কোটা আন্দোলন: ১৮ জেলায় অন্তত ২৫৩ শিক্ষার্থী গ্রেপ্তার

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সারাদেশে সংঘর্ষ, হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থান থেকে শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। গত ১২ দিনে (১৬-২৮ জুলাই) ঢাকাসহ ১৮ জেলায় অন্তত ২৫৩ জন শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদের মধ্যে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীও রয়েছে।

পুলিশের গাড়ি

পুলিশ, কারা কর্তৃপক্ষ এবং গ্রেপ্তারকৃত শিক্ষার্থীদের পরিবারের সদস্যরা এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তবে, পুলিশের দাবি, শুধুমাত্র সহিংসতার সঙ্গে জড়িত আসামীদেরকেই গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। বিভিন্ন সহিংস ঘটনার ভিডিও ফুটেজের ভিত্তিতে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বিকেল পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ১৬ জন শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

এছাড়াও, চট্টগ্রামে ১২৬ জন, কুষ্টিয়ায় ২০ জন, সিলেটে ১৬ জন, বগুড়ায় আটজন, মাদারীপুরে ১৫ জন, রাজশাহীতে ১০ জন, মাগুরায় ছয়জন, সাতক্ষীরায় পাঁচজন, মৌলভীবাজারে দুইজন, জামালপুরে চারজন, ঢাকা জেলায় (শহর এলাকার বাইরে) ছয়জন, নওগাঁয় চারজন, জয়পুরহাটে চারজন, নীলফামারীতে তিনজন, সুনামগঞ্জে দুইজন, ফরিদপুরে তিনজন, চুয়াডাঙ্গায় একজন এবং নারায়ণগঞ্জে দুইজন শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে ৯ জন ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মী এবং আটজন ছাত্রদলের।

কোটা সংস্কার আন্দোলনের বিভিন্ন কর্মসূচি সংক্রান্ত অন্তত ১৬ টি মামলায় শিক্ষার্থীদের অভিযুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০ জন শিক্ষার্থীর নাম উল্লেখ করে পুলিশ একটি মামলা রেজিস্ট্রার করেছে। অন্য একটি মামলায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫ জন শিক্ষার্থীর নাম ও তাদের বিভাগের নাম অভিযুক্তের তালিকায় উল্লেখ করা হয়েছে।

এছাড়া রাজধানীর রূপনগর থানায় পৃথক দুটি মামলায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিইউবিটির (বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি) অজ্ঞাতপরিচয় শিক্ষার্থীসহ এক হাজার থেকে দেড় লাখ জনকে আসামি করা হয়েছে। ঢাকার আশুলিয়া থানায় আরেকটি মামলায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অজ্ঞাতনামা শিক্ষার্থীদের অভিযুক্ত করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বিক্ষোভ কেন্দ্র করে রাজধানীর শাহবাগ থানায় (১২-২১ জুলাইয়ের মধ্যে) ১১ টি মামলা দায়ের হয়। এসব মামলায় নাম পরিচয়হীন বিক্ষোভকারীদের অভিযুক্ত করা হয়েছে।

চট্টগ্রামে বেশি গ্রেপ্তার

গত ১৬-২৭ জুলাইয়ের মধ্যে চট্টগ্রাম শহর ও জেলায় অন্তত ১২৬ জন শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়, পুলিশ ও কারাগারের বিভিন্ন সূত্র থেকে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।

গ্রেপ্তারকৃতরা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম ইঞ্জিনিয়ারিং ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি, সরকারি সিটি কলেজ, চট্টগ্রাম কলেজ, হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ, চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, বাইতুশ শরাফ আদর্শ কামিল মাদ্রাসা, সুবহানিয়া আলিয়া মাদ্রাসা ও তনজিমুল উম্মাহ মাদ্রাসার শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে চট্টগ্রাম শহরের কোতোয়ালী থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে দায়ের করা একটি মামলায় সিইউইটির শিক্ষার্থী ফাহিম উদ্দিনকে গতকাল জেরার জন্য এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। তাকে ১৯ জুলাই গ্রেপ্তার করা হয়।

কারাগার থেকে গতকাল আদালতে হাজির করা হয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রমজান শেখকে। আদালত প্রাঙ্গণে পুলিশের উপস্থিতিতেই তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সিইউসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনেক শিক্ষার্থী কারাগারে বন্দী আছেন।

ডবলমুরিং থানার ধনিয়াল পাড়ার বাইতুশ শরাফ আদর্শ কামিল মাদ্রাসার মোট ১৩ জন শিক্ষার্থীকে ১৬ জুলাই গ্রেপ্তার করা হয়।

এদের একজন আজিজুল্লাহ কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন বলে দাবি তার বড় ভাই ও আইনজীবী হাফিজুল্লাহর। তিনি বলেন, তার ভাই কওমি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করে আলিয়া মাদ্রাসায় ফাজিল পড়ছেন। তার ভাইকে কেন গ্রেপ্তার করা হলো, তা তিনি বুঝতে পারছেন না।

চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (মিডিয়া) কাজী মো. তারেক আজিজ বলেন, মামলাগুলোতে কোনো শিক্ষার্থীকে অভিযুক্ত করা হয়নি। শুধু ঘটনার সঙ্গে জড়িত প্রকৃত আসামিদেরকেই গ্রেপ্তার করা হচ্ছে এবং পুলিশ নির্দোষ লোকজনদের গ্রেপ্তার করছে না।

তবে তদন্তে কেউ জড়িত না থাকলে তাকে মামলা থেকে বাদ দেওয়া হবে।

ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে ১৬ শিক্ষার্থী কারাগারে

কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সহিংসতার বিভিন্ন মামলায় ঢাকা মহানগরী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা মোট ১৬ জন শিক্ষার্থী এখন কারাগারে রয়েছেন। জানা গেছে, তাদের মধ্যে ছয়জন উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থী।

আইনজীবী ও আদালত সূত্র জানায়, যাত্রাবাড়ী থানার পৃথক মামলায় ছয়জন উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থী, মিরপুর থানার একটি মামলায় দুইজন, শাহবাগ থানার একটি মামলায় একজন এবং উত্তরা পশ্চিম থানার একটি মামলায় একজনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

এ ছাড়া খিলগাঁও মডেল কলেজের শিক্ষার্থী হাবিবুর রহমানকে খিলগাঁও থানায় দায়ের করা একটি মামলায়, সাইক নার্সিং কলেজের শিক্ষার্থী সাফায়েত হোসেনকে মিরপুর থানার একটি মামলায়, মিরপুর বাংলা কলেজের স্নাতকোত্তর শ্রেণির শিক্ষার্থী জহিরুল খানকে কাফরুল থানার মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়। নিউ মার্কেট থানার মামলায় গ্রেপ্তার তিন শিক্ষার্থী হলেন—মোহাম্মদপুর সেন্ট্রাল কলেজের রাব্বি এবং ঢাকা সেন্ট্রাল কলেজের ইয়াসিন ভূঁইয়া ও হারুন অর রশিদ।

আইনজীবী সূত্র জানায়, যাত্রাবাড়ী থানার একটি মামলায় মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের শিক্ষার্থী মোবাচ্ছের মোজাহিদ রফিকে, মিরপুর থানায় দায়ের করা একটি মামলায় নর্দান ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আপু রায়কে, উত্তরা পশ্চিম থানার একটি মামলায় ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী তানজিদুর রহমানকে এবং যাত্রাবাড়ী থানার একটি মামলায় ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী আল আমিনকে কারাগারে পাঠানো হয়।

এ ছাড়া ঢাকা জেলা পুলিশ সূত্র জানায়, গতকাল পর্যন্ত ডিএমপি এলাকার বাইরে থেকে ছয়জন শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশের দাবি, তারা সবাই ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।

প্রথম আলো থেকে অনূদিত