অবশেষে ভারতকে হারাল বাংলাদেশ

সর্বনাশ যা হওয়ার আগেই হয়েছে। এশিয়া কাপ থেকে ছিটকে গেছে বাংলাদেশ। ভারতের বিপক্ষে হারানোর কিছুই ছিল না টাইগারদের। তবে পাওয়ার ছিল। আজ নিয়মরক্ষার নাটকীয় ম্যাচে সান্ত্বনার জয় পেয়েছে টাইগাররা। ‍কলম্বোতে ভারতীয়দের ছয় রানে হারিয়েছে সাকিব আল হাসানের দল। ভারতের বিপক্ষে ৪০তম ম্যাচে এটা বাংলাদেশের অষ্টম জয়। আর এশিয়া কাপে ১১ বছর পর ভারতের বিপক্ষে জিতল টাইগাররা।

টস হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুর বিপর্যয়ের পর আট উইকেটে ২৬৫ রানের চ্যালেঞ্জিং সংগ্রহ তোলে বাংলাদেশ। জবাবে ম্যাচের এক বল বাকি থাকতে ২৫৯ রানে গুটিয়ে যায় ভারত। বৃথাই গেল শুভমান গিলের দারুণ শতকটা। অবশ্য এই হারে তেমন ক্ষতি হয়নি তাদের। আগামী রোববার একই ভেন্যুতে এশিয়া কাপের ফাইনালে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি হবে ভারত।

১৮ বলে ৩১ রানের সমীকরণ ছিল ভারতের সামনে। ৪৮তম ওভারে ভালোই বোলিং করছিলেন শেখ মেহেদি। কিন্তু ওভারের শেষ দুই বলে অক্ষর প্যাটেলের কাছে চার-ছক্কায় তিনি হজম করেন ১০ রান। ১২ বলে সমীকরণ নেমে আসে ১৭ রানে। ৪৯তম ওভারে এসে বাজিমাত করেন মোস্তাফিজ; ফেরান অক্ষর ও শার্দুল ঠাকুরকে। পরে শেষ ওভারে ১১ রানের পুঁজি আগলে রাখেন তানজিম হাসান সাকিব।

বাংলাদেশের মতো ভারতের ইনিংসের শুরুটাও ভালো হয়নি। শুরুতেই তাদের চেপে ধরে টাইগাররা। আরেকটু ছোট করে বললে তরুণ পেসার তানজিম। ১৭ রানে দুই উইকেট তুলে নেন তরুণ এই পেসার। ভারতের জোড়া ধাক্কা সামাল দেন শুভমান ও লোকেশ রাহুল। দুজন মিলে যোগ করেন ৫৭ রান। ৭৪ রানে ভারতের তৃতীয় ব্যাটার হিসেবে আউট হন রাহুল। দলীয় শতকের আগে আরও এক উইকেট তুলে নেয় টাইগাররা।

এক প্রান্ত আগলে রেখে ভারতকে জয়ের স্বপ্ন দেখাতে থাকেন শুভমান গিল। মিডল ও লোয়ার অর্ডার ব্যাটারদের নিয়ে লড়াই করে যান এই ওপেনার। টাইগারদের জয়ের পথে শুভমানই বড় কাঁটা হয়ে উঠেছিল। অবশেষে সেই কাঁটা উপড়ে ফেলে বাংলাদেশ। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের পঞ্চম সেঞ্চুরি করা শুভমানকে ফেরান শেখ মেহেদি।

১৩৩ বলে ১২১ রান করেন ভারতীয় ওপেনার। আটটি চার ও পাঁচটি ছক্কায় ইনিংস সাজান শুভমান। ৩৪ বলে ২৬ রানে ফেরেন সূর্যকুমার যাদব। শেষ দিকে অক্ষর ঝড় তোলেন। চাপে পড়ে বাংলাদেশ। আস্কিং রেটের চাপ কমাতে চেষ্টা করেন অক্ষর। শেষ পর্যন্ত আস্কিং রেটের চাপের সঙ্গে পেরে ওঠেননি তিনি। ৩৪ বলে ৪৩ রানের ঝড় তুলে বিদায় অক্ষর। ১৩ বলে ১১ রান করেন শার্দুল।

ম্যাচ চলে আসে বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণে। টাইগারদের পক্ষে তিন উইকেট নেন মোস্তাফিজুর রহমান। দুটি করে শিকার তানজিম ও শেখ মেহেদির। একটি করে উইকেট পান সাকিব ও মেহেদি হাসান মিরাজ।

এর আগে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই ভালোই বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ। ২৮ রানে টাইগাররা হারায় তিন উইকেট। ৫৯ রানে চতুর্থ উইকেটের পতন। সেখান থেকে বাংলাদেশ আড়াই শ’ ছাড়িয়েছে সাকিব আল হাসানের ব্যাটিং দৃঢ়তায়। অবদান রেখেছেন তাওহিদ হৃদয় নাসুম আহমেদ, শেখ মেহেদিও।

বাংলাদেশের শুরুর ধস ঠেকান সাকিব ও হৃদয়। পঞ্চম উইকেটে ১০১ রান যোগ করেন তারা। সাকিবের আউটে ভাঙে জুটি। ৮৫ বলে ছয়টি চার ও তিন ছক্কায় ৮০ রানের ঝলমলে ইনিংস খেলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। তার সঙ্গী হৃদয় ৮১ বলে ফেরেন ৫৪ রানে; ইনিংস সাজান পাঁচটি চার ও দুটি ছক্কায়।

ইনিংসের শেষ দিকে ব্যাট হাতে চমক দেখান নাসুম ও মেহেদি। ৪৫ বলে ৪৪ রানের ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস খেলেন নাসুম। ২৩ বলে ২৯ রানের ক্যামিও ইনিংস এসেছে শেখ মেহেদির ব্যাট থেকে। এ ছাড়া আট বলে ১৪ রানের ছোটখাটো ঝড় তোলেন তানজিম হাসান সাকিব। ওপেনার তানজিদ হাসান ও মেহেদি হাসান মিরাজ করেন সমান ১৩ রান। এবারের এশিয়া কাপে প্রথমবার সুযোগ পাওয়া এনামুল হক বিজয় ১১ বলে চার রানে আউট হন।

ভারতের পক্ষে সর্বোচ্চ তিন উইকেট নেন শার্দুল ঠাকুর। দুটি শিকার আরেক পেসার মোহাম্মদ শামির। এ ছাড়া একটি করে উইকেট পান প্রশিদ কৃষ্ণা, অক্ষর প্যাটেল ও রবিন্দ্র জাদেজা। লক্ষ্যমাত্রা তারা নাগালেই রেখেছিলেন। কিন্তু বাংলাদেশের দারুণ বোলিংয়ে তা ম্লান হয়ে গেছে।