লুটের এত অস্ত্র-গুলি এখনও দুর্বৃত্তদের হাতে!
- Details
- by নিজস্ব প্রতিবেদক
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে সহিংসতা, ধ্বংসযজ্ঞ ও হতাহতের ঘটনায় এখনও থমথমে পুরো দেশ। ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদীসহ বেশ কিছু জায়গায় এখনো চলছে কারফিউ। এদিকে নরসিংদী ও নারায়ণগঞ্জ থেকে লুট হওয়া ৪৮ অস্ত্র ও ৭০০ রাউন্ড গুলি এখনও রয়েছে দুর্বৃত্তদের হাতে।
ফের সহিংসতার আশঙ্কায় আজ শুক্রবার ঢাকায় নেওয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা
লুট হওয়া এত অস্ত্র-গুলি এখনও দুর্বুত্তদের হাতে থেকে যাওয়ায় এবং তা উদ্ধার না হওয়ায় জননিরাপত্তার জন্য হুমকির আশঙ্কা করা হচ্ছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে দৈনিক সমকাল পত্রিকা। পত্রিকাটি শিরোনাম দিয়েছে, ‘লুটের ৪৮ অস্ত্র ও ৭০০০ গুলি এখনও দুর্বৃত্তদের হাতে’।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুর্বৃত্তরা ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় পুলিশের স্থাপনা টার্গেট করেছিল। পুলিশের চেকপোস্ট, ফাঁড়ি ও থানা আক্রান্ত হয়েছে। নরসিংদী কারাগারে হামলা হয়েছে।
পুলিশ সদরদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, নরসিংদী কারাগার থেকে ৮০০০ রাউন্ডের বেশি গুলি ও ৮৫টি অস্ত্র লুট করে নেয় হামলাকারীরা। নারায়ণগঞ্জে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে সেখান থেকে ছিনিয়ে নেয় ৩টি অস্ত্র। অন্য আরেকটি জেলা থেকে পুলিশের অস্ত্র খোয়া গেছে একটি। সব মিলিয়ে লুট হয়েছে ৮৯টি অস্ত্র। এর মধ্যে উদ্ধার হয়েছে ৪১টি অস্ত্র এবং ১০০০ রাউন্ড গুলি। সেই হিসাবে লুট হওয়া ৪৮ অস্ত্র ও ৭০০০ রাউন্ড গুলি এখনও দুর্বৃত্তদের হাতে।
অতিরিক্ত আইজিপি আনোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, লুট হওয়া অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করতে জোর অভিযান চলছে। বিভিন্ন এলাকার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ ও গোয়েন্দা তথ্য মিলিয়ে নাশকতায় জড়িতদের চিহ্নিত ও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।
চলতি মাসের শুরুতে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার দাবিতে আন্দোলন শুরু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। প্রথমে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন ধীরে ধীরে সহিংস হয়ে ওঠে। গত ১৮ জুলাই থেকে ২২ জুলাই ছিল উত্তপ্ত পরিস্থিতি। সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে জ্বালাও-পোড়াও চালানো হয়।
পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার ঢাকার পরিস্থিতি সবচেয়ে নাজুক ছিল। এই দু’দিন ঢাকার যাত্রাবাড়ী, সাইনবোর্ড, রামপুরাসহ অনেক এলাকা আন্দোলনকারীদের দখলে ছিল। সরকারি স্থাপনা আক্রান্তও হলে পুলিশ-র্যাব তা প্রতিহত করতে পারেনি। এক পর্যায়ে হেলিকপ্টার থেকে কাঁদানে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে র্যাব।
সারাদেশে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২০৪:
ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় সংঘর্ষে আহত হয়ে চিকিৎসাধীন আরও তিনজনের মৃত্যু হয়েছে বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই)। তাদের মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দুজন এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) একজন মারা গেছেন। তারা হলেন জামান মিয়া (১৭), জাকির হোসেন (২৯) ও সোহেল রানা (২০)।
দৈনিক প্রথম আলোর এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে বিক্ষোভ ও পরবর্তী সংঘাতে এ নিয়ে ২০৪ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। মৃত্যুর এই হিসাব কয়েকটি হাসপাতাল ও নিহতদের স্বজনদের সূত্রে পাওয়া গেছে।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ১৬ জুলাই ৬ জন, ১৮ জুলাই ৪১ জন, ১৯ জুলাই ৮৪ জন, ২০ জুলাই ৩৮ জন, ২১ জুলাই ২১ জন, ২২ জুলাই ৫ জন, ২৩ জুলাই ৩ জন, ২৪ জুলাই ৩ জন এবং ২৫ জুলাই ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে গত সোম, মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবারের সব মৃত্যু ঘটেছে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালে।
এদিকে ঘটনাস্থলে নিহত অনেকের মরদেহ হাসপাতাল অবধি নেওয়া হয়নি। তাই নিহতের প্রকৃত সংখ্যাও অজানা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিহতের তালিকা করছে বলে জানা গেছে।
হাসপাতালে ভর্তি আহত কয়েক হাজার, অধিকাংশই গুলিবিদ্ধ:
গত ১৮ থেকে ২১ জুলাই– চার দিনে সংঘর্ষে হতাহত কয়েক হাজার ব্যক্তিকে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে নারী, শিশুসহ সব বয়সী মানুষ ছিলেন। অধিকাংশ ছিলেন গুলিবিদ্ধ। ছররা ও বুলেট দুই ধরনের গুলিই ছিল আহতদের শরীরে।
সমকাল পত্রিকার আরেক প্রতিবেদনে জানানো হয়, বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) পর্যন্ত হাজারের বেশি আহত ব্যক্তি চিকিৎসাধীন ছিলেন ঢাকার বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে।
শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনের জেরে ১৮ জুলাই থেকে পরের তিন দিন ব্যাপক সহিংসতা হয় রাজধানীর যাত্রাবাড়ী-শনির আখড়া, উত্তরা-আবদুল্লাহপুর, রামপুরা-বাড্ডা এবং মোহাম্মদপুর-বছিলা এলাকায়। এসব এলাকার আশপাশের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই তিন দিনে ৪ হাজারের বেশি ব্যক্তি চিকিৎসা নিয়েছেন। চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয়েছিল পুলিশ ও আনসার সদস্যকেও।
কারফিউ বলবৎ, তবে আরও শিথিল:
রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে চলমান কারফিউ আরেকটু শিথিল করা হয়েছে। ঢাকা, নরসিংদী, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জে আজ শুক্রবার ও আগামীকাল শনিবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল থাকবে। বৃহস্পতিবার রাতে এই ঘোষণা দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। গত বৃহস্পতিবার ও বুধবার এসব এলাকায় সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল ছিল।
ধানমন্ডিতে নিজ বাসভবনে বৃহস্পতিবার রাত ১০টায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। বৈঠক শেষে রাত ১২টার দিকে কারফিউ শিথিলের ঘোষণা দেন তিনি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ঢাকা মহানগর ও ঢাকা জেলা, গাজীপুর মহানগর ও গাজীপুর জেলা, নরসিংদী ও নারায়ণগঞ্জে কারফিউ বলবৎ থাকবে। তবে এসব এলাকায় শুক্র ও শনিবার সকাল ৮টা থেকে ৫টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল থাকবে। অন্যান্য জেলায় কারফিউর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকরা।
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে বিক্ষোভ ও সংঘর্ষের পরিপ্রেক্ষিতে গত শুক্রবার (১৯ জুলাই) রাত ১২টা থেকে সারা দেশে জারি করা হয় কারফিউ। মোতায়েন করা হয় সেনাবাহিনী।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.