সোনালী ব্যাংক: ৫০৬ গরীবের নামে ঋণ জালিয়াতি!

রাঙ্গামাটির লংদু উপজেলায় একটি প্রতারক চক্র ১২ বছর আগে দৈনিক শ্রমিক, বিধবা, জেলে, ভিক্ষুকসহ ৫০৬ জনের নথিপত্র ব্যবহার করে সরকারি ব্যাংক সোনালী ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে বলে পুলিশ তদন্তে উঠে এসেছে।

সোনালী ব্যাংকের লোগো

ঋণ নেওয়ার বিষয়ে কোনো কিছুই জানতেন না এসব মানুষ, জানতে পারেন ঋণের কয়েকগুণ বেড়ে যাওয়ার পর ব্যাংক থেকে পাঠানো নোটিশ থেকে।

পশ্চিম চৈল্লাটলি গ্রামের গৃহিনী ফাতেমা বেগমের স্বামী মো. আব্দুল জব্বার একজন দৈনিক মজুরি। সম্প্রতি জানতে পারেন তার নামে চারটি অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে এবং ব্যাংক থেকে মোট ১ লাখ ৮৭ হাজার ৭২৮ টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছে।

ফাতেমা বেগম বলেন, তিনি কখনোই সোনালী ব্যাংকে ঋণের জন্য যাননি। তার জাতীয় পরিচয় পত্র (এনআইডি) কার্ড ১২ বছর আগে সরকারি ভাতার জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল, এবং তিনি ৭০০ টাকা পেয়েছিলেন। এখন জানতে পারেন তার এনডিআই ব্যবহার করে চারবার ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া হয়েছে।

পুলিশের তথ্যমতে, গত নভেম্বরে লংদু উপজেলার বাসান্নদাম ও বোগাছত্রা ইউনিয়নের বাসিন্দাদের ঋণ নোটশ পাঠাতে শুরু করে সোনালী ব্যাংক এবং ৫০০ এর বেশি মানুষ এসব নোটিশ পায়।

এরপর কয়েকজন ভুক্তভোগী ২৭ নভেম্বর পুলিশ সুপারসহ বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করেন এবং লংদু থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মো. জয়নালকে অভিযোগ তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

তদন্তে উঠে আসে, ব্যাংক ২৫ হাজার থেকে ৩৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ মঞ্জুর করেছে বাসান্নদাম ও বোগাছত্রা ইউনিয়নের কমপক্ষে ৫০০ জনকে, যার মোট অঙ্ক কমপক্ষে ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা। মূলধন ও সুদসহ এখন এই অঙ্ক দ্বিগুণেরও বেশি।

১৪ জানুয়ারি লংদুতে বিক্ষোভ করে কয়েকজন ভুক্তভোগী, ঋণ জালিয়াতির প্রতিবাদ জানায়। তারা অভিযোগ করেন, স্থানীয় দালাল ও দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যাংক কর্মকর্তারা তাদের নথিপত্র ব্যবহার করে ঋণ নিয়েছে।

ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন, তাদের সইও জাল করা হয়েছে এবং এত সংখ্যক মানুষের কোনো যাচাই ছাড়াই ব্যাংক কর্মকর্তারা কীভাবে ঋণ মঞ্জুর করলেন তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তারা।

সোনালী ব্যাংকের লংগদু শাখার ব্যবস্থাপক মো. আবুল কায়েস বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া তারা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে পারবেন না।

লংগদু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, সোনালী ব্যাংকে অনিয়মের অভিযোগে ভুক্তভোগীরা আমার কাছে এসেছিলেন। তদন্তে দেখা গেছে স্থানীয় এজেন্ট এবং বেশ কয়েকজন দুর্নীতিবাজ ব্যাংক কর্মকর্তার যোগসাজশের কারণে এমনটি ঘটেছে। এই ঋণ মওকুফের কোনো উপায় নেই, তবে সোনালী ব্যাংক কিছু সুদ মওকুফ করতে পারে।

লংগদু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বারেক সরকার বলেন, যাদের নামে ঋণ নেওয়া হয়েছে তাদের অধিকাংশই দরিদ্র ও ভূমিহীন। তাদের কেউ ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করে, আবার কেউ দৈনিক মজুরি পায়।

তাদের কেউ যাতে হয়রানির শিকার না হয় সেজন্য তিনি বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখার জন্য ইউএনওকে নির্দেশ দেন।