জাতীয় সরকার ও দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট সংসদের স্বপ্ন দেখছেন তারেক

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রাহমান আজ বলেছেন, জাতীয় ঐক্যের শক্তিকে পূর্ণভাবে কাজে লাগানোর জন্য তার দল ভবিষ্যতে জাতীয় সরকার ব্যবস্থা চায়।

তারেক রাহমান

ঢাকা বিভাগের বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে এক ভার্চুয়াল মতবিনিময় সভায় তিনি দলের পক্ষ থেকে এই দাবি তুলে ধরেন। একইসঙ্গে তিনি জানান, সমাজের সকল স্তরের সহযোগিতায় সুশাসন নিশ্চিত করার জন্য সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট সংসদ প্রবর্তনের ইচ্ছাও রয়েছে তাদের।

“আমরা দেখেছি, একদলীয় সরকার ব্যবস্থায় কীভাবে সব জায়গায় কেবলমাত্র একটি দলের লোকজনের দাপট চলে, অন্যদের অস্তিত্ব থাকে না বললেই চলে। ফলে দেশ বঞ্চিত হয় বিরাট এক জনগোষ্ঠীর সেবা থেকে," বলেন তারেক।

তিনি আরও বলেন, "জাতীয় ঐক্যের শক্তিকে কাজে লাগানোর সুযোগ আমরা অতীতে যেভাবে হারিয়েছি, সেই ভুল বিএনপি আর করতে চায় না।”

বিএনপি নেতা বলেন, “স্বাধীনতার পর পরই জাতীয় ঐক্যের শক্তিকে কাজে লাগানোর সুযোগটি হাতছাড়া হয়ে গিয়েছিল। সেই ভুল আমরা আর করতে চাই না। জনগণের সমর্থনে বিএনপি ভবিষ্যতে দেশকে জাতীয় সরকারের অধীনে দেখতে চায়।”

তিনি আরও জানান, যারা গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছেন, ভবিষ্যতে দেশ পরিচালনায় তাদের সকলকে সম্পৃক্ত করা হবে। যাতে তাদের অবদান উপেক্ষিত না হয়।

"মুক্তিযোদ্ধারা রণাঙ্গনে বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করে ১৯৭১ সালে আমাদের জন্য স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন," বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, “সেই যুদ্ধে জয়ের মূলমন্ত্র ছিল জাতির অবিসংবাদিত ঐক্য। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, স্বাধীনতার পর সেই ঐক্যকে আমরা কাজে লাগাতে পারিনি।”

তারেক রাহমান বলেন, “স্বাধীনতার পর জাতীয় সরকার গঠন না করে আওয়ামী লীগ যখন একদলীয় সরকার প্রতিষ্ঠা করে, তখন থেকেই জাতি বিভক্ত হতে শুরু করে। ফলে বিরাট একটা জনগোষ্ঠী চাইলেও জাতি গঠনে অংশগ্রহণ করতে পারেনি।”

বুধবার ঢাকা বিভাগের বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তারেক রাহমান এই মতবিনিময় সভায় অংশ নেন।

এই সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায় প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

তারেক রাহমান বলেন, বিএনপির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার পরিকল্পনা সম্পর্কে জাতিকে অবহিত করা জরুরি, যা হলো দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট সংসদ প্রবর্তন।

তিনি বলেন, দেশে অসংখ্য জ্ঞানী-গুণী মানুষ, প্রতিভাবান শিক্ষক, শিল্পী-সাহিত্যিক, সাংবাদিক, গবেষক, চিকিৎসক, কারিগরি বিশেষজ্ঞ, সমাজসেবক আছেন, যারা রাজনীতির সঙ্গে সাধারণত যুক্ত নন, কিন্তু দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে অবদান রাখতে আগ্রহী।

তবে বর্তমান সংবিধানের কাঠামোয় এসব ব্যক্তিদের জন্য সংসদ সদস্য হিসেবে অবদান রাখার সুযোগ নেই বলেও মনোযোগ আকর্ষণ করেন বিএনপি নেতা।

“তাদের সেবা ও অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর জন্য বিএনপি বিশ্বের অন্যান্য অনেক দেশের মতো উচ্চকক্ষ সহ দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট সংসদ ব্যবস্থা চায়," বলেন তিনি।

তারেক রাহমান বলেন, তিনি ভবিষ্যতের পরিকল্পনা ও বিএনপির উদ্দেশ্য সম্পর্কে বিনীতভাবে জানাচ্ছেন, কারণ তিনি জানেন, দেশের জনগণের সমর্থনই কেবল এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারে।

“আমি আশা করি, জনগণ অবশ্যই জাতীয় সরকারে সেই সকল দল বা ব্যক্তিদের চাইবে না, যারা সমগ্র দেশকে নিজ দল ও পরিবারের ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে পরিণত করেছে এবং যারা তথাকথিত উন্নয়নের নামে আমাদের প্রত্যেকের ঘাড়ে দেড় লাখ টাকার ঋণ চাপিয়েছে, হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে,” বলেন তিনি।

গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য বিগত সতেরো বছরের অবিরাম সংগ্রামে বিএনপি নেতাকর্মীদের অবিচল অংশগ্রহণ ও দলের প্রতি তাদের আস্থার জন্য তিনি তাদের ধন্যবাদ জানান।

তিনি তাদের উদ্দেশ্যে আরও বলেন, কিছু বেপরোয়া ব্যক্তির কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে যেন তাদের এই ত্যাগ ক্ষুণ্ন না হয়, সে জন্য সকলকে সতর্ক থাকার ও চক্রান্তকারীদের প্রতিরোধ করার আহ্বান জানান।

এছাড়াও জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা ও তাদের ভাষার সঙ্গে মিশে তাদের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জনের জন্য তিনি দলীয় নেতাদের প্রতি নির্দেশনা দেন।

তিনি আরও নির্দেশ দেন, নতুন নতুন ও অদৃশ্য প্রতিপক্ষদের মোকাবেলা করার জন্য তাদের রাজনৈতিক দূরদৃষ্টি ও কৌশল ব্যবহার করতে হবে।