ঢাকা থেকে দিল্লি: শেখা হাসিনার প্রথম ২৪ ঘণ্টা
- Details
- by ২৪ ডেস্ক
প্রধানমন্ত্রীয় পদ থেকে পদত্যাগ করার পরপারই সোমবার (৫ আগস্ট) বিকেলে প্রায় একই সময়ে ঢাকা থেকে দুটি অনুরোধ পৌঁছায় দিল্লিতে। একটি ‘আপাতত’ ভারতে আসার জন্য ‘অনুমোদন’ চেয়ে শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে, অন্যটি শেখ হাসিনাকে বহনকারী বিমানের ‘উড্ডয়ন ছাড়পত্র’ চেয়ে। অনুমতি মিলতেই সোমবার সন্ধ্যায় শেখ হাসিনাকে বহনকারী বিমানটি দিল্লিতে অবতরণ করে।
শেখ হাসিনা
মঙ্গলবার বিকেলে ভারতের সংসদের উচ্চকক্ষে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এসব তথ্য নিশ্চিত করেন। কিন্তু দিল্লির হিন্দন বিমানঘাঁটিতে অবতরণের পর শেখ হাসিনার ২৪ ঘন্টা কেটেছে অনিশ্চয়তা আর জল্পনা-কল্পনার মধ্যে।
দিল্লিতে পৌঁছানোর পর বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল এবং আরও কয়েকজন কর্মকর্তা।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিশেষ দূত হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অজিত দোভাল। বিমানবন্দর টার্মিনাল ভবনের লাউঞ্জে চা পানের সময় তাদের দীর্ঘ কথোপকথন হয়।
শেখ হাসিনার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, যিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক পরিচালক হিসেবে গত বছর থেকে দিল্লিতে অবস্থান করছেন, তিনি সে সময় থাইল্যান্ডে ছিলেন।
মা দিল্লিতে পৌঁছানোর খবর পেয়ে থাইল্যান্ড থেকে সরাসরি শেখা হাসিনার সঙ্গে কথা বলেন পুতুল এবং তারপর দিল্লির উদ্দেশ্যে রওনা হন। ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় যুক্তরাষ্ট্র থেকে একাধিকবার মায়ের সঙ্গে কথা বলেন।
সাময়িক বিরতি
প্রাথমিকভাবে ভারত ভেবেছিল, শেখ হাসিনার ভারত অবতরণ একটি সাময়িক বিরতি মাত্র। ধারণা করা হচ্ছিল, কয়েক ঘণ্টা পর তিনি তৃতীয় কোনো দেশে চলে যাবেন, যেটি হবে তার চূড়ান্ত গন্তব্য। তার সঙ্গে ব্রিটিশ পাসপোর্টধারী বোন শেখ রেহানার উপস্থিতিতে ভারতীয় কর্মকর্তারা মোটামুটি নিশ্চিত ছিলেন যে, সেই গন্তব্য হবে যুক্তরাজ্য।
শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক ব্রিটেনের শাসক শ্রমিক দল লেবার পার্টির একজন জ্যেষ্ঠ সংসদ সদস্য এবং একজন জুনিয়র মন্ত্রী। শেখ হাসিনা নিজেও লন্ডনে দীর্ঘ সময় ধরে বসবাস করেছেন।
তদুপরি, বিভিন্ন দেশের ক্ষমতাচ্যুত নেতাদের রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্রিটেনের ইতিহাস বিবেচনা করে ধারণা করা হয়েছিল যে এখানেও কোনো সমস্যা হবে না।
প্রকৃতপক্ষে, সন্ধ্যা প্রায় ৬টার দিকে (শেখ হাসিনার বিমান হিন্দনে অবতরণের প্রায় এক ঘন্টা পর) ভারতর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সূত্র জানিয়েছিল, ‘তিনি সাময়িক বিরতি হিসেবে দিল্লিতে অবতরণ করেছেন। আমরা ধারণা করছি তিনি রাত ৯টার দিকে লন্ডনের উদ্দেশ্যে রওনা দেবেন।’
তাকে দিল্লিতে বহনকারী বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর বিমানটি কি তাকে লন্ডনে নিয়ে যাবে, নাকি তিনি ভারতীয় বিমানে নাকি নিয়মিত বাণিজ্যিক ফ্লাইটে যাবেন - এ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছিল।
তবে, সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠে যে ব্রিটেনে আশ্রয় প্রদানের বিষয়টি প্রাথমিক ধারণার মতো সহজ হবে না।
রাত নামার সঙ্গে সঙ্গে, দিল্লিতে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার লিন্ডি ক্যামেরন, ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে অনানুষ্ঠানিকভাবে জানান যে আশ্রয়ের আবেদনটি এখনও বিবেচনাধীন এবং সিদ্ধান্ত নিতে সময় লাগবে।
তারপর, ফিনল্যান্ডসহ একাধিক স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশের সঙ্গে জরুরি যোগাযোগ করা হয়, যাতে দেখা যায় যে তিনি অন্তত সাময়িকভাবে সেখানে আশ্রয় নিতে পারেন কি না। তবে রাত পর্যন্ত এ ব্যাপারে তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি।
উদ্বিগ্ন ভারতীয় কর্তৃপক্ষ
এদিকে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাসভবনে ভারতের সুরক্ষা বিষয়ক মন্ত্রিসভা কমিটির (সিসিএস) জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।
বৈঠকে পরারাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের মতো শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বোঝা যাচ্ছিল যে শেখ হাসিনা সেই রাতে আর বেরোতে পারবেন না, তাই তাকে এবং শেখ রেহানাকে হিন্দন বিমানঘাঁটির টার্মিনাল লাউঞ্জ থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়।
হিন্দন থেকে কিছুটা দূরে গাজিয়াবাদের ইন্দিরাপুরমে আধাসামরিক বাহিনীর একটি অতিথিশালায় অথবা নিরাপদ আস্তানায় তাকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে রাখা হয়।
মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত তারা সেখানেই ছিলেন। তবে পরবর্তীতে তাদের আরও নিরাপদ কোনো স্থানে স্থানান্তরিত করা হতে পারে।
এদিকে, ভারত সরকার বুঝতে পেরেছে যে শেখ হাসিনা হয়তো দ্রুত ভারত ত্যাগ করতে পারবেন না।
বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে মঙ্গলবার সকালে এক সর্বদলীয় বৈঠকে ভারতের পরারাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ইঙ্গিত দেন যে শেখ হাসিনা আপাতত ভারতেই থাকবেন।
জয়শঙ্করকে উদ্ধৃত করে কিছু সূত্র জানিয়েছে, শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারত সরকারের প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার জন্য ভারত তাকে আরও সময় দিতে চায়।
এদিকে, মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে যখন বাংলাদেশ বিমানটি উড্ডয়ন করে, তখন ভারতীয় সংবাদ সংস্থা এএনআই জানিয়েছিল যে ‘বিমানটি শেখ হাসিনাকে নিয়ে উড্ডয়ন করেছে’।
কিছুক্ষণ পরেই, ভুল সংশোধন করে তারা জানায় যে বাংলাদেশি সামরিক কর্মকর্তারা সেই বিমানে করে ঢাকায় ফিরে গেছেন, কিন্তু শেখ হাসিনা তার সঙ্গে ছিলেন না।
গতকাল রাতে এবং আজ যারা তাকে দেখেছেন এমন একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘তিনি মানসিকভাবে যতই বিপর্যস্ত থাকুন না কেন, তিনি তা বাহ্যিকভাবে প্রকাশ করছেন না। তিনি স্বাভাবিকভাবেই কথা বলছেন এবং (বিষয়গুলি) নিয়ে আলোচনা করছেন। শারীরিকভাবেও তিনি সুস্থ!’
ঢাকা ট্রিবিউন থেকে অনূদিত
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.