প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য, 'ইউনূস সেন্টারের' জবাব

গত ২৫ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে বাংলাদেশের নোবেল জয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সমালোচনা করেন। সেই সমালোচনার প্রতিবাদ জানিয়েছে ইউনূস সেন্টার। এক প্রতিবাদ লিপিতে ইউনূস সেন্টার দাবি করেছে, 'প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে পুরো জাতিকে ভুল তথ্য দিয়েছেন।'

গতকাল ২৮ জানুয়ারি শনিবার ইউনূস সেন্টার তাদের ওয়েবসাইটে এই দীর্ঘ প্রতিবাদ লিপিটি প্রকাশ করে। প্রতিবাদে ইউনূস সেন্টার জানিয়েছে, 'প্রধানমন্ত্রী যেসব অভিযোগ করেছেন তার বেশিরভাগ এর আগেও একাধিকবার করা হয়েছে। প্রতিবারই সেই সব বক্তব্যে স্পষ্ট জবাব দিয়েছে ইউনূস সেন্টার। এবারও ইউনূস সেন্টার এসব সমালোচনা বা প্রশ্নের জবাব দিচ্ছে। এসব জবাব সবসময় আমাদের ওয়েব সাইটে পাওয়া যাবে।' দীর্ঘ প্রতিবাদ লিপিটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ইউনূস সেন্টার প্রধানমন্ত্রী প্রতিটি প্রশ্নের জবাব ইংরেজি এবং বাংলায় দেয়া হয়েছে। ইউনূস সেন্টারের সেই প্রতিবাদ লিপির চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো..

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য: ইউনূসের অনেক টাকা। তিনি কর দেন না। কর না দেবার জন্য কর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করেন। তার আয়ের উৎস কী আমরা জানি না। তার এতো টাকা কোত্থেকে আসে? 

ইউনূস সেন্টারের জবাব: কর এড়িয়ে যাবার অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। প্রফেসর ইউনূস বরাবরই তাঁর কর পুরোপুরি ও সময়মতো পরিশোধ করে আসছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জাতীয় সংসদের ফ্লোরে দাঁড়িয়ে জাতিকে ভুল তথ্য দিয়েছেন। প্রফেসর ইউনূসের আয়ের উৎস ৩টি। এক. পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সম্মেলনে প্রদত্ত বক্তৃতার জন্য সম্মানী। তিনি পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু পারিশ্রমিকপ্রাপ্ত বক্তাদের একজন। তার আয়ের সবচেয়ে বড় উৎস এটি। দুই. পৃথিবীর ২৫টিরও বেশী ভাষায় অনূদিত তাঁর বইগুলো থেকে প্রাপ্ত রয়্যালটি। তাঁর বইগুলো নিউইয়র্ক টাইমসের বিচারে পৃথিবীর সর্বাধিক বিক্রিত বইগুলোর তালিকাভূক্ত। তিন. ১ম ও ২য় দ্বিতীয় উৎস থেকে অর্জিত অর্থ মেয়াদী আমানতে জমা রাখার ফলে তার থেকে প্রাপ্ত আয়।

প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য: মুহাম্মদ ইউনূস একজন 'প্রতারক' তিনি গ্রামীণ ফোন প্রতিষ্ঠার সময় তার প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী গ্রামীণ ফোনের মুনাফার টাকা গ্রামীণ ব্যাংককে দেননি। ড. ইউনূস গ্রামীণ ফোনের শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছিলেন এবং গ্রামীণ ফোনকে তাঁর ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে পরিণত করেছেন।

ইউনূস সেন্টারের জবাব: মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিটি বক্তব্যই ভুল। গ্রামীণ ফোনের জন্ম একটি দীর্ঘ আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে। সরকারের কাছে গ্রামীণ ফোনের সকল দলিলপত্র আছে। এসব দলিল থেকে দেখা যাবে যে, গ্রামীণ ফোন প্রতিষ্ঠার কোন পর্যায়েই কখনো এই কোম্পানীতে প্রফেসর ইউনূসের কোন শেয়ার ছিলনা এবং এখনো এখানে তাঁর কোন শেয়ার নেই। ফলে প্রফেসর ইউনূস কর্তৃক এর শেয়ার বিক্রি করে দেবার কোন প্রশ্নই আসেনা।

প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য: আইনি লড়াইয়ে হেরে যাবার পর ড. ইউনূস ক্ষেপে যান এবং তিনি দেশের একটি প্রখ্যাত পত্রিকার সম্পাদকসহ পদ্মা সেতুর টাকা আটকে দিতে বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্টের সাথে দেখা করেন এবং হিলারী ক্লিনটনের সাথে লবি করেন।

ইউনূস সেন্টারের জবাব: ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের বিগত শাসনামলে প্রফেসর ইউনূসের বয়স ৬০ বছর পার হয়। গ্রামীণ ব্যাংকের আইনেও এর ব্যবস্থাপনা পরিচালকের অবসরের বয়সসীমা সম্পর্কে নির্দিষ্ট করে কিছু বলা নেই। বাংলাদেশ ব্যাংকও তাদের প্রতিবেদনে অবসরের বয়সসীমা নিয়ে কখনো কোন প্রশ্ন তোলেনি। প্রফেসর ইউনূস আদালতের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে অবিলম্বে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে সরে দাঁড়ান।

সাবেক মার্কিন ফাস্টলেডি হিলারী ক্লিনটনের সাথে তাঁর বন্ধুত্বের সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে তাঁকে ফোন করে প্রফেসর ইউনূস পদ্মা সেতুতে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়ন প্রত্যাহারে প্রভাব খাটিয়েছিলেন - এই অভিযোগ প্রফেসর ইউনূস অতীতেও সুস্পষ্টভাবে অস্বীকার করেছেন। ড. ইউনূস বলছেন, পদ্মা সেতু বাংলাদেশের জনগণের একটি স্বপ্ন এবং এই স্বপ্ন বাস্তবায়নে তিনি তার সর্বশক্তি নিয়োগ করতে প্রস্তুত।

প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য: মার্কিন সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর দ্বারা আমার পুত্র, কন্যা, ভগ্নী ও মন্ত্রীসভার সদস্যদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তের নামে 'হয়রানি, দমন ও নিপীড়নের' পেছনে ইউনূসের হাত রয়েছে।

ইউনূস সেন্টারের জবাব: এটি পুরোপুরি ভিত্তিহীন কাহিনী। প্রফেসর ইউনূস এই কাল্পনিক কাহিনী অস্বীকার করছেন।