ইসলামী ব্যাংককে এস আলমের নিয়ন্ত্রণমুক্ত করল বাংলাদেশ ব্যাংক

এস আলম গ্রুপের কবল থেকে ইসলামী ব্যাংককে মুক্ত করতে বুধবার ব্যাংকটির বোর্ড ভেঙে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একইসঙ্গে এস আলম গ্রুপের কাছে থাকা ব্যাংকটির সকল শেয়ার সরকার বাজেয়াপ্ত করেছে। পরবর্তীতে ঋণ আদায়ের লক্ষ্যে এই শেয়ারগুলো বিক্রি করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।

ইসলামী ব্যাংকের লোগো

ব্যাংক পরিচালনার জন্য সাময়িকভাবে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান মনসুর এই ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, ‘এস আলম গ্রুপ এবং তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠানের কাছে থাকা ইসলামী ব্যাংকের সকল শেয়ার সরকার বাজেয়াপ্ত করেছে।’

তিনি বলেন, সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকা সব শেয়ার বাজেয়াপ্ত করার মধ্য দিয়ে বাকি সব ব্যাংক ধীরে ধীরে এস আলমের নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত করা হবে।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের ইসলামী ব্যাংক থেকে অপসারণের অজুহাতে ব্যাংকটির নিয়ন্ত্রণ নেয় এস আলম গ্রুপ। অভিযোগ রয়েছে, গত সাত বছরে, বিভিন্ন ছদ্মনাম ব্যবহার করে গ্রুপটি ব্যাংক থেকে প্রায় ৭৫,০০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে।

এই বিপুল অঙ্কের টাকা আত্মসাতের ঘটনায় ইসলামী ব্যাংকের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে। সাধারণ আমানতকারীদের মধ্যে তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ব্যাংকিং খাতের স্থিতিশীলতা নিয়েও উদ্বেগ তৈরি হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন ব্যাংকিং খাতের বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে এস আলম গ্রুপের অবৈধ নিয়ন্ত্রণের কারণে ইসলামী ব্যাংক একটি অনিশ্চিত ভবিষ্যতের সম্মুখীন হয়েছিল।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই পদক্ষেপ ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

তবে, কেবলমাত্র বোর্ড পরিবর্তন করলেই ইসলামী ব্যাংকের সমস্যার সমাধান হবে না। ব্যাংকটির আর্থিক স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধার এবং আমানতকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারকে আরও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে বলে মত দেন খাত সংশ্লিষ্টরা।

গভর্নর আহসান মনসুর জানিয়েছেন, এস আলম গ্রুপের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগের শীঘ্রই পুনরায় তদন্ত শুরু হতে পারে। যারা ঋণ নিয়ে অর্থ ফেরত দেয়নি, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সরকারের এই পদক্ষেপকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন ব্যাংকিং খাত সংশ্লিষ্টরা।

উল্লেখ্য, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের তথ্য অনুসারে, ইসলামী ব্যাংকের মোট ১.৬ শ’ কোটি শেয়ারের মধ্যে ৮২ শতাংশ, যার বর্তমান বাজার মূল্য ৫,১৬২ কোটি টাকা, তা এই গ্রুপটির অধীনে ছিল।

কোনো গ্রুপ যাতে একটি ব্যাংকের ১০ শতাংশের বেশি শেয়ারের মালিকানা গ্রহণ করতে না পারে, সেই বিষয়ে স্পষ্ট ব্যাংকিং নিয়ম থাকা সত্ত্বেও, এস আলম গ্রুপের বিপুল পরিমাণ শেয়ার অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে আগে কোনো হস্তক্ষেপ করেনি কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

শুধু ইসলামী ব্যাংক নয় সরকারের সমর্থনে এস আলম গ্রুপ একই ভাবে আরও পাঁচটি ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে। ব্যাংকগুলো হল সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক এবং বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক।

এস আলমের নিয়ন্ত্রণাধীন সমস্ত ব্যাংক গুরুতর তারল্য সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে এবং কেবলমাত্র বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রদান করা একটি ‘অবৈধ’ লাইফলাইনের উপর টিকে আছে। তবে এই সুবিধাও যে আর মিলবে না, তা স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশ গভর্নর।