সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংস্কার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে মধ্যরাতে উত্তাল হয়ে উঠেছিল দেশের প্রায় সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্যাম্পাসের আবাসিক হলগুলো থেকে দলে দলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে রাস্তায় নেমে আসেন। এ সময় কোথাও কোথাও ছাত্রলীগ কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষের কথাও শোনা গেছে। তিন-চার ঘণ্টা বিক্ষোভের পর ভোরের দিকে তারা ক্যাম্পাসে ফিরে যান।

du studentsঢাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

রোববার (১৪ জুলাই) বিকেলে চীন সফরের বিস্তারিত তুলে ধরতে সংবাদ সম্মেলন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে অনিবার্যভাবে উঠে আসে কোটা আন্দোলনের ইস্যুটিও। সাংবাদিকদের করা এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করেন, মুক্তিযুদ্ধ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনিরা চাকরিতে কোটা পাবে না। তাহলে কি রাজাকারের নাতি-নাতনিরা পাবে? তা তো আমরা হতে দিতে পারি না।

প্রধানমন্ত্রীর এ মন্তব্যকে ‘আন্দোলনকারীদের প্রতি অবমাননাকর’ দাবি করে এর প্রতিবাদে সরব হয় কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরা। এর মধ্যে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটলে বিষয়টি আরও জটিল হয়।

জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হলগেটে আটকে রাখা শিক্ষার্থীদের উদ্ধার করতে গিয়ে ছাত্রলীগের হামলার শিকার হন আসিফ। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দলে দলে বেরিয়ে আসতে থাকেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ পরিস্থিতির ঢেউ লাগে দেশের প্রায় সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে।

ru studentsরাবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

রোববার (১৪ জুলাই) রাত সাড়ে ১০টার পর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের রাস্তায় নেমে আসার খবর আসতে থাকে।

রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর হাজার হাজার শিক্ষার্থী এ বিক্ষোভে যুক্ত হন। এ সময় তারা ‘তুমি কে আমি কে- রাজাকার রাজাকার’, ‘কে বলেছে কে বলেছে, সরকার-সরকার’, ‘রাজাকার আসছে, রাজপথ কাঁপছে’, ‘এই বাংলার মাটি- রাজাকারের ঘাঁটি’, ‘চেয়েছিলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার’- স্লোগানে ক্যাম্পাস প্রকম্পিত করে তোলেন।

শিক্ষার্থীরা বলেন, তারা শান্তিপূর্ণভাবেই কোটার যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করে আসছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিষয়টির সমাধানের দাবিও জানিয়েছিলেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী সমাধানের কোনো পথ বাতলে না দিয়ে উল্টো তাদের অবমাননা করেছেন। সরকারপ্রধানের কাছ থেকে তারা এমনটি কোনোভাবেই প্রত্যাশা করেন না।

প্রথমেই বিক্ষোভের কথা শোনা যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। রাত সাড়ে ১০টার দিকে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন হল থেকে বের হয়ে আসেন শিক্ষার্থীরা। হাজী মুহম্মদ মুহসিন হল, সূর্যসেন হল, বিজয় একাত্তর হল, জিয়াউর রহমান হল, বঙ্গবন্ধু হল, জসিম উদ্দিন হল, শহীদুল্লাহ হল, জগন্নাথ হল, এফএইচ হল, একুশে হলের শিক্ষার্থীরা মিছিলে যুক্ত হন। একই সময়ে বিভিন্ন হলের গেটের তালা ভেঙে রাস্তায় নামতে দেখা যায় ঢাবি ছাত্রীদেরও। শামসুন্নাহার হল, রোকেয়া হল, সুফিয়া কামাল হল, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল ও বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হল থেকে তারা গেটের তালা ভেঙে রাস্তায় বের হয়ে আসেন।

এদিকে রাত সোয়া ১১টার দিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের জিরো পয়েন্টে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করেন। এর কিছুক্ষণ পর ছাত্রলীগের চার-পাঁচজন নেতাকর্মী সেখানে গিয়ে কয়েকটি পটকা ফোটালে আন্দোলনকারীরা সেখান থেকে সরে গিয়ে শহীদ মিনারের দিকে যেতে থাকেন। এ সময় মিছিলে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেন আন্দোলনকারীরা।

প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যের প্রতিবাদে মধ্যরাতে হল থেকে বেরিয়ে রাস্তায় নামেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীরাও। রাত সাড়ে ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে শিক্ষার্থীরা বের হয়ে এসে বিক্ষোভ শুরু করেন। ছাত্রীদের হলগেট তালাবদ্ধ থাকার খবর পেয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সেখানে যান। পরে প্রহরীরা তালা খুলে দিলে ছাত্রীরাও রাস্তায় নামেন।

রাত সাড়ে ১১টার দিকে ‘তুমি কে আমি কে- রাজাকার রাজাকার’ স্লোগানে বিক্ষোভ শুরু করেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহপরান হল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ও সৈয়দ মুজতবা আলী হল ও ছাত্রী হলগুলোর শিক্ষার্থীরা এতে যোগ দেন।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীরা মধ্যরাতে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে তাঁতিবাজার মোড় অবরোধ করেন। কিছুক্ষণ সেখানে থাকার পর শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ফিরে গিয়ে সেখানে বিক্ষোভ করেন।

এদিকে রাত সাড়ে ১১টার দিকে রাস্তায় নামেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকা থেকে শুরু হওয়া এ বিক্ষোভ মিছিলে শিক্ষার্থীদের ‘তুমি কে আমি কে- রাজাকার, রাজাকার’, ‘আমরা কেন রাজাকার, জবাব চাই, জবাব চাই’ স্লোগান দিতে দেখা যায়। মিছিল নিয়ে প্রথমে তারা বটতলায় জমায়েত হন। পরে ছাত্রলীগ কর্মীরা আন্দোলনকারী দুই শিক্ষার্থীকে আটকে রেখেছে এমন খবর শুনে তারা মিছিল নিয়ে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হল ঘেরাও করেন।

রাত সাড়ে ১২টায় উত্তাল হয়ে উঠে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি)। আন্দোলনকারীদের পাশাপাশি মিছিল বের করেন শাবিপ্রবি শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাও। একপর্যায়ে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ও অ্যাকাডেমিক ভবন ডি’এর সামনে মুখোমুখি অবস্থান নেয় দুই পক্ষ। তখন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের উদ্দেশে ‘ভুয়া, ভুয়া’ স্লোগান দেয় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।

রাত আড়াইটার দিকে রাস্তায় নেমে আসে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীরাও। বিভিন্ন হল থেকে ছোট ছোট মিছিল নিয়ে তারা বুয়েট শহীদ মিনারের সামনে জড়ো হন। এরপর সেখান থেকে মিছিল নিয়ে পলাশী-নীলক্ষেত হয়ে ভিসি চত্বর-টিএসসি হয়ে পুনরায় বুয়েট ক্যাম্পাসে মিলিত হন।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.