বিদেশে হাসপাতালের খোঁজ নিচ্ছেন খালেদা জিয়ার পরিবার

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য বিদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে খোঁজ নিচ্ছেন তার পরিবার। খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার আবেদনে ইতিবাচক সাড়া পাবে বলে আশা করছেন তারা। খালেদা জিয়ার পরিবারের একটি সূত্র জানিয়েছে, সরকার অনুমতি দিলে তাকে অবিলম্বে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার জন্য তারা এসব প্রস্তুতি নিচ্ছেন। খবর প্রথম আলো।

খালেদা জিয়া

ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে দেড় মাসের বেশি সময় ধরে অসুস্থ অবস্থায় চিকিৎসাধীন আছেন খালেদা জিয়া। তার মেডিকেল বোর্ড দীর্ঘদিন ধরে সতর্ক করে আসছে যে তাকে লিভার ট্রান্সপ্লান্ট সার্জারির জন্য বিদেশে নিয়ে যাওয়া হবে। তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হার্ট ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। হাসপাতালে তার স্বাস্থ্যের অবস্থা ওঠানামা করছে।

এরই মধ্যে খালেদা জিয়াকে স্থায়ীভাবে মুক্তি দিয়ে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিয়ে যাওয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার অনুমতি চেয়ে সোমবার আবেদন করা হয়েছে। খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দারের দাখিল করা এই আবেদনটি আইনি মতামতের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার অনুমতি চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আইন মন্ত্রণালয়ে আবেদন পাঠানো হয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের করা এই আবেদনটি যাচাই-বাছাই করে শিগগিরই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি পাবেন বলে আশাবাদী পরিবারের সদস্যরা। এ কারণে তারা বিদেশে হাসপাতাল সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে শুরু করেছেন। শনিবার তার পরিবারের একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিসে ভুগছেন। জার্মানি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া এবং সিঙ্গাপুরে এর জন্য উন্নত চিকিৎসা সুবিধা রয়েছে বলে তারা জানতে পেরেছেন। তারা ওইসব দেশের প্রাসঙ্গিক হাসপাতাল খতিয়ে দেখছেন যাতে অনুমতি পাওয়ার মুহূর্তে অসুস্থ খালেদা জিয়াকে সেখানে নিয়ে যেতে পারেন।

মেডিকেল বোর্ডের একজন সদস্য বলেন, খালেদা জিয়ার বর্তমান অবস্থা বিবেচনা করে অবিলম্বে তাকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া জরুরি।

খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে একাধিক মন্ত্রী বিরূপ মন্তব্য করলেও সুপ্রিম কোর্টের অনেক আইনজীবী মনে করেন, সরকার আদালতের শরণাপন্ন না হয়েও তাকে বিদেশে নেওয়ার অনুমতি দিতে পারে।

সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শাদীন মালিক বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা মেনে খালেদা জিয়াকে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি দিয়েছে সরকার। তাই জেলে যাওয়া বা আদালতে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। ৪০১ ধারায় যে কোন শর্ত ছাড়াই নির্বাহী আদেশে মুক্তি দেওয়া যেতে পারে। এমনকি সরকার সাজা মওকুফ করতে পারে। আর তাই তিনি মনে করেন, সরকার খালেদা জিয়াকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে পারে এবং চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিতে পারে।

দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবী খুরশীদ আলম বলেন, আপিল বিভাগ খালেদা জিয়ার জামিনের আবেদন নাকচ করলেও আদালতের সঙ্গে পরামর্শ না করেই মানবিক কারণে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়েছে সরকার। তাই খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে এখন সরকারকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

সিনিয়র আইনজীবী জেড আই খান পান্নাও একই মত পোষণ করেন। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত ও মুক্তি আদালতের নির্দেশে করা হয়নি। নির্বাহী আদেশে সরকার এটি করেছে। যাতে মন্ত্রীরা এখন বলতে না পারেন এটা আদালতের এখতিয়ার। তিনি বলেন, এটা সরকারের সিদ্ধান্তের বিষয়।

দুই মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে কারাগারে বন্দি করা হয়। দুই বছরের বেশি সময় কারাগারে ছিলেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।

জিয়া অরফানেজ এবং জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত খালেদা জিয়াকে ২৫ মার্চ ২০২০ তারিখে সরকার একটি নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দেয়।

গত ১২ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করে তার মুক্তি আরও ছয় মাস বাড়ানোর প্রজ্ঞাপন জারি করেন।