বেনজীরের বিদেশে সম্পদের খোঁজ নিচ্ছে দুদক

সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে বিদেশে কোনো সম্পদ রয়েছে কি না, সেই খোঁজ নিচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বিদেশে সম্পদের খোঁজ নিতে দুদক চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে (বিএফআইইউ)। এরইমধ্যে বেনজীর ও তার স্ত্রী-সন্তানদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুদকে তলব করা হয়েছে। দেশে তাদের নামে থাকা বিপুল ভূ-সম্পত্তি, শেয়ার-সঞ্চয়পত্র, ফ্ল্যাট ক্রোক ও ফ্রিজের আদেশ দিয়েছেন আদালত।

সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদকে তলব করেছে দুদক

দুদকের একটি সূত্র জানিয়েছে, বেনজীর পরিবারের কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর ও দুবাইয়ে সম্পদ থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ নিয়ে প্রাথমিকভাবে বিভিন্ন সূত্রে কিছু তথ্যও পেয়েছে দুদক। সম্পদ রয়েছে কি না, কোন দেশে কী পরিমাণ সম্পদ রয়েছে, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য পেতে বিদেশে অর্থ পাচার নিয়ে কাজ করা সংস্থা বিএফআইইউকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

বিদেশে অর্থ পাচার ঠেকাতে নীতিমালা প্রণয়ন ও সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করে বিএফআইইউ। সংস্থাটি বিশ্বের ১৭০টি দেশের সংশ্লিষ্ট সংস্থার সমন্বয়ে গঠিত একটি আন্তর্জাতিক ফোরামের সদস্য। এই ফোরামের মাধ্যমে এক সদস্য দেশ আরেক দেশের কাছ থেকে কোনো ব্যক্তির সম্পদ সম্পর্কে তথ্য পেতে পারে। সংশ্লিষ্ট দেশের অনুমতি নিয়ে সেই তথ্য আদালতে পেশ করা যায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএফআইইউর একজন কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন, বেনজীর আহমেদ ও তার স্ত্রী-সন্তানদের বিষয়ে তথ্য চাওয়া হয়েছে। এ নিয়ে কাজ করছে বিএফআইইউ।

এদিকে বেনজীর আহমেদ, স্ত্রী জীশান মীর্জা ও তাদের দুই মেয়েকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে তলব করেছে দুদক। আগামী ৬ জুন বেনজীরকে এবং ৯ জুন জীশান মীর্জা ও মেয়েদের ডাকা হয়েছে।

দুদক কমিশনার জহিরুল হক বলেন, কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ পেলে, তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হয়, তার বক্তব্য জানতে হয়। আইনও সেটাই বলে। সেজন্যই বেনজীর ও তার স্ত্রী-সন্তানদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হয়েছে।

সম্প্রতি বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ ওঠায় বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান চালাচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন- দুদক। এরইমধ্যে বেনজীর ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে ৬২১ বিঘা জমি, ২৩টি কোম্পানির শেয়ার, গুলশানে চারটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট, ৩০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র, ৩৩টি ব্যাংক হিসাব এবং শেয়ার ব্যবসার তিনটি বিও হিসাবের সন্ধান পেয়েছে দুদক। আদালতের আদেশে এসব সম্পদ জব্দ ও অবরুদ্ধ করা হয়েছে।

দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৩ মে আদালত বেনজীর ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে ৮৩টি দলিলে থাকা ৩৪৫ বিঘা ভূ-সম্পত্তি ক্রোক ও ৩৩টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের নির্দেশ দেন।

একইভাবে গত ২৬ মে আদালত ফের ১১৯টি দলিলে ২৭৬ বিঘা জমি, ২৩টি কোম্পানির শেয়ার এবং গুলশানের ৪টি ফ্ল্যাট ক্রোকের আদেশ দেন। এসব আদেশ দেন ঢাকা মেট্রোপলিটন আদালতের সিনিয়র স্পেশাল জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন। আদালতের আদেশের বাস্তবায়ন শুরু করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

বেনজীর আহমেদ ২০২০ সালের ১৫ এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আইজিপি ছিলেন। এর আগে তিনি ডিএমপি কমিশনার ও র‍্যাবের মহাপরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।

বেনজীর আহমেদ ৩৪ বছর ৭ মাসের দীর্ঘ চাকরি জীবনে যা বেতন-ভাতা পেয়েছেন, তার তুলনায় তার ও স্ত্রী-কন্যাদের নামে থাকা বিপুল পরিমাণ অর্থ-সম্পত্তি মারাত্মকভাবেই অসম। আর এতেই তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত ও অবৈধ বিপুল সম্পদের মালিক হওয়ার অভিযোগ ওঠেছে।