অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টাদের কার কী পরিচয়?

অভূতপূর্ব এক রাজনৈতিক অধ্যায়ে পদার্পণ করেছে বাংলাদেশ। মাত্র পাঁচ দিনের ব্যবধানে গঠিত হলো নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। জনমানসে তীব্র কৌতূহল ছিল এই সরকারের নবীন-প্রবীণ সদস্যদের পরিচয় ঘিরে। অবশেষে বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) রাত ৯টায় শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে সেই অপেক্ষার অবসান ঘটেছে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ১৭ উপদেষ্টা

এবার সকলের নজর নতুন এই মুখগুলোর পরিচয় ও অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানার দিকে। নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে গঠিত এই সরকারে আরও ১৬ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব রয়েছেন। তাদের মধ্যে নারী প্রতিনিধি চারজন, আলেম প্রতিনিধি একজন, ছাত্র প্রতিনিধি রয়েছেন দুইজন।

সংক্ষেপে তাদের পরিচয়-

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস
ড. মুহাম্মদ ইউনূস একজন সামাজিক উদ্যোক্তা। গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা এবং ক্ষুদ্রঋণ ও ক্ষুদ্রবিত্ত ধারণার প্রবর্তনের জন্য ২০০৬ সালে তিনি নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেন। যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননাসহ তার ঝুলিতে রয়েছে শতাধিক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্মাননা। এছাড়া তিনি বিশ্বের সামাজিক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সদস্য।

সালেহউদ্দিন আহমেদ
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নবম গভর্নর। ২০০৫ সালের ১ মে থেকে ২০০৯ সালের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত তিনি গভর্নরের দায়িত্ব পালন করেন।

এম সাখাওয়াত হোসেন
অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন সামরিক ব্যক্তিত্বের পাশাপাশি একজন বুদ্ধিজীবী, সামরিক বিশ্লেষক ও লেখক। তিনি ২০০৭ থেকে ২০১২ সাল মেয়াদে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। দেশি-বিদেশি পত্রিকায় কলাম লেখার পাশাপাশি তার লিখিত বইয়ের সংখ্যা ২০ ছাড়িয়েছে।

আসিফ নজরুল
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুলের লেখক, ঔপন্যাসিক, রাজনীতি বিশ্লেষক, সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও কলামিস্ট হিসেবেও খ্যাত রয়েছে। এছাড়া টিভি টক-শো ও সাহসী কলামের জন্য তিনি ব্যাপক জনপ্রিয়। তিনি দশটির অধিক গ্রন্থ রচনা করেছেন।

হাসান আরিফ
ফখরুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, ভূমি, এবং ধর্ম মন্ত্রণালয় বিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন হাসান আরিফ। আইনজীবী হাসান আরিফ ২০০১ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত সময়ে দেশের অ্যাটর্নি জেনারেলের দায়িত্ব পালন করেন।

মো. তৌহিদ হোসেন
২০০৬ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত সময়ে পররাষ্ট্র সচিবের দায়িত্ব পালন করা মো. তৌহিদ হোসেন দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশের সাবেক হাইকমিশনার ছিলেন। এর আগে ১৯৯৯ তেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত তিনি ফরেন সার্ভিস একাডেমির প্রিন্সিপাল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান একজন আইনজীবী ও পরিবেশকর্মী। পরিবেশ নিয়ে কাজ করা এনজিও বেলার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া তিনি আন্তর্জাতিক সংস্থা ফ্রেন্ডস অব আর্থ ইন্টারন্যাশনালের নির্বাহী সদস্য, এনভায়রনমেন্টাল ল' এলায়েন্স ওয়ার্ল্ডওয়াইড এবং এনভায়রনমেন্টাল ল' কমিশন অব দ্য আইইউসিএনের সদস্য। কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি গোল্ডম্যান এনভায়রনমেন্টাল প্রাইজ, হিরোজ অব এনভায়রনমেন্ট, রামোন ম্যাগসেসেসহ অসংখ্য পুরস্কাল লাভ করেছেন। ২০২২ সালে আন্তর্জাতিক সাহসী নারী পুরস্কারে ভূষিত হন তিনি।

শারমিন মুরশিদ
প্রান্তিক জনগোষ্ঠী বিশেষ করে আদিবাসী জনগণের অধিকারভিত্তিক সংগঠন ব্রতী সমাজ কল্যাণ সংস্থার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন শারমিন মুরশিদ। সংস্থাটি ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।

ফারুক-ই-আজম (বীর প্রতীক)
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হয়েছেন ফারুক-ই-আজম বীর প্রতীক। মুক্তিযুদ্ধের একমাত্র সমন্বিত যুদ্ধাভিযান ‘অপারেশন জ্যাকপট’ দলের উপ-অধিনায়ক ছিলেন ফারুক-ই-আজম।

আদিলুর রহমান খান
আইনজীবী এবং সাবেক ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আদিলুর রহমান খানের বড় পরিচয় তিনি একজন মানবাধিকার কর্মী। তিনি মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের প্রতিষ্ঠাতা। এরশাদ পতন আন্দোলনে তিনি ছিলেন সম্মুখসারিতে।

সুপ্রদীপ চাকমা
সাবেক রাষ্ট্রদূত সুপ্রদীপ চাকমা বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বিসিএস (পররাষ্ট্র) ক্যাডারের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। সপ্তম বিসিএসে সরকারি চাকরিতে যোগ দেওয়া সুপ্রদীপ মেক্সিকো ও ভিয়েতনামে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ছিলেন।

ফরিদা আখতার
লেখক, গবেষক ও আন্দোলনকর্মী হিসেবে পরিচিত ফরিদা আখতার নারী উন্নয়ন, স্বাস্থ্য, কৃষি, মৎস্য সম্পদ, তাঁত শিল্প, গার্মেন্টস শিল্প ও শ্রমিক, জনসংখ্যা এবং উন্নয়নমূলক বিষয়ে নিবিড়ভাবে দীর্ঘ প্রায় তিন দশক ধরে কাজ করছেন। তিনি বাংলাদেশের নারী আন্দোলনের সঙ্গেও সক্রিয়ভাবে জড়িত রয়েছেন। বর্তমানে তিনি উবিনীগের (উন্নয়ন বিকল্পের নীতি নির্ধারণী গবেষণা) নির্বাহী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

বিধান রঞ্জন রায়
পেশায় মনোচিকিৎসক বিধান রঞ্জন রায় জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ও হাসপাতালে মনোচিকিৎসা বিভাগের পরিচালক ও অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।

আ ফ ম খালিদ হোসেন
আ ফ ম খালিদ হোসেন একজন ইসলামি চিন্তাবিদ। তিনি চট্টগ্রামের ওমর গনি এমইএস কলেজ চট্টগ্রামের অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া তিনি বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক এবং মাদরাসায় মুহাদ্দিস হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। দল-মতের ঊর্ধ্বে থেকে তিনি সবসময় স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। দেশে-বিদেশে ইসলামি বক্তা হিসেবেও তার খ্যাতি রয়েছে।

নূরজাহান বেগম
নূরজাহান বেগম গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এর আগে তিনি নোবেল বিজয়ী প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত এমডির দায়িত্ব পালন করেন।

নাহিদ ইসলাম
‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর অন্যতম সমন্বয়ক। শিক্ষক বাবার ছেলে নাহিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগ থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করছেন। ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ থেকে বেরিয়ে ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেনের নেতৃত্বে গড়ে তোলা গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির একজন কেন্দ্রীয় নেতা তিনি।

আসিফ মাহমুদ
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ। কুমিল্লার ছেলে আসিফ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনিও ‘গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি’র অন্যতম কেন্দ্রীয় নেতা।