কোটা সংস্কার আন্দোলন: ডিএমপির নতুন পরিকল্পনা
- Details
- by নিজস্ব প্রতিবেদক
সম্প্রতি সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে দেশব্যাপী যে আন্দোলন ও সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়েছিল, তাতে পুলিশ কত রাউন্ড গুলি, কাঁদানে গ্যাসের শেল এবং সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করেছে তার হিসাব তৈরি করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতি এড়াতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) জনবল, সরঞ্জাম এবং সরবরাহ ব্যবস্থা জোরদার করার পরিকল্পনা করছে।
ডিএমপির লোগো
ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের বৃহত্তম পুলিশ ইউনিট ডিএমপিতে প্রায় ৩০ হাজার ২০০ জন সদস্য রয়েছেন। এর অর্ধেকই নগরীর আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত। পুলিশ কর্মকর্তারা মনে করেন, ভবিষ্যতে কোটা সংস্কার আন্দোলনের মতো আন্দোলন হতে পারে। তাই এমন পরিস্থিতিতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে তারা এখন থেকেই প্রস্তুতি শুরু করেছেন।
ডিএমপি'র বেশ কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তা মনে করেন, প্রথমদিকে পুলিশ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের প্রতি নমনীয় ছিল। এর সুযোগ নিয়েই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং জামায়াতে ইসলামী শিক্ষার্থীদের ব্যানারে আন্দোলনের নেতৃত্ব নেয়। পরবর্তীতে তারা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে এবং দেশব্যাপী তাণ্ডব চালায়। এতে পুলিশ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
পুলিশ কর্মকর্তারা আরও মূল্যায়ন করেছেন যে, প্রতিবাদকারীদের তুলনায় রাস্তায় পুলিশের সংখ্যা ছিল কম। ফলে, জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং নিজেদের সুরক্ষার জন্য পুলিশকে হিমশিম খেতে হয়েছে।
ঢাকার পুলিশ কর্মকর্তারা মনে করেন, যতক্ষণ পর্যন্ত সংঘর্ষ কয়েকটি নির্দিষ্ট স্থানে সীমাবদ্ধ ছিল, ততক্ষণ পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে ছিল। তবে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়লে পরিস্থিতি মোকাবেলা করা পুলিশের পক্ষে প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।
ডিএমপি'র একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, ডিএমপি'র আটটি ক্রাইম ডিভিশনের উপ-পুলিশ কমিশনারদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যাতে তারা কোটা সংস্কার আন্দোলনকেন্দ্রিক সংঘর্ষ প্রতিরোধে পুলিশ যেসব প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়েছে তার একটি মূল্যায়ন করেন এবং সেগুলো কাটিয়ে উঠতে কী করা দরকার তা জানান।
সংশ্লিষ্ট ক্রাইম ডিভিশনের উপ-পুলিশ কমিশনারদের 'ঝুঁকিপূর্ণ স্থান' চিহ্নিত করে সেসব স্থানে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় কত পরিমাণ অস্ত্র, গুলি, কাঁদানে গ্যাসের শেল এবং সাউন্ড গ্রেনেড প্রয়োজন হবে তার একটি তালিকা পুলিশ সদর দপ্তরে পাঠাতে বলা হয়েছে।
প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের তালিকা পুলিশ সদর দপ্তরে পাঠানো হবে। মহাপুলিশ পরিদর্শকের (আইজিপি) অনুমোদনের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় তালিকা অনুসারে অতিরিক্ত জনবল যোগ করা হবে এবং সরবরাহ ব্যবস্থা জোরদার করা হবে।
পুলিশ সদর দপ্তরের বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা জানান, যারা নগরীর ভেতরে সংঘর্ষ রোধে রাস্তায় পুলিশের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তাদের পূর্বে কোনো তথ্য বা পরিকল্পনা ছিল না। তারা আগে থেকে আক্রমণের সম্ভাব্য স্থানগুলি চিহ্নিত করতে পারেননি।
ডিএমপি'র যুগ্ম কমিশনার (অপারেশন্স) বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, ভবিষ্যতে যেকোনো পরিস্থিতিতে ডিএমপি'র সকল ইউনিটকে আরও শক্তিশালী করার জন্য সম্ভাব্য সকল পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।
সংঘর্ষ রোধে মাঠ পর্যায়ে কোনো পরিকল্পনা ছিল না বলে বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার দাবির প্রসঙ্গে বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় সংঘর্ষ এড়াতে নির্দিষ্ট পরিকল্পনার ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট ইউনিটের পুলিশ কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে বাহিনীকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।’
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন শুরু হয় ১ জুলাই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে আন্দোলনকারী ও ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনার পর দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে আন্দোলন।
পরের দিন থেকেই কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আক্রমণ, সংঘর্ষ, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও হতাহতের ঘটনায় অশান্ত হয়ে ওঠে।
এক পর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশকে সহায়তা করার জন্য সরকার বিজিবি মোতায়েন করে। তবে তারপরও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসেনি।
বাংলাদেশ টেলিভিশন, মেট্রোরেল স্টেশন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, সেতু ভবন, বিআরটিএ সদর দপ্তর, পুরাতন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ভবন, বেশ কয়েকটি থানা ও ফাঁড়িসহ সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।
ফলে, ক্রমেই বাড়তে থাকে হতাহতের ঘটনা। ২০ জুলাই থেকে সরকার সারাদেশে কারফিউ জারি করে এবং সেনাবাহিনী মোতায়েন করে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদ বলেন, ঢাকা ও এর আশেপাশের এলাকায় সংঘর্ষের বিষয়ে গোয়েন্দা সংস্থার কাছে কোনো পূর্ব তথ্য ছিল না। ফলে, পুলিশ আক্রান্ত হয়।
তিনি বলেন, রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সায়ীদের হত্যাকাণ্ডের পর দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে আন্দোলন, যা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে দেশব্যাপী ব্যাপক হতাহতের ঘটনা ঘটে।
সাবেক পুলিশ প্রধান আরও বলেন, ডিএমপিকে শক্তিশালী করতে শুধু বাহিনী ও সরবরাহ বৃদ্ধি করলেই চলবে না। প্রয়োজন সঠিকভাবে নজরদারি এবং যথাযথ প্রশিক্ষণ।
প্রথম আলো থেকে অনূদিত
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.