স্বায়ত্তশাসিত, স্বশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, বিধিবদ্ধ বা সমশ্রেণিভুক্ত প্রতিষ্ঠান এবং তাদের অধীনস্থ সংস্থার কর্মীদের সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার আওতায় আনার জন্য ‘প্রত্যয় প্রকল্প’ চালু করেছে সরকার। সম্প্রতি এই প্রকল্প সংক্রান্ত কিছু বিষয়ে স্পষ্টীকরণ দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

logo bangladesh govtবাংলাদেশ সরকারের লোগো

জানা গেছে, ১ জুলাই ২০২৪ থেকে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে একটি টেকসই পেনশন ব্যবস্থার আওতায় আনার লক্ষ্যে এই প্রকল্প শুরু হয়েছে।

এই প্রকল্পটি মূলত স্বায়ত্তশাসিত, স্বশাসিত এবং রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান এবং তাদের অধীনস্থ সংস্থাগুলোর জন্য প্রযোজ্য। বর্তমানে দেশে ৪০৩টি স্বায়ত্তশাসিত, স্বশাসিত এবং রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৯০টি প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব পেনশন ব্যবস্থা আছে। বাকি প্রতিষ্ঠানগুলো কন্ট্রিবিউটরি প্রভিডেন্ট ফান্ডের (সিপিএফ) অধীনে রয়েছে। তাদের কর্মীরা এককালীন অর্থ সুবিধা পান, পেনশন পান না।

সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, স্বশাসিত এবং রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ছাড়া দেশের বিপুল সংখ্যক মানুষ কোনো পেনশন ব্যবস্থার আওতায় নেই। সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের জন্য টেকসই পেনশন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সরকার 'সার্বজনীন পেনশন প্রকল্প' চালু করেছে।

'সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন, ২০২৩'-এর ধারা ১৪ (২) অনুযায়ী, দেশের সকল নাগরিকের জন্য পেনশন প্রকল্প চালুর বিধান রাখা হয়েছে। ১ জুলাই ২০২৪ তারিখ থেকে স্বায়ত্তশাসিত, স্বশাসিত এবং রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানে যোগদানকারী সকল কর্মী ‘প্রত্যয় প্রকল্পের'’ আওতায় আসবেন।

২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী স্পষ্টভাবে বলেছিলেন যে, ১ জুলাই ২০২৫ তারিখ থেকে সরকারি চাকরিতে যোগদানকারীরা ‘সার্বজনীন পেনশন’-এর আওতায় আসবেন।

‘প্রত্যয় প্রকল্প’ সংক্রান্ত আরও কিছু স্পষ্টীকরণ:

নতুন পেনশন স্কিম 'প্রত্যয়' সম্পর্কে কিছু জরুরি তথ্য:

১. স্থায়ী সুযোগ-সুবিধা: ৩০ জুন, ২০২৪ তারিখ পর্যন্ত যারা সরকারি চাকরিতে কর্মরত (শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী) আছেন, তাদের সকলের ক্ষেত্রেই আগের মতো পেনশন সুবিধা বহাল থাকবে।

২. নতুন পদ্ধতি: বর্তমানে ‘আনফান্ডেড ডিফাইন্ড বেনিফিট সিস্টেম’ পেনশন ব্যবস্থায় সরকারি তহবিল থেকে পেনশনের সমস্ত খরচ বহন করা হয়। নতুন 'প্রত্যয়' স্কিমে 'ফান্ডেড ডিফাইন্ড কন্ট্রিবিউটরি' পেনশন ব্যবস্থা চালু করা হচ্ছে, যেখানে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো নির্দিষ্ট হারে বেতন থেকে কেটে প্রতি মাসে একটি তহবিলে জমা রাখা হবে।

'প্রত্যয়' স্কিমে কীভাবে কাজ করবে:

প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা/কর্মচারীর মূল বেতনের ১০% বা সর্বোচ্চ ৫,০০০ টাকা, যেটি কম হবে, তা কর্তন করবে।

প্রতিষ্ঠান কর্তনকৃত টাকার সমপরিমাণ অর্থ জমা করবে।

উভয় অর্থ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা/কর্মচারীর তহবিল হিসাবে জমা থাকবে।

৩. স্থায়িত্ব: বর্তমান 'আনফান্ডেড' ব্যবস্থায় সরকারের ওপর অর্থনৈতিক চাপ বেশি, যা দীর্ঘমেয়াদী স্থায়িত্বের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। নতুন 'ফান্ডেড' ব্যবস্থায় তহবিল গঠিত হবে এবং বিনিয়োগের মাধ্যমে তা আরও বাড়বে, যা দীর্ঘমেয়াদী স্থায়িত্ব নিশ্চিত করবে। উল্লেখ্য, প্রতিবেশী দেশ ভারতে ২০০৪ সাল থেকে 'ফান্ডেড' ব্যবস্থা চালু রয়েছে।

৪. সামাজিক নির্ভরতা: নতুন পেনশন ব্যবস্থা ‘প্রত্যয়’ সকল শ্রেণির মানুষকে একটি স্থায়ী সামাজিক নিরাপত্তা কাঠামোর আওতায় আনতে সহায়তা করবে।

৫. বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ক্ষেত্রে: যদি কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আবেদন করে তার নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে অথবা অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে একই পদে অথবা উচ্চতর পদে নিযুক্ত হন, তবে তিনি 'সার্ভিস প্রটেকশন' ও 'পে প্রটেকশন' পাবেন।

এ ক্ষেত্রে তাকে নতুন নিয়োগ হিসেবে গণ্য করা হবে না এবং তিনি বিদ্যমান পেনশন সুবিধার আওতায় থাকার সুযোগ পাবেন।

শুধুমাত্র ১ জুলাই, ২০২৪ তারিখ এবং তার পরে নতুন করে যারা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক ও কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ পাবেন, তারাই 'প্রত্যয়' স্কিমের আওতায় আসবেন।

৬. পেনশন গ্রহণের বয়স: 'সার্বজনীন পেনশন ম্যানেজমেন্ট আইন' অনুযায়ী ৬০ বছর বয়স থেকে পেনশন গ্রহণের বিধান থাকলেও, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ৬৫ বছর বয়স থেকে পেনশন দেওয়া হবে, কারণ তারা ৬৫ বছর বয়সে অবসরে যান।

এ ক্ষেত্রে আইনে প্রয়োজনীয় সংশোধন আনা হবে।

৭. অন্যান্য সুবিধা: ল্যাম্প গ্রান্ট, পিআরএল এবং প্রভিডেন্ট ফান্ডের সুবিধা অব্যাহত থাকবে।

৮. মাসিক পেনশন: অবদানকারী পেনশন ব্যবস্থায় অংশগ্রহণকারীদের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার এককালীন অর্থ প্রদানের পরিবর্তে মাসিক পেনশনকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। এজন্য গ্রাচুইটির ব্যবস্থা রাখা হয়নি, বরং বিদ্যমান মাসিক পেনশনের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি মাসিক পেনশন প্রদানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

উদাহরণ: ‘প্রত্যয়’ স্কিমে যদি মাসিক বেতন থেকে ৫,০০০ টাকা কর্তন করা হয় এবং প্রতিষ্ঠান সমপরিমাণ অর্থ জমা করে, তবে ৩০ বছর পর একজন পেনশনভোগী প্রতি মাসে ১,২৪,৬৬০ টাকা হারে আজীবন পেনশন পাবেন।

তার নিজস্ব আয়ের মোট জমা হবে ১৮ লক্ষ টাকা এবং যদি তিনি ১৫ বছর পেনশন ভোগ করেন তবে তার মোট আয় হবে ২,২৪,৩৮,৮০০ টাকা যা তার মোট জমার তুলনায় প্রায় ১২.৫ গুণ বেশি।

অবসর গ্রহণের পর ৩০ বছর যারা বেঁচে থাকবেন তারা তাদের জমার প্রায় ২৫ গুণ পেনশন পাবেন।

৯. মৃত্যুর পর পেনশন: বর্তমান ব্যবস্থায় পেনশনভোগী আজীবন পেনশন পেয়ে থাকেন। তার মৃত্যুর পর তার পত্নী এবং প্রতিবন্ধী সন্তানরা আজীবন পেনশন পেয়ে থাকেন। নতুন পেনশন ব্যবস্থায়ও পেনশনভোগী আজীবন পেনশন পাবেন।

পেনশনভোগীর মৃত্যুর পর তার পত্নী অথবা মনোনীত ব্যক্তি পেনশন শুরুর তারিখ থেকে বাকি ১৫ বছরের জন্য পেনশন পাবেন।

উদাহরণস্বরূপ, একজন পেনশনভোগী অবসর গ্রহণের পর পাঁচ বছর পেনশন পেয়ে মারা গেলে, তার পত্নী অথবা মনোনীত ব্যক্তি আরও দশ বছর পেনশন পাবেন।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.