নৌকায় ভোট দিলে ‘ছেঁচি’ দেওয়ার হুমকি আ. লীগ নেতার!

নৌকা মার্কার প্রার্থীকে ভোট দিলে পিষে ফেলার হুমকি দিয়েছেন নোয়াখালী-৩ (বেগমগঞ্জ) আসনের উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ডা. এ বি এম জাফর উল্যাহ। স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে আয়োজিত এক উঠান বৈঠকে বক্তব্য দিতে গিয়ে এ কথা বলেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবাদ জানান আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য মামুনুর রশিদ কিরন।

বক্তব্য দিচ্ছেন ডা. এ বি এম জাফর উল্যাহ

জানা গেছে, নোয়াখালী-৩ আসনের ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মিনহাজ আহমেদ জাবেদের প্রধান নির্বাচনী সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছেন বেগমগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ডা. এ বি এম জাফর উল্যাহ। গত সোমবার (১ জানুয়ারি) বিকেলে কাদিরপুর ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থীর একটি উঠান বৈঠকে বক্তব্য দেওয়ার সময় নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশে তিনি হুমকি দেন।

বক্তব্যে তিনি বলেন, নির্বাচনের আগে কাদিরপুর ইউনিয়নের জন্য এটাই সমাপনী দিন। তাই বলছি, কাদিরপুরের একটা লোকও যদি ডান বাম করেন, তাদের খেদাই (তাড়িয়ে) দেবেন। যারা ওরে (নৌকার প্রার্থী) ভোট দেবে মনে করবেন, ওদের কাদিরপুর থাকার অধিকার নাই। তাদেরকে এখান থেকে তাড়িয়ে দেবেন। এখানে দুয়েকটা কালসাপ আছে। নির্বাচনের দিন এদের চিহ্নিত করে ছেঁচি (পিষে) দেবেন।

মামুনুর রশিদ কিরণ

এ বি এম জাফর উল্যাহর এ বক্তব্যের প্রতিবাদে পরদিন মঙ্গলবার (২ জানুয়ারি) রাতে সংবাদ সম্মেলন করেন আসনটির আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সংসদ সদস্য মামুনুর রশিদ কিরন। তিনি বলেন, বেগমগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম জাফর উল্ল্যাহ স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে ভোটের প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন, এতে আমাদের কোনো সমস্যা নেই। তবে গত কয়েকদিন ধরে তিনিসহ বেশ কয়েকজন উপজেলা আওয়ামী লীগের লোকজনকেই বিভিন্নভাবে হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছেন।

কিরন আরো বলেন, ডা. জাফর উল্যাহর এমন বক্তব্য সংগঠনবিরোধী। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালাতে পারেন সেটা তার ইচ্ছে। কিন্তু নিজ দলের নেতাকর্মীদের এভাবে ভয়ভীতি দেখানো সরাসরি আচরণবিধির লঙ্ঘন। বিষয়টি নিয়ে আমরা জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ইলেক্টোরাল অনুসন্ধান কমিটির কাছে অভিযোগ করেছি। পাশাপাশি জাফর উল্ল্যাহকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করার জন্য জেলা কমিটিতে সুপারিশ করা হয়েছে।

তবে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে ডা. এ বি এম জাফর উল্যাহ বলেন, তাকে হেনস্তা করা এবং তাদের প্রার্থীকে নিয়ে ভোটারদের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়ানোর জন্যই এমন অভিযোগ আনা হয়েছে। তার বক্তব্যের পুরো ভিডিও না দিয়ে খণ্ডিত অংশ ছড়িয়ে বিভ্রান্তির চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি নিজে আওয়ামী লীগের একজন কর্মী, তাই তিনি নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে এমন বক্তব্য দিতে পারেন না। তিনি বরং ভোটারদের কেন্দ্রে আসতে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে এমন বক্তব্য দিয়েছিলেন।

স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, এখানে দলীয় প্রার্থী হিসেবে অযোগ্য লোককে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। তাই আমি ট্রাক মার্কার পক্ষে কাজ করছি। তবে আমি ৭ তারিখ পর্যন্ত ট্রাক মার্কার। এরপর আমি আবার উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি।

এ বিষয়ে নোয়াখালী-৩ (বেগমগঞ্জ) আসনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা বেগমগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মহিনুল হাসান বলেন, এ ধরনের কোনো অভিযোগ এখন পর্যন্ত পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।