কোটা সংস্কার আন্দোলন: ১১ দিনে গ্রেপ্তার ৯ হাজারেরও বেশি

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সারাদেশে ব্যাপক বিক্ষোভ, সংঘর্ষ, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় গত ১১ দিনে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ৯ হাজারের বেশি লোককে গ্রেপ্তার করেছে।

সিএমএম কোর্ট থেকে, ছবি - সংগৃহীত

শনিবার পর্যন্ত গ্রেপ্তারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ১২১ জন। ৫৬ মহানগর ও জেলা পুলিশ সূত্রের তথ্যের ভিত্তিতে এই তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। শুক্রবার পর্যন্ত এই সংখ্যা ছিল ৬ হাজার ৫০০ জনের বেশি।

গত ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া বিক্ষোভ ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সহিংস সংঘর্ষের পর সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তী দিনগুলোতে হামলা, সংঘর্ষ, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। এর পরিপ্রেক্ষিতে দেশজুড়ে মামলা দায়ের করা হয় এবং এখনও মামলার সংখ্যা বাড়ছে।

গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও তাদের অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মী এবং বিএনপির মিত্র বিভিন্ন দলের শীর্ষ নেতারা রয়েছেন। কারও বিরুদ্ধে পুরনো মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হলেও, অনেককে নতুন মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

শনিবার এক বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, তাদের দলের কমপক্ষে ৩৫ জন কেন্দ্রীয় নেতা ও অসংখ্য নেতা-কর্মীকে এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

তিনি কোটা সংস্কার আন্দোলনে সরকারকে শিক্ষার্থীদের হত্যা ও নির্যাতনের অভিযোগ করেন এবং বলেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এখন বিরোধী দলগুলোর দিকে ঝুঁকে পড়েছে এবং বিরোধী নেতাদের হত্যা ও গ্রেপ্তার করার জন্য মিথ্যা মামলা ব্যবহার করছে।

তিনি আরও অভিযোগ করেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তাদের নেতা-কর্মীদের আদালতে হাজির করার আগেই গুলি করে পঙ্গু করে দিচ্ছে এবং তারপর বিচার বিভাগের মাধ্যমে তাদের রিমান্ডে নিয়ে নতুন করে নির্যাতন চালাচ্ছে।

ঢাকা ও এর আশেপাশের এলাকায় সবচেয়ে বেশি সংঘর্ষ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। উত্তরা, যাত্রাবাড়ী, মহাখালী, বাড্ডা, রামপুরা, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, মিরপুর ও আজিমপুরসহ পুরো রাজধানী সংঘর্ষের সময় যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়।

পরবর্তী দিনগুলোতে ঢাকা ও আশেপাশের এলাকা থেকে বিপুল সংখ্যক লোককে গ্রেপ্তার করা হয়। ২১ জুলাই রাত থেকে পুলিশ ও র‌্যাব রাজধানী জুড়ে অভিযান চালায়। তারা ভিডিও ফুটেজ ও ছবি বিশ্লেষণ করে সহিংসতায় জড়িতদের একটি তালিকাও প্রস্তুত করে।

ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) শনিবার জানিয়েছে, রাজধানীর বিভিন্ন থানায় মোট ২০৭টি মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং তারা মোট ২ হাজার ৫৩৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে, যার মধ্যে শুধু শনিবারই ২৫২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এদিকে, র‌্যাব মোট ২৯০ জনকে গ্রেপ্তারের খবর দিয়েছে – ৭১ জন ঢাকায় এবং ২১৯ জন জেলায়।

ঢাকার বাইরে সাভার, ধামরাই, আশুলিয়া, কেরানীগঞ্জ, নবাবগঞ্জ ও দোহার থেকে গ্রেপ্তারের খবর পাওয়া গেছে।

ঢাকা জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শনিবার জেলায় আরও চারটি মামলা দায়ের করা হয়েছে, যা মোট মামলার সংখ্যা ২৪-এ দাঁড়িয়েছে। তারা এসব মামলায় প্রায় ২০০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।

নারায়ণগঞ্জে শুক্রবার রাত থেকে শনিবার দুপুর পর্যন্ত ৫১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, ২৪টি মামলায় মোট ৪৮৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গাজীপুরে ৩৭টি মামলায় ৩৯৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এদিকে, চট্টগ্রামের আকবর শাহ থানায় শনিবার একটি নতুন মামলা দায়ের করা হয়েছে, যা মহানগর ও জেলায় মামলার সংখ্যা ৩০-এ দাঁড়িয়েছে। এসব মামলায় পুলিশ এ পর্যন্ত ৮৮৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।

রংপুরে ১২টি মামলায় মোট ১৮৫ জনকে, রাজশাহীতে ১৭টি মামলায় ৩৪৫ জনকে এবং বগুড়ায় ১৫টি মামলায় ২৯৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।