এপ্রিলে কেন ভয়ঙ্কর তাপপ্রবাহ! যশোর-চুয়াডাঙ্গায় কেন এত বেশি গরম

সারাদেশে চলছে তীব্র তাপপ্রবাহ। প্রচণ্ড গরমে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশেই জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা যশোর ও চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা চরমে। এপ্রিল মাসেই কেন এই ভয়ঙ্কর তাপপ্রবাহ বয়ে যায়? যশোর-চুয়াডাঙ্গাতেই বা কেন এত বেশি গরম?

এপ্রিলের প্রচণ্ড তাপপ্রবাহে ঢাকাসহ সারাদেশেই জনজীবন বিপর্যস্ত

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, যশোরে শনিবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪২.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ছিল ৪২.৩ ডিগ্রি। অন্যদিকে একইদিন ঢাকায় তাপমাত্রা অতিক্রম করেছে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গড়ে সারা দেশে তাপমাত্রা ছিল ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি।

আবহাওয়া দপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, যশোর-চুয়াডাঙ্গা অঞ্চলে তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি পেরিয়ে যাওয়া এবারই প্রথম নয়। মোটামুটি প্রতিবছরই তীব্র দাবদাহ বয়ে যায় দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের জেলাগুলোতে। এর আগে ২০১৪ সালে এই অঞ্চলে তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছিল।

প্রশ্ন জাগছে, যশোর ও চুয়াডাঙ্গায় এত বেশি গরম পড়ে কেন? এ বিষয়ে আবহাওয়াবিদরা বলছেন কিছু প্রাকৃতিক কারণের কথা। অঞ্চলটির বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্যের কারণে তাপপ্রবাহ বেশি ঘটে থাকে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ একেএম নাজমুল হকের মতে, বাংলাদেশে এপ্রিল মাস হচ্ছে সর্বোচ্চ গরম পড়ার মাস। মাসটিতে পৃথিবীতে সূর্য রশ্মি পড়ে লম্বালম্বিভাবে।

তিনি বলেন, এই সময়ে সূর্যকে ঘিরে যে কক্ষপথ ধরে পৃথিবী ঘুরছে, সেখানে পৃথিবীর অবস্থানগত কারণে সবচেয়ে কাছ থেকে সূর্যরশ্মি পাচ্ছে বাংলাদেশ।

অন্যভাবে বলা যায়, এপ্রিল মাসে বাংলাদেশের অবস্থান সূর্য থেকে অন্য সময়ের তুলনায় সবচেয়ে কাছে থাকে। এ কারণে এপ্রিলে বাংলাদেশে গরম পড়ে সবচেয়ে বেশি।

আবহাওয়াবিদ নাজমুল হক আরও বলেন, চূয়াডাঙ্গা, যশোর, মেহেরপুর, খুলনা- দেশের এই দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে রয়েছে বিস্তৃত সমভূমি। এই অঞ্চলের পশ্চিমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ অবস্থিত, সেখানেও বিশাল এলাকাজুড়ে রয়েছে সমভূমি।

বিষয়টি ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, তাপমাত্রা প্রবাহের তিনটি পদ্ধতি - পরিবহন, পরিচলন ও বিকিরণ। সমভূমি হওয়ার কারণে ওই অঞ্চল দিয়ে পরিবহন পদ্ধতিতে তাপ প্রবাহিত হয়ে থাকে। আর একই সমতলে সরাসরি তাপ প্রবাহিত হওয়ার কারণে পুরো অঞ্চলজুড়ে তাপমাত্রা থাকে বেশি।

নাজমুল হক আরও বলেন, এছাড়াও বঙ্গোপসাগরের পশ্চিমঘাট হচ্ছে চুয়াডাঙ্গা-খুলনা অঞ্চল। আর সাগর হচ্ছে বিশাল পরিমাণে জলীয় বাষ্পের উৎস। বঙ্গোপসাগর থেকে জলীয়বাষ্প ওই অঞ্চল দিয়ে প্রবেশ করে। তাতে বাতাসে জলীয় বাষ্পের আধিক্য অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় বেশি থাকে চুয়াডাঙ্গা-খুলনা অঞ্চলে, ফলে তাপমাত্রাও থাকে বেশি।

এই আবহাওয়াবিদ বলেন, এখন যশোর-চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা বইছে ৪১-৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এখন যদি বাতাসে আরো ২০ শতাংশ জলীয় বাষ্প ঢুকিয়ে দেওয়া হয়, ওই অঞ্চলে তাপমাত্রা আরও বেড়ে ৪৩-৪৪ ডিগ্রি হয়ে যাবে।