মির্জা ফখরুল: জনগণের শত্রুতে পরিণত হয়েছে সরকার

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ছাত্র বিক্ষোভ দমনে ‘নৃশংসতা’ চালিয়ে সরকার ‘জনগণের শত্রুতে’ পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বুধবার এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, সরকারের অস্তিত্ব সংকট ক্রমেই ঘনীভূত হচ্ছে।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

তিনি বলেন, ‘জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন এই সরকার নির্মম ও বর্বর হামলা এবং গণহত্যা চালিয়ে ইতিহাসে জনগণের শত্রুতে পরিণত হয়েছে।’

আন্দোলন দমনে নির্বিচারে হত্যাকাণ্ডকে মানবতাবিরোধী অপরাধ উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, এর বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে হওয়া উচিত।

মির্জা ফখরুল হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন যে, ‘ছাত্রদের নেতৃত্বাধীন গণআন্দোলনের মুখে বিপর্যস্ত ও বিচ্ছিন্ন সরকার যতই বেপরোয়াভাবে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার অভিযান চালাক না কেন, তাদের পতন রোধ করা যাবে না।’

তিনি সরকারের অন্যায়, দুর্নীতি এবং গণহত্যার বিরুদ্ধে সাহসিকতার সঙ্গে কথা বলার জন্য নাগরিক সমাজের সদস্য এবং বিভিন্ন পেশার মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

বিএনপি মহাসচিব গ্রেপ্তারকৃতদের অবিলম্বে এবং নিঃশর্ত মুক্তি, কারফিউ প্রত্যাহার, সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নেওয়া, সভা-সমাবেশের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার দাবি জানান।

তিনি বলেন, ‘আইন, সংবিধান, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং মানবিক মূল্যবোধকে তোয়াক্কা না করে জনগণের ক্ষোভ থেকে রক্ষা পেতে সরকার যা ইচ্ছা তাই করছে।’

তিনি অভিযোগ করেন যে, দেশকে স্বৈরাচারী ও ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করে গণতন্ত্র, ভোটাধিকার, বাক স্বাধীনতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলনের অধিকারসহ জনগণের সাংবিধানিক অধিকারকে সরকার নৃশংসভাবে ক্ষুন্ন করেছে।

ফখরুল অভিযোগ করেন, ‘অনেক শিক্ষার্থীকে তাদের ঘর থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে গুম করা হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানদের এবং শিক্ষার্থীদের কোনো সন্ধান পাচ্ছেন না।’

তিনি বলেন, ‘নিরাপত্তার আড়ালে সরকার ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কারীদের হাসপাতাল থেকে তুলে নিয়ে ডিবি কার্যালয়ে আটকে রেখেছে। আইনগত ভিত্তি ছাড়া এ ধরনের ঘটনা অভূতপূর্ব।’

‘নৃশংসতা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও শাসক দলীয় ক্যাডারদের ব্যবহার করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পর এই লজ্জাহীন সরকার রাষ্ট্রীয় শোকের নামে মিথ্যে কান্না করছে,’ বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, ‘বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীরা তাদের এই ভন্ডামি প্রত্যাখ্যান করেছে এবং গতকাল (মঙ্গলবার) ঐতিহাসিক লাল ডিজিটাল প্রতিবাদ সংগঠিত করে জনগণের ঐক্যের নিদর্শন তুলে ধরেছে।’

তিনি বলেন, ‘জনগণ এই হত্যাকারী সরকারকে প্রত্যাখ্যান করেছে এবং রাষ্ট্রীয় শোকের আড়ালে তাদের প্রকৃত চেহারা উন্মোচিত হয়েছে।’

তিনি অভিযোগ করেন, ‘ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, যশোরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে 'ন্যায়বিচারের দাবিতে' শিক্ষার্থীদের কর্মসূচিতে লাঠিচার্জ, কাঁদানে গ্যাস ও গ্রেপ্তারের মাধ্যমে বাধা দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।’ তিনি এসব ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান।

কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় গুলিতে হত্যার প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও, হত্যাকাণ্ডে জড়িত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন তিনি।

ফখরুল বলেন, ‘সরকার জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। নিজেদের রক্ষা করার জন্য তারা প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেপ্তার না করে বিরোধী দলের উপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করছে।’