কোটা সংস্কার আন্দোলনের তিন সমন্বয়কারীকে, যাদের মধ্যে নাহিদ ইসলামও রয়েছেন, পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) তাদের হেফাজতে নিয়েছে। এর আগে শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল থেকে সাদা পোশাকে একদল লোক তিনজন সমন্বয়কারীকে তুলে নিয়ে যায় বলে জানা গেছে। তারা সকলেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।

nahid islam asif mahmud and abu bakerনাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ ও আবু বকর

হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক এবং ঘটনাস্থলে উপস্থিত একজন সমন্বয়কারীর আত্মীয়স্বজন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, বিকেল ৩টা ৩০ মিনিটের দিকে তাদের হাসপাতাল থেকে নিয়ে যাওয়া হয়।

কর্তব্যরত চিকিৎসকদের মতে, সাদা পোশাকধারীদের মধ্যে কেউ কেউ নিজেদের পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সদস্য বলে পরিচয় দেন। আবার কেউ কেউ পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের সদস্য বলে দাবি করেন।

ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে রাত সাড়ে ৮টার দিকে সিটিটিসির প্রধান মো. আসাদুজ্জামান বলেন, তারা কোটা সংস্কার আন্দোলনের কোনো সমন্বয়কারীকে তাদের হেফাজতে নেয়নি।

রাত ৯টা ১৫ মিনিটের দিকে এই প্রতিবেদন লিখা পর্যন্ত ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অন্য কোনো ইউনিট কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতাদের তুলে নেয়ার বিষয়টি স্বীকার করেনি। পরে রাতে ডিবি তাদের হেফাজতে নেয়ার কথা স্বীকার করে।

রাত সাড়ে ১১টার দিকে ডিবির অতিরিক্ত উপকমিশনার জুনায়েদ আলম বলেন, নিরাপত্তার স্বার্থে তিনজন সমন্বয়কারীকে ডিবি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তাদের কাছে সহিংসতার ঘটনা সম্পর্কে কোনো তথ্য আছে কিনা তা জানতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

নাহিদ, আসিফ এবং আবু বকর - তারা সকলেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী।

তাদের ঘোষিত অবরোধ কর্মসূচি এবং পরবর্তী সংঘর্ষের পর গত ১৯ জুলাই খিলগাঁওয়ের নন্দীপাড়ায় বন্ধুদের বাসা থেকে নাহিদ ইসলামকে তুলে নেওয়া হয়। এর একদিন পর শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্নসহ তাকে পূর্বাচল এলাকায় ফেলে রাখা হয়। এরপর থেকে তিনি গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

অন্য দুইজন - আসিফ এবং আবু বকরকেও একই দিন অপহরণ করা হয়েছিল এবং পাঁচ দিন পর তারা মুক্তি পান। এরপর থেকে আসিফও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন, আবু বকর তার সঙ্গে ছিলেন।

বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে হাসপাতালে গিয়ে জানা যায়, ৭ম তলার ৭০৩ নম্বর কক্ষে স্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন নাহিদ। ৩ তলার ৩১১ নম্বর কক্ষে আবু বকরের সঙ্গে ছিলেন আসিফ।

নাহিদের স্ত্রী যখন ঘুমিয়ে ছিলেন, তখন সাদা পোশাকধারীরা প্রথমে তাকে কক্ষ থেকে নিয়ে যায়। পরে তারা আসিফের কাছে যায় এবং আবু বকরকে সঙ্গে নিয়ে তাকে বের করে নিয়ে আসে।

কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতাদের সঙ্গে হাসপাতালের একজন কর্মচারীকেও তুলে নেওয়া হয়।

এই ঘটনা জানার পর নাহিদের স্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং বর্তমানে তিনিও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তার সঙ্গে রয়েছেন ফাতিমা তাসনীম নামের এক মহিলা, যিনি নিজেকে নাহিদের বোন বলে পরিচয় দেন।

ফাতিমা তাসনীম বলেন, আসিফদের কক্ষ থেকে তাদের যখন নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তখন তিনি সেখানে যান। তিনি দেখতে পান, চার জন পুরুষ ধমক দিয়ে এবং জোর করে আসিফ এবং আবু বকরকে কক্ষ থেকে বের করে নিয়ে যাচ্ছে।

একপর্যায়ে তিনি এবং নার্সরা মিলে তাদের বলেন, রোগীদের তো এখনও ছাড়পত্র দেওয়া হয়নি। কিন্তু তারা ধমক দিয়ে জবাব দেন।

ফাতিমা তাসনীম বলেন, সাদা পোশাকধারীরা নার্স ইনচার্জকে বলছিল, 'আপনারা কি কাউন্টার টেরোরিজম চেনেন? এর কোন ধারণা আছে?’ পরে তারা দুইজনকে (সমন্বয়কারী) নীচে নিয়ে যায়।’

তিনি আরও বলেন, তাদের মোবাইল ফোন আটক করে অন্য একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা তারা নিজেদের মধ্যে কথা বলছিলেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আসিফের চিকিৎসায় জড়িত একজন চিকিৎসক জানান, সকাল ৭টার দিকে তিনি আসিফ মাহমুদের কক্ষের সামনে কিছু অপরিচিত লোককে ঘোরাঘুরি করতে দেখেন। পরের ঘন্টাগুলোতে লোকজনের সংখ্যা আরও বেড়ে যায়। তাদের মধ্যে কেউ কেউ চিকিৎসকের পরিচয় সম্পর্কেও জিজ্ঞাসা করেন।

বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ডিবি এবং সিটিটিসির সদস্য বলে পরিচয় দিয়ে কিছু লোক আসিফকে তাদের সঙ্গে যেতে বলেন। এবং চিকিৎসককে ঘটনায় জড়িত না হওয়ার জন্যও বলেন।

‘তারা আমাকে সেখান থেকে চলে যেতে বলেছিল, কিন্তু আমি রোগীর প্রতি আমার দায়িত্ব পালন থেকে বিচ্যুত হইনি। আমি তাদের বলেছি যে, আমি কোন রোগীকে ছাড়পত্র না দিয়ে যেতে দিতে পারি না। আসিফের শরীর এতটাই খারাপ ছিল যে, তাকে ছাড়পত্র দেওয়া সম্ভব ছিল না। তার শরীরে কোন আঘাতের চিহ্ন না থাকলেও, তার শরীরে কিছু একটা ইনজেকশন দেওয়া হয়েছিল,’ চিকিৎসক বলেন।

তিনি এবং হাসপাতালের অন্যান্য কর্মচারীরা তাদের প্রতিরোধ করার চেষ্টা করেন, কিন্তু তারা ব্যর্থ হন। পরে ঝুঁকি গ্রহণপত্রে স্বাক্ষর নিয়ে তারা আসিফকে নিয়ে যায়।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.