ঢাকায় ঘূর্ণিঝড় রেমালের তীব্র প্রভাব: জনজীবন স্থবির

ঢাকায় ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে রাজধানীর ব্যাপক এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। ভয়াবহ বাতাসে গাছপালা উপড়ে পড়ে যানবাহনে ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে এবং যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটেছে। সোমবার সকাল থেকেই ঝড়ো হাওয়াসহ ঢাকায় বৃষ্টি অব্যাহত থাকে। বৃষ্টির তীব্রতা বেড়ে যাওয়ার ফলে সড়কে পথচারী ও যানবাহনের সংখ্যা দুপুরের দিকে উল্লেখযোগ্য হারে কমে যায়।

ছবি - সংগৃহীত

কেবল জরুরি প্রয়োজনেই মানুষজন বাইরে বের হয়েছে। সড়কে পর্যাপ্ত বাস না থাকায় যাত্রীদের দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার সম্মুখীন হতে হয়েছে। এ সুযোগে রিকশাচালকরাও বেশি ভাড়া দাবি করেছে।

মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা কামাল আহমেদ বলেন, 'উবার আর পাঠাও আজকে অনেক বেশি ভাড়া নিচ্ছে। আর রিকশাওয়ালারা তো সুযোগ বুঝে ভাড়া হাঁকিয়ে বসছে। ডাকলেই আসতে চায় না, আর আসলেও অনেক বেশি ভাড়া চায়।'

মেট্রোরেল সার্ভিসও ব্যাহত হওয়ার কারণে উত্তরা থেকে মতিঝিল আসা-যাওয়া করা যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়।

সোমবার সকাল ৬টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত ঢাকায় সর্বোচ্চ ১১৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। দুপুর ১২টার পর থেকে ঢাকার বিভিন্ন সড়কে পানি জমতে শুরু করে। ধানমন্ডি ২৭, মিরপুর ১০, বেগম রোকেয়া সরণির শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়া, নিউমার্কেট, রাজারবাগ পুলিশ লাইন, বেইলি রোড, শান্তিনগর, জুরাইন, উত্তর খান ও দক্ষিণ খানসহ বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়।

বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে মিরপুরের সেনপাড়া থেকে কাজীপাড়া হয়ে শেওড়াপাড়া মেট্রো স্টেশন পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে হাঁটুসমান পানি, কোথাও কোথাও আরও বেশি। পানিতে ইঞ্জিন বিকল হয়ে বেশকিছু গাড়ি ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা নষ্ট হয়ে পড়ে। এতে যান চলাচল আরও ব্যাহত হয়।

শেওড়াপাড়া বাসস্ট্যান্ড এলাকার দায়িত্বে থাকা ট্রাফিক কনস্টেবল আবদুল আহাদ জানান, দুপুরের পর থেকে সড়কে পানির উচ্চতা বাড়তে শুরু করে। বিকেলের দিকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে। এতে গাড়ির ক্ষতি হয়েছে, যান চলাচলেও বিঘ্ন ঘটেছে।

দুপুর ১টার দিকে উত্তরা জসিমউদ্দিন এলাকার আরএকে ভবনের সামনে একটি গাছ পড়ে যায়, যার ডাল পড়ে একটি প্রাইভেটকারের ক্ষতি হয়। বিকেল পৌনে ৪টার দিকে গুলশান-১ অ্যাভিনিউর উদয় টাওয়ারের সামনে ফুটপাতে একটি গাছ পড়ে, যার নিচে চাপা পড়ে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা।

বিকেলের পরে মহাখালীর রওয়া ক্লাবের সামনে সড়কে একটি গাছ উপড়ে পড়ে। এতে জাহাঙ্গীর গেট থেকে মহাখালী পর্যন্ত সড়কে দীর্ঘ সময় যান চলাচল বন্ধ থাকে।

বিকেল ৪টার দিকে গ্রিন রোডে পানি ভবনের সামনে একটি গাছ উপড়ে পড়ে। এর আগে একই সড়কে আইবিএ হোস্টেলের সামনে একটি গাছ পড়ে। এতে কিছু সময়ের জন্য যান চলাচল বন্ধ থাকে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, মিন্টো রোড, প্রধান বিচারপতির বাসভবনের বাইরে, মিরপুর ১৩ নম্বরে স্কলাস্টিকা স্কুলের সামনে, ভাসানটেক সড়কসহ আরও অনেক জায়গায় গাছ উপড়ে পড়ে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবু নাসের বলেন, ধানমন্ডি, হকার মার্কেট, নিউমার্কেট, রবীন্দ্র সরোবরের পাশে, ক্রিসেন্ট গ্যাস্ট্রোলিভার অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতাল লেন, নঈম রোড, তল্লাবাগ, পুরান ঢাকার আলাউদ্দিন রোড, কমলাপুর ও বেইলি রোডসহ বেশকিছু এলাকায় পানি জমেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

তিনি বলেন, ‘আমাদের ৯১টি টিম মাঠপর্যায়ে পানি নিষ্কাশনে কাজ করছে। আমাদের পাম্পগুলো চালু আছে, জলাবদ্ধতা ও গাছ পড়ে যাওয়ার খবর দিতে আমাদের হটলাইন আছে’।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. মোকবুল হোসেন জানান, পানি অপসারণ এবং গাছ পড়া রোধে তাদের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের ৫ হাজার ৩০০ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী মাঠে কাজ করছে। এছাড়া ১০টি 'কুইক রেসপন্স' টিম কাজ করছে।

তিনি বলেন, ‘আমাদের হটলাইনে সকাল থেকে ৯৪টি ফোন এসেছে, যার বেশিরভাগই গাছ পড়ে যাওয়ার খবর। আমরা ডিএনসিসির আওতাধীন শেওড়াপাড়া, মিরপুর-১, কালশী, উত্তর খান, দক্ষিণ খানসহ ১৩টি এলাকাকে ‘হটস্পট’ হিসেবে চিহ্নিত করেছি। আমাদের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা সারাদিন এসব এলাকায় কাজ করেছে।'

বিডিনিউজ থেকে অনুদিত