দেশবাসীর কাছে বিচার চাইলেন প্রধানমন্ত্রী
- Details
- by নিজস্ব প্রতিবেদক
সারাদেশে সাম্প্রতিক সহিংসতার সময় সরকারি সম্পত্তির ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের বিচার দেশবাসীর কাছে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ বৃহস্পতিবার ভাঙ্যচুর করা মিরপুর-১০ মেট্রোরেল স্টেশন পরিদর্শনকালে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এদের (দেশব্যাপী সহিংসতার সঙ্গে জড়িত দুষ্কৃতিকারীদের) বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে দেশের মানুষকে। আমি জনগণের কাছে বিচার চাই। ধ্বংসযজ্ঞের বর্ণনা করার মতো ভাষা আমার জানা নেই।’
আজ সকালে মিরপুর-১০ মেট্রোরেল স্টেশনের ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ দেখে ক্ষোভে আবেগাপ্লুত হয়ে প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীর কাছে এ আহ্বান জানান।
গত ১৭ জুলাই থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলনের আড়ালে সরকারি সম্পত্তিতে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো এবং দেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধ করার জন্য গত ১৫ বছরে নির্মিত স্থাপনাগুলো ধ্বংস করে দেওয়া নৈরাজ্যকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলারও আহ্বান জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন মেট্রোরেল নির্মাণ করেছে। এর মাধ্যমে প্রতিদিন প্রায় আড়াই লাখ মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে না থেকে স্বল্পতম সময়ে তাদের কর্মস্থলে যাতায়াত করতে পারছে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের মেট্রোরেলের সবকিছুই আন্তর্জাতিক মানের। আমি সারা বিশ্বের অনেক দেশ ঘুরেছি। কিন্তু, আমাদের মেট্রোরেল সবচেয়ে আধুনিক।’
‘কিন্তু আজ আমি (মিরপুর-১০-এ মেট্রোরেল স্টেশনের বিভিন্ন অংশ পরিদর্শন করে) কী ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞই না দেখলাম! দেশের মানুষ কীভাবে এমনটা করতে পারে? তবুও তারা করেছে,’ তিনি বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মেট্রোরেল নির্মাণের সঙ্গে জড়িত প্রতিটি কর্মকর্তা এই ধ্বংসযজ্ঞ দেখে চোখের জলে ভেসে যাচ্ছেন।
‘এই মেট্রোরেলের সুবিধাভোগী কারা?’ প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন তোলেন।
‘কেবল আমার সরকারের কর্মকর্তা, মন্ত্রী আর আমিই কি এই মেট্রোরেলে চড়ি, নাকি জনগণ? কারা এর সুবিধা পাচ্ছে? আপনারা, দেশের সাধারণ মানুষেরাই এর সুবিধা পাচ্ছেন। তাহলে প্রশ্ন হলো, মেট্রোরেলের ওপর এতো রাগ কেন?’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কখন থেকে মেট্রোরেল চালু করা যাবে তিনি জানেন না।
তিনি দেশবাসীকে মনে করিয়ে দেন যে, অনেক বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে তারা নির্ধারিত সময়ের আগেই মেট্রোরেল নির্মাণ করেছিলেন।
উল্লেখ্য, গত ১৮ জুলাই থেকে মেট্রোরেল সেবা বন্ধ রয়েছে। ২২ জুলাই ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের জন্য যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, তার প্রতিবেদন পাওয়ার ১০ কর্মদিবসের মধ্যে মেট্রোরেলের কার্যক্রম পুনরায় শুরু হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার মেট্রোরেলের মতো যোগাযোগ অবকাঠামো নির্মাণ করে সারাদেশে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটিয়েছে।
তিনি ক্ষতিগ্রস্ত মেট্রোরেল স্টেশনগুলোর প্রসঙ্গ টেনে বলেন, এর জন্য দেশের মানুষকে, বিশেষ করে ঢাকাবাসীকে ভুগতে হবে।
‘তাই আমি আপনাদের আহ্বান জানাচ্ছি, যারা আপনাদের জন্য (মেট্রোরেল ধ্বংস করে) এত কষ্টের সৃষ্টি করেছে তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। দেশের মানুষকে তাদের প্রতিরোধ করতে হবে,’ তিনি বলেন।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় গত শুক্রবার মিরপুর-১০ এবং কাজীপাড়া- এই দুটি মেট্রোরেল স্টেশনে ভাঙচুর চালানো হয়।
আবেগাপ্লুত কণ্ঠে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই মেট্রোরেল ধ্বংসের সবচেয়ে বড় ক্ষতিগ্রস্ত কারা? আমি জানি না কতদিন সময় লাগবে এই মেট্রোরেল এবং ভাঙচুর করা স্টেশনগুলো পুনরুদ্ধার করতে।’
শেখ হাসিনা বলেন, গত ১৫ বছরে তারা সকল স্থাপনাই তৈরি করেছেন দেশের মানুষকে আরও উন্নত জীবন ও উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রদানের জন্য।
‘এসব স্থাপনায় এমন তাণ্ডবের পেছনে কোন মানসিকতা কাজ করে?’ তিনি প্রশ্ন রাখেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি বাংলাদেশের মানুষকে নিজের আপনজন মনে করেন এবং সেই দর্শন থেকেই দেশের উন্নয়নের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
তিনি বলেন, গত ১৫ বছরে জনগণের কল্যাণে ও সুখের জন্য তিনি সবকিছুই করেছেন।
‘আমি খাদ্য নিরাপত্তা, বিদ্যুৎ, চিকিৎসা, শিক্ষা ও যোগাযোগ সবকিছুই নিশ্চিত করেছি। এই উন্নয়নের সুবিধাভোগী কারা?’ তিনি প্রশ্ন করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মনে করবেন না যে সব উন্নয়ন একদিনে হয়ে গেছে।’
তিনি পুনরায় জোর দিয়ে বলেন, যারা মেট্রোরেল এবং অন্যান্য সরকারি স্থাপনার সুবিধা পাচ্ছেন, তাদেরকেই নৈরাজ্যকারীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।
‘আমি মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি এবং আমি এটা করে দেখিয়েছি। কেউ এই কথা অস্বীকার করতে পারবে না,’ তিনি বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যখন দেশ উন্নয়নের শিখরে পৌঁছানোর জন্য এগিয়ে যাচ্ছে, তখন ষড়যন্ত্রকারীরা দেশকে পিছনে টেনে ধরার চেষ্টা করছে।’
‘কেন? এটাই আমার প্রশ্ন। আর কে এর উত্তর দেবে তা আমি জানি না,’ তিনি বলেন।
কোটা সংস্কার আন্দোলন সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিষয়টি নিয়ে তিনি খুবই বেদনাবোধ করছেন। কারণ ২০১৮ সালে ছাত্ররা যখন কোটার বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিল, তখন তিনি সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা বাতিল করে দিয়েছিলেন।
মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের দাবির প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট সেই আদেশ বাতিল করে।
‘আমরা এর বিরুদ্ধে আবেদন করেছি। তারা (সুপ্রিম কোর্ট) হাইকোর্টের আদেশের উপর স্ট্যাটাস কো জারি করে এবং সকল পক্ষের কথা শুনানির পর সিদ্ধান্ত দেওয়ার জন্য সময় বৃদ্ধি করে,’ তিনি বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, তিনি আন্দোলনরত ছাত্রদের বারবার ধৈর্য ধরার জন্য এবং সুপ্রিম কোর্টের প্রতি বিশ্বাস রাখার জন্য বলেছিলেন।
‘আমি তাদের (কোটা সংস্কার আন্দোলন) থেকে বিরত থাকার জন্য আহ্বান জানিয়েছিলাম। কিন্তু, তারা তা মানেনি,’ তিনি বলেন।
সূত্র:বাাসস
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.