পিলখানা হত্যাকাণ্ড: ১৫ বছর পরও ন্যায়বিচারের আকুতি, অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ৩ দাবি

২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি, তৎকালীন বাংলাদেশ রাইফেলসের (বিডিআর) পিলখানা সদর দপ্তরে সংঘটিত ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ১৭ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হন। নিহতদের মধ্যে ছিলেন বিডিআর প্রধান মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদ।

ছবি - সংগৃহীত

এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ১৫ বছর পর, নিহতদের পরিবার এখনও ন্যায়বিচার ও স্বচ্ছতার দাবিতে সোচ্চার। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে তারা দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

শনিবার (১৭ আগস্ট) রাজধানীর মহাখালীর স্কাইলাইন রেস্তোরাঁয় এক সংবাদ সম্মেলনে নিহতদের পরিবারের সদস্যরা তাদের দাবি-দাওয়া তুলে ধরেন। তারা এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত ঘটনা উন্মোচন করতে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ এবং একটি তদন্ত কমিশন গঠনের জোর দাবি জানান।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন নিহতদের পরিবারের সদস্যরা। তারা ন্যায়বিচার প্রাপ্তিতে চলমান বিলম্বে তাদের হতাশা প্রকাশ করেন।

পিলখানা হত্যাকাণ্ডে নিহত মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদ ও নাজনীন আহমেদের ছেলে রাকিন আহমেদ দেশের শীর্ষ রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন।

তিনি বলেন, ‘এতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী সরাসরি জড়িত। আমাদের কাছে অনেক কল রেকর্ড এবং নির্দেশনা আছে, যেগুলো আমরা শুনেছি। সাংবাদিকদের বলুন সেগুলো প্রকাশ করতে। বিদেশিদের সহায়তায় এটি করা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ন্যায়বিচারের নামে এতদিন ধরে যে নাটক চলছে, আমরা তা মানি না। আমরা চাই, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে জড়িতদের নাম বেরিয়ে আসুক।’

শহীদ কর্নেল কুদরত-ই-রহমানের স্ত্রী লাবী রহমানও একই সুরে সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘তখন তো স্বাধীনতা ছিল না, এখন আছে। এখন আপনাদের তাদের নাম বলতে হবে।’

সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী পরিবারগুলি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে তিনটি প্রধান দাবি তুলে ধরে‘।

পিলখানা হত্যাকাণ্ডের সব তদন্ত প্রতিবেদন অবিলম্বে প্রকাশ করতে হবে, যার মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সেনাবাহিনী যে তদন্ত করেছে, সেগুলোও রয়েছে। প্রতিবেদনগুলো নিহতদের পরিবার ও জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করতে হবে।

পিলখানা হত্যাকাণ্ড নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ ২০১৭ সালে যে সুপারিশ করেছিল, সে অনুযায়ী একটি তদন্ত কমিশন গঠন করতে হবে, যা এই ঘটনার আসল রহস্য উন্মোচন করবে।

২৫ ফেব্রুয়ারি দিনটিকে সরকারি গেজেটের মাধ্যমে ‘শহীদ সেনা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করতে হবে, যেখানে নিহত সব কর্মকর্তাকে ‘শহীদ’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হবে। প্রতি বছর এই দিনে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখতে হবে। এ ছাড়া বিডিআর পিলখানা হত্যাকাণ্ড নিয়ে স্কুলের পাঠ্যপুস্তকে একটি অধ্যায় যোগ করতে হবে, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এসব ত্যাগের কথা জানতে পারে।

এ ছাড়া অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আরও একটি আবেদন জানানো হয়, যাতে কোনো নিরপরাধ সাবেক বিডিআর সদস্য কারাগারে না থাকেন এবং ন্যায়বিচারের দাবিতে যারা চাকরি হারিয়েছেন, সেই সেনা কর্মকর্তাদের চাকরিতে পুনর্বহাল বা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়।