খুদে মুরসালিমের বুদ্ধিতে রক্ষা পেল কাঞ্চনজঙ্গা এক্সপ্রেস

আরেকটা বড় ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটতে পারতো। হতাহত হতে পারতো শত শত যাত্রী। কিন্তু তারা কিছুই হলো কেবল খুদে মুরসালিমের বুদ্ধির কারণে। ক্লাস ফাইভে পডুয়া মুরসালিমের উপস্থিত বুদ্ধির কারণে কোনো ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আগেই নিরাপদে থেমে যায় কাঞ্চনজঙ্গা এক্সপ্রেস। ঘটনাটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গে মালদা জেলার। খবর হিন্দুস্তানটাইমস।

মুরসালিম

মুরসালিমের বরাতে খবরে বলা হয়, মালদা জেলার হরিশ্চন্দ্রপুর থানার প্রত্যন্ত গ্রাম কড়িয়ালীর ওপর দিয়ে যাওয়া রেললাইনের পাশে একটি ছোট পুকুরে মুরসালিম ও তার বন্ধুরা মাছ ধরত। গত শুক্রবারও তাদের মাছ ধরার কথা ছিল। তাই মুরসালিমও বাড়ি থেকে রেললাইন ধরে ওই পুকুরটিতে গিয়েছিল। যাওয়ার পথে সে রেললাইনের নিচে একটি বড় ধরনের গর্ত দেখতে পায়। মাটি সরে গিয়ে সেটা মোটামুটি একটা সুড়ঙ্গের মতো হয়ে গিয়েছিল।

যখন প্রথমবার দেখেছিল, তখন খুব বেশি কিছু মাথায় আসেনি মুরসালিমের। কিন্তু মাছ ধরতে থাকাবস্থায় ট্রেনের হুইসেল শোনার পর ওই গর্তের কথা মনে করে আতকে উঠে মুরসালিম। বন্ধুদের নিয়ে যায় সেই রেল লাইনে। কাঞ্চনজঙ্গা এক্সপ্রেস তখন অনেকটাই কাছে এসে পড়েছে। অন্য কোনো উপায় না দেখে নিজের পরনের লাল শার্ট উড়াতে উড়াতে ট্রেনের দিকে এগিয়ে যায় মুরসালিম।

কাঞ্চনজঙ্গা এক্সপ্রেস

ট্রেনের অনেকটা কাছে পৌঁছে যাওয়ার পর ট্রেন চালকের নজরে পড়লে তিনি ধীরে ধীরে ট্রেনটিকে থামিয়ে দেন। পরে ট্রেনের চালকসহ অন্যরা নেমে এসে গর্তটি দেখেন এবং সমূহ বিপদ থেকে সাবধান করার জন্য খুদে মুরসালিমকে ধন্যবাদ জানান। পরে রেল কর্তৃপক্ষের লোকজন এসে ওই জায়গা মেরামতের পর ট্রেনটি নিরাপদে সেই স্থান ত্যাগ করে।

ওই ঘটনার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে মুরসালিম জানায়, লাল জামাটা খুলে যখন রেললাইনের মাঝখান দিয়ে ছুটছিলাম, তখন কিন্তু বিন্দুমাত্র ভয় লাগেনি। ট্রেনটাকে থামানোর জন্য গায়ে যত জোর আছে, সব দিয়ে ছুটছিলাম ট্রেনের দিকে আর বলছিলাম, ট্রেন থামাও, ট্রেন থামাও। মনপ্রাণ দিয়ে শুধু চাইছিলাম, ট্রেনটা যাতে থেমে যায়। কিন্তু ট্রেনটা যখন সত্যিই থেমে গেল, সে মুহূর্তে ভীষণ ভয় লাগছিল। মনে হচ্ছিল, ট্রেনের লোকজন এসে বকাবকি করবে না তো?

ট্রেন থামার পর ট্রেনের পুলিশসহ কয়েকজন আমার দিকে এগিয়ে আসে। অনেক কষ্ট করে শান্ত থাকার চেষ্টা করেছি। পরে তারা আমার কাছে এসে ট্রেন থামানোর কারণ জিজ্ঞাসা করলে আমি তাদের ওই গর্ত দেখিয়ে দেই। সেটি দেখে ওরাও ভয় পেয়ে যায়। চারদিকে ফোন করে ঘটনাটি সম্পর্কে জানায়। বলতে থাকে, কত বড় বিপদ হতে পারতো। তখন আমি বুঝতে পারি, আমি কোনো ভুল কিছু করিনি।

কিন্তু এরপর যা ঘটল, সত্যি তা আমি কখনও ভাবিনি। সবাই মিলে আমার প্রশংসা করছিল, আদর করছিল। পরদিন সকালে অনেক লোক আসে বাড়িতে। সাংবাদিকরাও এসেছিলেন। বারবার আমার কাছে ঘটনাটি জানতে চাইলেন। আমি ঘটনা খুলে বললে তারা আমার সাহসের প্রশংসা করেন। এখন গ্রামে লোকজন বলছে, আমার জন্যই নাকি আমাদের এই কড়িয়ালি গ্রামের কথা সবাই জেনেছে। শুনে খুব ভালো লেগেছে।

এদিকে এ ঘটনার পর মুরসালিমের বাড়িতে ভিড় কমছেই না। বিশেষ করে রাজনৈতিক দলের নেতাদের ভিড় অনেকখানি বেড়েছে। কেউ কেউ তার জন্য বিভিন্ন উপহার-অনুদানেরও ব্যবস্থা করেছে। পরিযায়ী শ্রমিক মুহাম্মদ ইসমাঈলের ছেলে মুরসালিমের পরিবারে অভাব লেগেই থাকে। এ অবস্থায় মুরসালিমকে দেখতে এসে তার পড়াশোনার দায়িত্ব নেন তৃণমূলের জেলা সাধারণ সম্পাদক তথা জেলা পরিষদের সদস্য বুলবুল খান। সংবর্ধনা দেন রাজ্যের বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী ও স্থানীয় বিধায়ক তাজমুল হোসেন।

মুরসালিমের সঙ্গে দেখা করেন এলাকার সিপিএম নেতা শেখ খলিল সিআইডি জেলা সম্পাদক দেবজ্যোতি সিনহা এবং কংগ্রেস নেতা জিয়াউর রহমান চৌধুরী। তারা মুরসালিমকে বিভিন্ন ধরনের আর্থিক সাহায্য করেন এবং ভবিষ্যতেও পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন। এছাড়া বিজেপি নেতা এবং রেল কর্তৃপক্ষও মুরসালিমকে পুরস্কৃত করার ঘোষণা দিয়েছে।