রেমিট্যান্সের টাকা তুলতেও হিমশিম খাচ্ছেন সাভারের বৃদ্ধ!

সাভারে বসবাসকারী ৭৩ বছর বয়সী সাদেকুর রহমান গত অক্টোবরে প্রবাসী ছেলের পাঠানো রেমিট্যান্সের টাকা তুলতে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসির (এসআইবিএল) স্থানীয় শাখায় গিয়েছিলেন। ছেলে রইসউদ্দিন গত ২৪ অক্টোবর পরিবারের খরচ ও বয়স্ক বাবা-মায়ের চিকিৎসার জন্য এক লাখ টাকা পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত তিন দফায় মাত্র ৩৫ হাজার টাকা তুলতে পেরেছেন তিনি।

সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসির লোগো

‘পরিবারের খরচ মেটাতে কমপক্ষে ৭০ হাজার টাকা প্রয়োজন,’ ফোনে এই প্রতিবেদককে জানান সাদেকুর রহমান। তিনি অভিযোগ করেন, এসআইবিএলে নগদ অর্থের তীব্র সংকটের কারণে ব্যাংক কর্মকর্তারা তাকে কিস্তিতে টাকা নিতে বলছেন।

সাদেকুর রহমানের মতো, এস আলম গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত বেশ কয়েকটি সংকটগ্রস্ত ব্যাংকের গ্রাহকরা ব্যাপক ঋণ খেলাপির কারণে তাদের জমানো টাকা তুলতে হিমশিম খাচ্ছেন। ব্যাংকিং খাতের অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে, ঋণগ্রহীতারা আত্মগোপনে চলে গেছেন এবং তহবিলের অব্যবস্থাপনার কারণে তাদের ব্যবসা দুর্বল হয়ে পড়েছে।

এসআইবিএল-এর সাভার শাখার এক কর্মকর্তা জানান, অনেক আমানতকারী তাদের সম্পূর্ণ ব্যালেন্স তুলতে চাইছেন বলে ব্যাংকটি বড় ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘শাখাটিতে ৮৭ কোটি টাকার আমানত রয়েছে। যদি এক তৃতীয়াংশ আমানতকারীও হঠাৎ করে টাকা তুলতে চান, তাহলে যেকোনো ব্যাংকের পক্ষে তা মোকাবেলা করা কঠিন হবে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, জমা করা অর্থ বিভিন্ন দীর্ঘমেয়াদী ঋণে বিনিয়োগ করা হয়।

তিনি আরও জানান, আমানতকারীদের কম পরিমাণে নগদ অর্থ প্রদান করা হচ্ছে এবং তাদের আশ্বস্ত করা হচ্ছে যে টাকা কিস্তিতে ফেরত দেওয়া হবে। সাম্প্রতিক সময়ে নগদ অর্থের প্রচলন কমে গেছে, তবে ব্যাংকের কর্তৃপক্ষ ঋণের কিস্তি নিয়মিত আদায়ের জন্য কাজ করছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গ্যারান্টির আওতায় আন্তঃব্যাংক মানি মার্কেট থেকে ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক (এফএসআইবি), গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক এবং ইউনিয়ন ব্যাংক আর্থিকভাবে সুস্থ ব্যাংকগুলো থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকার তারল্য সহায়তা পেয়েছে। এই সহায়তা সত্ত্বেও, আমানতকারীরা নগদ সংকটে ভোগা এই ব্যাংকগুলির শাখা, প্রধান কার্যালয় এবং এটিএম বুথে ভিড় করছেন, কিন্তু প্রয়োজনীয় পরিমাণ টাকা তুলতে পারছেন না।

ন্যাশনাল ব্যাংক বাদে, চট্টগ্রাম-ভিত্তিক এস আলম গ্রুপের অন্যান্য ব্যাংকের বোর্ডে নিয়ন্ত্রণকারী অংশীদারিত্ব রয়েছে, যেগুলো এখন তারল্য সংকটের সম্মুখীন। একটা বড় অংকের ঋণ এস আলম গ্রুপকে দেওয়া হয়েছিল, যার অর্থ বিদেশে পাচার করা হয়েছে বলে জানা গেছে, ফলে ঋণগুলি খেলাপি হয়ে পড়েছে।

এসআইবিএল-এর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ ফোরকানুল্লাহ জানান, নগদ অর্থের চাহিদা মেটাতে তাৎক্ষণিক তারল্য সমাধানের ব্যবস্থা করার জন্য ব্যাংকটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে কাজ করছে।

গত দুই মাসে ব্যাংকটি গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রায় ১,৫০০ কোটি টাকার ঋণের কিস্তি এবং আমানত সংগ্রহ করেছে, যা এসআইবিএল-এর নগদ প্রবাহ বৃদ্ধি করেছে।

একটি প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এসআইবিএল বর্তমানে আমানতকারীদের নগদ অর্থের চাহিদা মেটাচ্ছে। তবে, একাধিক গ্রাহক একসঙ্গে নগদ অর্থ তুলতে চাইলে কিছু শাখায় সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে।

ফোরকানুল্লাহ আরও বলেন, ‘সমস্যাটি সম্পর্কে সবাই অবগত, তবে গ্রাহকরা তাদের তাৎক্ষণিক প্রয়োজনের বাইরে নগদ অর্থ তুলতে থাকলে এটি দীর্ঘস্থায়ী হবে। ব্যাংকের স্বাভাবিক কার্যক্রম ফিরে আসলে আমানতকারীরা তাদের টাকা পাবেন।’

এফএসআইবির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান উল্লেখ করেছেন, আন্তঃব্যাংক মানি মার্কেট থেকে তারল্য সহায়তা পাওয়ার পর স্বাভাবিক ব্যাংকিং কার্যক্রম পুনরায় শুরু হয়েছে।

তিনি ব্যাখ্যা করেন যে বোর্ড পুনর্গঠনের পর থেকে ব্যাংকটি ঋণগ্রহীতাদের কাছ থেকে অনেক টাকা সফলভাবে আদায় করেছে।

তিনি উল্লেখ করেছেন যে এফএসআইবি গ্রাহকদের মৌলিক চাহিদা, জরুরি চিকিৎসা, অন্যান্য জরুরি পরিস্থিতি এবং রেমিট্যান্সের টাকা প্রদানকে প্রাধান্য দিচ্ছে।

ব্যাংকটি বৃহৎ আমানতকারীদের কিস্তিতে টাকা ফেরত দেওয়ার জন্যও কাজ করছে।

ন্যাশনাল ব্যাংকের চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু জানান, ব্যাংকটি তার গ্রাহকদের টাকা দিচ্ছে, যদিও বড় অঙ্কের টাকা কিস্তিতে প্রক্রিয়া করা হবে।

তিনি বলেন, এই সমস্যাগুলি রাতারাতি তৈরি হয়নি বরং কয়েক বছর ধরে তৈরি হয়েছে।

মিন্টু আশ্বস্ত করেছেন যে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ব্যাংকের অবস্থার উন্নতি হবে এবং আমানতকারীদের ধৈর্য্য ধরে থাকতে বলেছেন।

সূত্র: ইউএনবি