নগদ টাকা সরবরাহে বিঘ্ন, এটিএম বুথ খালি

রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকার বাসিন্দা নাসির হোসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর কয়েকদিন ধরে বাজারে যাননি। গতকাল তার জরুরি প্রয়োজনে নিত্যপণ্য কিনতে হয়েছিল। এটিএম বুথের সুবিধার কারণে তিনি সাধারণত নিজের কাছে নগদ টাকা রাখেন না।

ফাইল ছবি

কিন্তু আশেপাশের সব এলাকা ঘুরেও গতকাল তিনি কোনো মেশিন থেকে টাকা তুলতে পারেননি। সব বুথেই নগদ টাকা শেষ হয়ে গেছে।

নাসির হোসেন বলেন, প্রায় ১০টি বুথে গিয়েছি, কিন্তু এক পয়সাও তুলতে পারিনি। কোথাও টাকা ছিল না, কোথাও অন্য ব্যাংকের কার্ড ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা ছিল।’

বিভিন্ন ব্যাংকের একাধিক গ্রাহক একই ধরনের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন।

ব্যাংকাররা বলছেন, পর্যাপ্ত নিরাপত্তার অভাবে গত কয়েকদিন ধরে টাকা সরবরাহ ব্যাহত হওয়ায় অধিকাংশ এটিএম বুথে নগদ টাকা শেষ হয়ে গেছে, এমনকি অনেক শাখাতেও টাকা ফুরিয়ে আসছে।

৬ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে নিরাপত্তা উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। আগের রাতে পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলার খবর পাওয়ার পর নিজেদের নিরাপত্তার কথা উল্লেখ করে পুলিশ কর্মবিরতি পালন করে।

জুলাই থেকে বাংলাদেশ অস্থিরতার মধ্যে রয়েছে। বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থী, পুলিশ ও শাসক দলের সদস্যদের মধ্যে সংঘর্ষে ৫৩৫ জনের বেশি প্রাণহানি হয়েছে।

শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে যাওয়ার পর সোমবার রাতেও সহিংসতা ও অগ্নিসংযোগের খবর পাওয়া যায়।

সেনাবাহিনীর সদস্যদের সীমিত উপস্থিতি ছাড়া রাজধানীর সড়ক ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে নিরাপত্তার অভাব দেখা দেয়।

পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী বলেন, ব্যাংকিং খাতে নগদ টাকার কোনো সংকট না থাকলেও বুথ ও শাখায় টাকা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না, কারণ টাকা পরিবহনকারী নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানগুলো সেবা বন্ধ করে দিয়েছে।

তিনি বলেন, ‘আমাদের টাকা বহনকারী নিরাপত্তা সংস্থাগুলো জানিয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে তারা সেবা দেবে না।’

তাই ব্যাংকগুলো, বিশেষ করে দূরবর্তী শাখা ও বুথগুলোতে টাকা সরবরাহ করতে হিমশিম খাচ্ছে বলেও জানান তিনি।

‘আমাদের সুবিধা হলো, আমাদের ৯৫ শতাংশ এটিএম বুথ শাখার সঙ্গে সংযুক্ত। তাই প্রয়োজনে আমরা শাখা থেকে বুথে টাকা সরবরাহ করতে পারি। কিন্তু যেসব বুথ শাখার সঙ্গে সংযুক্ত নয়, সেগুলোতে আমরা টাকা পাঠাতে পারি না,’ যোগ করেন আলী।

একই সময়ে, ব্যাংকগুলো সারাদেশে সীমিত আকারে কার্যক্রম পরিচালনা করেছে, যেসব এলাকায় ঝুঁকি বেশি, সেসব এলাকার আউটলেট ও বুথ বন্ধ করে দিয়েছে।

গত কয়েকদিনের মতো গতকালও গ্রাহকদের উপস্থিতি খুবই কম ছিল, কেউ জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ব্যাংকে যাননি।

মতিঝিল এলাকায় অধিকাংশ শাখা পকেট গেট দিয়ে পরিচালিত হয়েছে। অধিকাংশ বুথ ছিল বন্ধ, বেশ কয়েকটি ব্যাংকের দরজাও বন্ধ ছিল। এতে আর্থিক লেনদেনসহ সার্বিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে।

বেসরকারি চাকরিজীবী নাহিদ হাসান বলেন, কারওয়ান বাজার ও ধানমন্ডির শাখা বন্ধ থাকায় তিনি ব্যাংক স্টেটমেন্ট সংগ্রহ করতে গতকাল ফার্মগেট থেকে মতিঝিলে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকে গিয়েছিলেন।

তিনি বলেন, "মূল দরজা বন্ধ থাকায় আমাকে ফায়ার এক্সিট দিয়ে ব্যাংকে ঢুকতে হয়েছে।"

সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাশরুর আরেফিন বলেন, নিরাপত্তার কারণে সারাদেশে তাদের ১৭৪টি শাখার মধ্যে ১৯টি বন্ধ রয়েছে।

প্রাথমিক ব্যবস্থা হিসেবে শাখা ব্যবস্থাপকদের নিজস্ব নিরাপত্তা মূল্যায়নের ভিত্তিতে কাজ করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

ফলে, শাখা ব্যবস্থাপকরা সদর দপ্তরের সম্মতি ছাড়াই নিরাপত্তা উদ্বেগ টের পেলে তাদের কার্যক্রম বন্ধ করতে পারবেন বলেও জানান তিনি।

পূবালী ব্যাংকের আলী আরও বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে নিজস্ব সশস্ত্র প্রহরী দিয়ে ব্যাংকগুলো যে নিরাপত্তা দিচ্ছে তা অপর্যাপ্ত।

ফলে যে কোনো সময় অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে বলেও জানান তিনি।

তিনি বলেন, সেনাবাহিনী, বিজিবি বা র‌্যাব নিরাপত্তা দিলে অর্থ সরবরাহ নিশ্চিত করা সম্ভব।

ডেইলি স্টার অবলম্বনে