বেশি দাম দিয়ে ভারী ধাতুভরা ডিম কিনছে ঢাকার মানুষ

ঢাকার বাজারে এক ডজন মুরগির ডিম কিনতে খরচ হচ্ছে ১৬৫-১৭০ টাকা। গত বছরের এ সময়ের তুলনায় কমপক্ষে দেড়গুণ বেশি। তবে এত বেশি দাম দিয়ে কিনেও ক্রেতারা স্বাস্থ্যসম্মত ডিম পাচ্ছেন না। এসব ডিমে পাওয়া যাচ্ছে মানব দেহের জন্য ক্ষতিকর ভারী ধাতু। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর) এবং হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয়জন গবেষকের যৌথ গবেষণায় এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

ডিম

নেদারল্যান্ডসভিত্তিক চিকিৎসা ও বিজ্ঞানবিষয়ক জার্নাল সায়েন্স ডিরেক্টের ওয়েবসাইটে গত ২৮ জুন প্রকাশিত ওই গবেষণার শিরোনাম ছিল ‘ডিমের মাধ্যমে বিষাক্ত পদার্থ গ্রহণ এবং ঢাকা নগরীর মানুষের সম্ভাব্য স্বাস্থ্যঝুঁকি পরিমাপ’। ২০২০ সালের ১২ জুলাই থেকে ১৭ জুলাই পর্যন্ত ডিমের পাইকারি আড়ত মহাখালী, মোহাম্মদপুর, সাভার, মিরপুর-১, যাত্রাবাড়ী ও কারওয়ান বাজার থেকে ডিমগুলো সংগ্রহ করা হয়।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক মো. শাহজাহান, অধ্যাপক আবদুস সামাদ ও মো. মাহমুদুল হাসান; একই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক দোলন রায়; বিসিএসআইআরের কেমিক্যাল গবেষণা বিভাগের খন্দকার শাহীন আহমেদ এবং হাজী দানেশের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষক স্মিতা সরকার যৌথভাবে এ গবেষণাটি করেন।

ডিমের আড়ত

গবেষণার প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, খামারে উৎপাদিত যেসব ডিম ঢাকা শহরে পাওয়া যায়, তাতে ভারী ধাতুর উপস্থিতি স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি। এসব ভারী ধাতুর মধ্যে রয়েছে দস্তা, তামা, সিসা, লোহা। সর্বোচ্চ অনুমোদিত মাত্রার (ম্যাক্সিমাম পার্মিসিবল লিমিট বা এমপিএল) চেয়ে বেশি পরিমাণে পাওয়া এসব ভারী ধাতুর কারণে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির আশঙ্কা রয়েছে।

মূলত ১০টি ভারী ধাতুর বিদ্যমান পরিমাণ জানতে এ গবেষণাটি করা হয়েছিল। তাতে ১০টির ছয়টির উপস্থিতি পাওয়া গেছে সর্বোচ্চ অনুমোদিত মাত্রার (এমপিএল)। আর বাকি চারটি তথা দস্তা, তামা, সিসা ও লোহার উপস্থিতি পাওয়া গেছে সর্বোচ্চ মাত্রার চেয়েও অনেক বেশি। গবেষণায় দেখা গেছে, যেখানে তামার এমপিএল ১০, সেখানে রয়েছে ২৪.৯ পর্যন্ত। সিসার এমপিএল যেখানে ০.১, সেখানে তার উপস্থিতি পাওয়া গেছে ১.৯ পর্যন্ত। ১৭.৬ ছিল লোহার এমপিএল, সেখানে পাওয়া গেছে ৬৪.৫৯ পর্যন্ত। আর ২০ এমপিএলের জায়গায় দস্তা পাওয়া গেছে ৩৯.২৬ পর্যন্ত। সবমিলিয়ে ডিম এখন ভারী ধাতুর একটি যৌগিক পদার্থে পরিণত হয়েছে।

গবেষণায় বলা হয়, ডিমে বাড়তি মাত্রায় থাকা এসব ভারী ধাতু ক্যান্সার, হৃদরোগ, শ্বাসপ্রশ্বাসে জটিলতা, রক্তশূন্যতা, মস্তিষ্ক-কিডনি-স্নায়ুর ক্ষতিসহ নানা ধরনের শারীরিক সমস্যার জন্য দায়ী। প্রাপ্তবয়স্কদের চেয়ে শিশু ও বয়স্কদের জন্য এটি আরও বেশি ক্ষতিকর।

সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, ট্যানারির বর্জ্যে ভারী ধাতুর পরিমাণ বেশি থাকে। অসাধু ব্যবসায়ীরা মুরগির খাদ্যে কখনো কখনো ট্যানারির বর্জ্য মেশায়। কারণ এসব বর্জ্যে প্রোটিনের পরিমাণ বেশি থাকায় মুরগি তাড়াতাড়ি বড় হয়। এ খাবারের মাধ্যমে মুরগির শরীরে বিষাক্ত ভারী ধাতু প্রবেশ করছে। সেখান থেকে ভারী ধাতু চলে যাচ্ছে ডিমে। আর ডিম খাওয়ার মাধ্যমে মানুষের শরীরেও ঢুকছে এসব ক্ষতিকর পদার্থ।

বিষয়টি স্বীকার করে প্রান্তিক খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএ) সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, ট্যানারির বর্জ্য প্রথমে ঢাকা ও চট্টগ্রামের কিছু জায়গায় প্রক্রিয়াজাত করা হয়। পরে সেগুলো পোলট্রির খাদ্য উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়। খাদ্য উৎপাদনকারীরা নিরাপদ পোলট্রি খাদ্য না দিলে প্রান্তিক খামারিরা নিরাপদ মুরগির মাংস ও ডিম দিতে পারবেন না বলে দাবি করেন তিনি।

এমন পরিস্থিতিতে দেশে আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব ডিম দিবস। দিবসটি পালিত হয় প্রতিবছরের অক্টোবর মাসের দ্বিতীয় শুক্রবার। তবে এবার এমন সময়ে দিবসটি পালিত হচ্ছে, যখন গরীবের প্রোটিন হিসেবে পরিচিত এ খাবারটির মূল্য গরীবের হাতের অনেক বাইরে চলে গেছে।