অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম বলেছেন, বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দেওয়া আমাদের দায়িত্ব। তাদের নিয়ে ভারতের উদ্বিগ্ন হওয়ার দরকার নেই।

nahid islam 3মো. নাহিদ ইসলাম

বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) বিবিসি হিন্দিতে প্রচারিত একটি সাক্ষাৎকারে তিনি এই মন্তব্য করেছেন। সেখানে তিনি সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক এবং সাম্প্রতিক সাম্প্রদায়িক সহিংসতা নিয়ে আলোচনা করেছেন। বিবিসিকে দেওয়া তার সাক্ষাৎকারটি পাঠকদের জন্য এখানে বাংলায় উপস্থাপন হলো।     

প্রশ্ন: ভারত প্রায়ই আপনাদের সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে। এই বিষয়ে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি কি?

নাহিদ ইসলাম: বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা আমাদের নাগরিক এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব। তাদের নিয়ে ভারতের চিন্তা করার দরকার নেই। ভারতের উচিত গত জুলাই-আগস্টে সংঘটিত সহিংসতার দিকে নজর দেওয়া। প্রশ্ন হতে পারে, এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ভারত বাংলাদেশকে কী ধরনের সহায়তা দিতে পারে? এখানেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হওয়া উচিত। আমি এটাও উল্লেখ করতে চাই যে ভারতীয় মিডিয়া আমাদের সরকার সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য প্রচার করে যাচ্ছে। ভারতের উচিত এর সমাধান করা। আমরা চাই তথ্যের ভিত্তিতে আলোচনা। সম্পর্ক উন্নয়নের প্রশ্নেও আলোচনা হোক।  

প্রশ্ন: আপনি জুলাই-আগস্টে এখানে কী ঘটেছিল সে বিষয়ে ভারতের অবস্থান স্পষ্ট করার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেছেন। এর মাধ্যমে আপনি কি বোঝাতে চাচ্ছেন?

নাহিদ ইসলাম: আমরা জানতে চাই আওয়ামী লীগ জুলাই-আগস্টে যে গণহত্যা করেছে, ভারত সেটাকে কীভাবে দেখে। কিছু দেশ বাংলাদেশের জনগণের প্রতি সমর্থন দেখিয়েছে, কিন্তু ভারত নীরব রয়েছে। উপরন্তু, ভারত এমন একজনকে আশ্রয় দিয়েছে যে এই ঘটনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত।

প্রশ্ন: আপনি কি বলছেন ভারত বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সহিংসতাকে উপেক্ষা করছে?

নাহিদ ইসলাম: যারা প্রিয়জনকে হারিয়েছে তাদের প্রতি যদি ভারত সত্যিকারের সহানুভূতি দেখায়, বাংলাদেশের মানুষ সেটা ইতিবাচকভাবে দেখবে। এই সহিংসতার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া নিশ্চিত করতে আমি ভারতের সমর্থন চাই।

প্রশ্ন: আগস্টে ভারত সব পক্ষকে সংযম দেখানোর আহ্বান জানিয়েছিল। এদিকে কিছু সংখ্যালঘু সংগঠন বলেছে, গত তিন মাসে সংখ্যালঘুদের ওপর গুরুতর নির্যাতন হয়েছে। আমরা বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেছি এবং ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা জানিয়েছে, প্রশাসনের ওপর আস্থা রাখতে পারছে না। আপনি কি এই বিষয়টি জানেন? যদি জানেন, তাহলে আপনার চিন্তাভাবনা কী?

নাহিদ ইসলাম: হ্যাঁ, যা ঘটেছে এবং মানুষ যে কষ্ট সহ্য করেছে সে সম্পর্কে আমরা পুরোপুরি অবগত। এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে সময়মত পদক্ষেপ না নিলে, পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারত। দুর্গাপূজার কথা বলা যায়, সে সময় সম্ভাব্য সহিংসতার সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছিল। আমরা পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করেছি এবং উৎসব শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে। আমাদের সরকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পাশে আছে এবং তাদের নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়েছে।

প্রশ্ন: কিছু সংখ্যালঘু গোষ্ঠী মনে করে যে, আশ্বাস দেওয়া সত্ত্বেও যথেষ্ট ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

নাহিদ ইসলাম: আমি অন্তত এটা বলতে পারি যে বিগত তিন মাসে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সঙ্গে আমরা যেভাবে কাজ করেছি, আগের কোনো সরকার এতটা ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেনি। অতীতের সরকারগুলো এই বিষয়টিকে রাজনৈতিক ফায়দা নেওয়ার জন্য ব্যবহার করেছে। এভাবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের আস্থা নষ্ট করেছে। আমরা এই আস্থা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি। তবে কিছু সমস্যা সমাধানের জন্য সময় প্রয়োজন।

প্রশ্ন: আওয়ামী লীগ সরকার চলে যাওয়ার পর চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলো শক্তিশালী হতে পারে বলে উদ্বেগ রয়েছে, যা বাংলাদেশ ও ভারত উভয়ের জন্যই নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।  

নাহিদ ইসলাম: বাংলাদেশের মানুষ চরমপন্থী দল বা সহিংসতাকে সমর্থন করে না। বাংলাদেশিরা গণতান্ত্রিক সরকার চায়। আপনি যা বলছেন তা আওয়ামী লীগের প্রপাগান্ডাকে প্রতিফলিত করে। তাদের বক্তব্য, তারা না থাকলে চরমপন্থী সংগঠনগুলোর তৎপরতা বেড়ে যাবে। এসব বলে আওয়ামী লীগ বহু বছর ধরে এদেশ শাসন করেছে। ভারত তাদের এই দৃষ্টিভঙ্গিকে সমর্থন করেছে। কিন্তু প্রশ্ন হল, আওয়ামী লীগ সরকারে থাক বা না থাক, কেন বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কে প্রভাব পড়বে? ভারত যদি সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলে, শুধু আওয়ামী লীগের সঙ্গে নয়, তাহলে এটা কোনো সমস্যা হবে না। আমরা যেমন প্রশ্ন করি না, ভারতে ক্ষমতায় কে আছে বিজেপি নাকি কংগ্রেস। এখানেও একই নীতি প্রযোজ্য হওয়া উচিত। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে না নেই, তার উপর সম্পর্ক নির্ভর করা উচিত নয়।      

প্রশ্ন: ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে গৃহীত বিভিন্ন প্রকল্প উভয় দেশ ও বাংলাদেশের জনগণের উপকারে আসবে নাকি শুধু আওয়ামী লীগই লাভবান হবে? এই বিষয়ে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি কি?

নাহিদ ইসলাম: এটাকে আওয়ামী লীগের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখা উচিত নয়। যদি উভয় দেশ একে অপরকে সমর্থন করে তবে উভয়ের জন্য ভাল কাজ করা সম্ভব। আমরা কোনো দেশের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করিনি বা কোনো প্রকল্প বন্ধ করিনি। সবকিছু আগের মতোই চলছে।

প্রশ্ন: ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশ তার বিনিয়োগ পর্যালোচনা করছে বলে জানা গেছে। আপনি এই বিষয়ে আমাদের জানাতে পারেন? আপনি কি মনে করেন দুই দেশের মধ্যে আলোচনা আবার শুরু হতে পারে?

নাহিদ ইসলাম: হ্যাঁ, আমরা প্রকল্পগুলো পর্যালোচনা করছি। তবে এটা শুধু ভারতের সঙ্গেই নয়, আমরা সব দেশের সঙ্গে থাকা প্রকল্পগুলো মূল্যায়ন করছি। এতে কোনো দুর্নীতি হয়েছে কি না বা বাংলাদেশের জন্য উপকারী নয় এমন কিছু আছে কি না আমরা তা পরীক্ষা করে দেখছি।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.