দেশের আটটি বেসরকারি ব্যাংকের পরিচালকরা তাদের নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পরস্পর ঋণ গ্রহণ করে বিপুল পরিমাণ অর্থ লেনদেন করছেন। দ্য ডেইলি স্টারের এক অনুসন্ধানে এ তথ্য উঠে এসেছে। এই ঋণ কার্যক্রমে স্বচ্ছতার অভাব এবং আইনি শিথিলতার সুযোগ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে, যা ব্যাংকিং খাতকে গুরুতর ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিতে পারে।

exim bank islamic bank social islami bank national bank ific bank first security islami bank union bank global islamic bankএক্সিম ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের লোগো

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ২০২৩ সালের শেষে এই আটটি ব্যাংকের পরিচালকদের নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আসা-যাওয়া ঋণের পরিমাণ ছিল ২৫,০০০ কোটি টাকা। এছাড়াও, এদের মধ্যে চারটি ব্যাংক ‘ব্যাংক পরিচালকদের আত্মীয়-স্বজনদের নামে’ প্রায় ২০,০০০ কোটি টাকা ঋণ প্রদান করেছে। অর্থাৎ, এই পরিচালক ও তাদের আত্মীয়-স্বজনদের জন্য মোট অনুমোদিত ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৫,০০০ কোটি টাকা! গত পাঁচ বছরে এই ঋণের বেশিরভাগই অনুমোদিত হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী কোনো ব্যাংক তার নিজস্ব পরিচালকদের সরাসরি ঋণ দিতে পারে না। তবে ব্যাংকের পরিচালকরা তাদের নিয়ন্ত্রিত অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এই নিয়মকে চতুরতার সঙ্গে এড়িয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এই প্রবণতা দীর্ঘদিনের, তবে গত সাত-আট বছরে তা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

‘বেশিরভাগ ব্যাংক মালিক তাদের নিজস্ব ব্যবসায়ও সফল হওয়ায়, কেন্দ্রীয় ব্যাংক অন্য ব্যাংকের মালিকদের ঋণ প্রদান থেকে ব্যাংকগুলিকে বিরত রাখতে পারে না’ একজন ব্যাংকিং বিশ্লেষক জানান।

কোন ব্যাংকগুলো জড়িত?

দ্য ডেইলি স্টারের অনুসন্ধানে যে আটটি ব্যাংকের নাম উঠে এসেছে সেগুলো হলো:

  • এক্সিম ব্যাংক
  • ইসলামী ব্যাংক
  • সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক
  • ন্যাশনাল ব্যাংক
  • আইএফআইসি ব্যাংক
  • ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক
  • ইউনিয়ন ব্যাংক
  • গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক

এসব ব্যাংকের মধ্যে এক্সিম ব্যাংক সর্বাধিক ৮,১১৫ কোটি টাকা পারস্পরিক ঋণ প্রদান করেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এক্সিম ব্যাংক অন্যান্য ব্যাংকের পরিচালকদের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোকে ৮,১১৫ কোটি টাকার ঋণ দিয়েছে। এর মধ্যে ৩,৯৮২ কোটি টাকা ঋণ পেয়েছে এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন তিনটি কোম্পানি। উল্লেখ্য যে, এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকেরও চেয়ারম্যান।

এদিকে, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক থেকে ৭৩৪ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে নাসা গ্রুপ। মজার বিষয় হলো, এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার নিজেই নাসা গ্রুপের মালিক এবং তিনি একাধিক ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন।

শুধু তাই নয়, এক্সিম ব্যাংক ইউনাইটেক্স স্পিনিং এবং এর সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোকে ৮০১ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে, যার ব্যবস্থাপনা পরিচালক হলেন সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের (এসআইবিএল) চেয়ারম্যান বেলাল আহমেদ।

একই ধারায়, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক (এসআইবিএল) অন্যান্য ব্যাংকের পরিচালকদের ১৭০০ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। এছাড়াও, ইসলামী ব্যাংক অন্যান্য ব্যাংকের পরিচালকদের ৪৩৩৩ কোটি টাকা এবং শুধুমাত্র এস আলম গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ১৪১৬৭ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে।

ন্যাশনাল ব্যাংক বেক্সিমকো গ্রুপ, নাসা গ্রুপ এবং এস আলম গ্রুপকে ৭ হাজার ৮০ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। উল্লেখ্য, এই তিনটি প্রতিষ্ঠানের মালিকরা ন্যাশনাল ব্যাংকসহ দেশের বিভিন্ন ব্যাংকের পরিচালক পদে অধিষ্ঠিত।

অন্যদিকে, শিকদার গ্রুপ আইএফআইসি ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক এবং ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক থেকে মোটা অংকের ঋণ নিয়েছে। একইভাবে, আইএফআইসি ব্যাংক নাসা গ্রুপ এবং সিকদার গ্রুপকে ১ হাজার ৭৫ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে।

এছাড়াও, আইএফআইসি ব্যাংক শ্রীপুর টাউনশিপ লিমিটেডকে ১ হাজার ২০ কোটি টাকার ঋণ দিয়েছে, যেখানে বেক্সিমকো গ্রুপের একটি যৌথ উদ্যোগ রয়েছে।

পারস্পরিক ঋণের আরেকটি উদাহরণ হলো গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক এবং ইউনিয়ন গ্রুপ। এই দুই প্রতিষ্ঠান একে অপরকে ১ হাজার ৬১৮ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। এস আলম গ্রুপের বেশ কয়েকজন আত্মীয় গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের ৩০ কোটি শেয়ারের মালিক। ইউনিয়ন ব্যাংকেও এস আলম গ্রুপের উল্লেখযোগ্য পরিমাণ শেয়ার রয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের স্বার্থের দ্বন্দ্ব ব্যাংকিং খাতের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। ঋণ খেলাপির আশঙ্কা ছাড়াও এ ধরনের অনিয়ম দীর্ঘমেয়াদে সমগ্র অর্থনীতির জন্য হুমকিস্বরূপ।

ব্যাংকের প্রতিক্রিয়া

দ্য ডেইলি স্টার প্রথমে ১৫ জুন এই ব্যাংকগুলোর বেশিরভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং ১২-১৩ আগস্ট তাদের সঙ্গে ফলোআপ করে। ন্যাশনাল ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক এবং এক্সিম ব্যাংকের প্রতিনিধিরা কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি বা মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছেন।

এসআইবিএলের প্রধান অপারেটিং কর্মকর্তা জাফর আলম বলেছেন, তারা ব্যাংকিং নিয়ম অনুযায়ী সব ঋণ অনুমোদন করেছে এবং ঋণগ্রহীতারা এস আলম গ্রুপসহ, বড় ঋণের জন্য যোগ্য।

ইসলামী ব্যাংকের সিইও মোহাম্মদ মনিরুল মৌলা বলেছেন, তারা নাসা গ্রুপ এবং এস আলম গ্রুপে ১৯৯০ সাল থেকে বিনিয়োগ করছে, এবং দুটি গ্রুপের পারফরম্যান্স চমৎকার ছিল।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন

এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, প্রশ্নে থাকা কোম্পানিগুলির আর্থিক বিবরণী বিশ্লেষণ করে দেখতে হবে তাদের ঋণ প্রদান নিয়ম মেনে হয়েছে কি না।

তিনি বলেন, ‘যদি এটি অতিরিক্ত ঋণ হয়, তাহলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যবস্থা নেবে।’

দ্য ডেইলি স্টার অবলম্বনে

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.