাকা।

প্রকল্পে ১টি গাড়ির ভাড়া, চালক ও তেল বাবদ ১ কোটি ৮ লাখ টাকার বিষয়ে জানতে চাইলে মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মাহবুবুল হক বলেন, এই প্রকল্পে সম্ভবত কোনো গাড়ি কেনা হবে না। তাই একটা গাড়ি ভাড়া নেওয়া হবে।

পেট্রোল ও লুব্রিকেন্ট কেনায় ৮ কোটি টাকা খরচের বিষয়ে মহাপরিচালক বলেন, এ খাতে শুধু মবিল ও লুব্রিকেন্ট থাকলেও বাস্তবে মবিল ও অয়েল কেনা হবে। মাঠপর্যায়ের যারা কাজ করবেন তারা তো মোটরসাইকেল ব্যবহার করবেন। তাদের ফুয়েল লাগবে। আর জেলা ও উপজেলায় আমাদের যে গাড়িগুলো আছে সেগুলোর জন্য এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এটা সব প্রকল্পেই থাকে।

বিদেশ ভ্রমণের বিষয়ে তিনি বলেন, টেকনোলজির জন্য প্রকল্পে বিদেশ ভ্রমণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। কারণ বিদেশ থেকে প্রযুক্তি না আনলে তো আমাদের হবে না। তবে, সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সরকারি অর্থায়নে আপাতত বিদেশ ভ্রমণ বন্ধ আছে। সরকার এই খরচ না দিলে অন্য কোথাও থেকে এটা ম্যানেজ করতে হবে। যেমন- জাইকাকে আমরা অনুরোধ করতে পারি।

প্রবল্পের এসব ব্যয় নিয়ে আলোচনা প্রয়োজন বলে মনে করে পরিকল্পনা কমিশন।  কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের বন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উইংয়ের প্রধান (অতিরিক্ত সচিব) মোহাম্মাদ মফিজুর রহমান বলেন, প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) সভায় প্রকল্পটির প্রতিটি খাত নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে, এখনও সভার কার্যবিবরণী বের হয়নি। কার্যবিবরণী বের হলে সার্বিক বিষয়ের সিদ্ধান্তগুলো জানাতে পারব।

এদিকে এ প্রকল্পের বিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, প্রকল্পের সঙ্গে যারা জড়িত, তারা অনিয়মের মাধ্যমে ক্ষমতার অপব্যবহার করে এ বরাদ্দ থেকে নিজেদের সুবিধা আদায় করে নেবে। পাবলিক মানি মানেই জনগণের অর্থ। এ অর্থ কোন খাতে এবং কীভাবে ব্যবহার হচ্ছে, সেটির মাপকাঠি থাকা উচিত।